পা দেখে জেনে নিন শরীরে লুকিয়ে থাকা অসুখ
আমাদের শরীরের সবচাইতে অবহেলিত অংশটি হচ্ছে আমাদের পা। শরীরের পুরো ভার একলা বহন করে নিয়ে গেলেও দিনশেষে পায়ের যত্নের দিকটায় খুব একটা নজর দেওয়া হয়না কারোরই। অথচ রাস্তার ধুলোবালি, ময়লা আর নোংরায় সবচাইতে প্রথমে আর বেশিভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় আমাদের পা-ই। শুধু তাই নয়। আমাদের শরীরের বেশকিছু রোগ প্রকাশও পায় পায়ের মাধ্যমেই। চলুন দেখে আসি সেই রোগগুলোকে।
১. থাইরয়েডের সমস্যা
পা ফেটে যাওয়ার সমস্যা হরহামেশাই মানুষকে ঝামেলায় ফেলে দেয়। বিশেষ সেটা যদি হয় শীতকাল তবে তো কোন কথাই নেই। এই শুষ্কতা রোধের জন্যে ব্যবহার করুন পেট্রোলিয়াম জেলি বা লোশন কিংবা তেল। তবে একটু খেয়াল রাখুন পায়ের দিকে। যদি ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের কয়েকদিন পরেও আপনার পায়ের শুষ্কতা ও ফেটে যাওয়ার সমস্যা আগের মতনই থেকে যায় তাহলে চিকিত্সকের পরামর্শ নিন। কারণ এই ফেটে যাওয়া পায়ের চামড়াই খুব সহজে বুঝিয়ে দিতে পারে যে আপনি থাইরয়েডের সমস্যায় ভুগছেন। আপনার শরীর যথেষ্ট পরিমাণ থাইরয়েড হরমোন তৈরি হচ্ছেনা, যেটি কিনা আপনার খাদ্য পরিপাক, রক্তচাপ, টিস্যুর বৃদ্ধিসহ শরীরের আরো গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমকে নিয়ন্ত্রণ করে। এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ মারলিন রেইড জানান- “ থাইরয়েডের সমস্যা শরীরে শুষ্কতার সৃষ্টি করে ( রিডার্স ডাইজেস্ট )। “
২. সরু রক্তনালীর সমস্যা
মানুষের পায়ের আঙ্গুল বা পা কোথাও না কোথাও দু-একটি পশম থাকবেই। কিন্তু কখনো যদি আপনার পা পুরোপুরিই চুলহীন ও অতিরিক্ত উজ্জ্বল এবং চিকন হয়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে যে আপনার শরীরের রক্তপ্রবাহী শিরাগুলো খুব একটা ভালো কাজ করছে না। সেগুলো সরু হয়ে গিয়েছে। যাকে কিনা চিকিত্সাবিজ্ঞানের ভাষায় বলে পেরিফেরাল আর্টেরিয়াল ডিজিজ ( কেয়ারিং )। এ রোগে মানুষের রক্তনালী সরু হয়ে যাওয়ায় যথেষ্ট রক্ত শরীরের নানা অঙ্গে পৌঁছায় না। ফলে, মানুষ মুখোমুখি হয় নানারকম সমস্যার।
৩. ডায়াবেটিস
দৈনন্দিন নানা কাজে, হাঁটতে গিয়ে কিংবা অন্যকোনভাবে পায়ে একটা জখম হয়ে যাওয়াটা খুব একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। যদি আপনার পায়ের কোন স্থানে এরকম কোন আঘাত পেয়ে থাকেন কিন্তু সেটা দীর্ঘসময় ধরে টিকে থাকে তাহলে হলেও হতে পারে যে আপনার শরীরে অনিয়ন্ত্রিত মাত্রার গ্লুকোজের কারণে পায়ে রক্ত সরবরাহ ঠিকভাবে হচ্ছেনা এবং আপনার ডায়াবেটিস হয়েছে ( নর্থশোর লিজ )।
৪. হৃদপিন্ডের সমস্যা
পায়ের নখের নীচে মাঝে মাঝে অনেকেরই লালচে কা কালচে এক ধরনের ছোপ দেখা যায়। নখের উপরে নয়, বরং নখের নীচে থাকে এটি। ফলে কোনভাবে পরিষ্কারও করা যায়না। ফলে পায়ের অনেকটা সৌন্দর্যহানী করে এটি। কিন্তু ভয় পাওয়ার মতন ব্যাপার হচ্ছে এই যে, এরকমটা তখনই হয় যখন রক্তনালী ভেঙে যায়। আর রক্তনালী ভাঙে শরীরে এ্যান্ডোকারডিটিস বা হৃদপিন্ডের একটি সংক্রমণ হলেই। আর তাই নখের এমন লালচে রঙ আপনার হৃদপিন্ডের সমস্যাকেই প্রকাশ করে দেয় ( রিডার্স ডাইজেস্ট )।
৫. নখের নীচে সোজা লাইন
একটু খেয়াল করে দেখুন তো। আপনার নখের নীচে কি সোজা একটা দাগ চলে গিয়েছে? এই লম্বা দাগগুলো শরীরের লুকিয়ে থাকা মিলানোমার প্রকাশ করে। যেটা কিনা শরীরের কোন অংশে ক্যান্সার থাকলে তবেই দেখা দেয় ( রিডার্স ডাইজেস্ট )। আর তাই এমনটা আপনার নখে থাকলে খুবই সম্ভব যে আপনার ভবিষ্যতে ক্যান্সার হবার আশঙ্কা রয়েছে।
পা শরীরে সবচাইতে নীচের অংশ হলেও বাস্তবে এই প্রতিদিনের নজর এড়িয়ে যাওয়া অঙ্গটিই আমাদের শরীরের নানারকম অসুখকে প্রকাশ করে তুলতে পারে খুব সহজেই। আর তাই প্রত্যেকেরই উচিত পা এবং পায়ের যত্নের প্রতি বিশেষ নজর রাখা।
মন্তব্য চালু নেই