টানা বর্ষণ

পাহাড় ধসে নিহত ৭, ব্যাপক প্রাণহানির শঙ্কা

গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে পাহাড় ও দেয়াল ধসে ঘুমন্ত ভাই-বোনসহ ৭ জন নিহত হয়েছেন। এতে মাটিচাপা পড়ে দু’জন নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের সন্ধানে কাজ করছে স্থানীয় প্রশাসন। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১৩ জন। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে ডুবে নিখোঁজ রয়েছেন আরও দু’জন।

শুক্রবার ভোর ৩টা থেকে দুপুরের মধ্যে বান্দরবান শহরের বনরূপা পাড়া, কক্সবাজারের রামু, সদর উপজেলার পাহাড়তলী, ঘোনারপাড়া, সেন্টমার্টিন দ্বীপ, টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে এসব দুর্ঘটনা ঘটে।

ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকায় এসব এলাকা ছাড়াও অন্যান্য এলকায় পাহাড় ধসের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এতে ব্যাপাক প্রাণহানির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

কক্সবাজার: কক্সবাজারের রামুতে পাহাড় ধসে তিন জন নিহত হয়েছেন। এ দুর্ঘটনায় দু’জন নিখোঁজ রয়েছেন। এছাড়া সেন্টমার্টিন দ্বীপে দেয়ালচাপায় মা-মেয়ের মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার সকালে এসব দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- আয়েশা বেগম (৪৮) ও তার মেয়ে সাদিয়া (৮)। বাকীদের পরিচয় জানা যায়নি।

স্থানীয় সূত্র জানায়, টানা বর্ষণের ফলে রামুতে পাহাড় ধসে পড়ে। এতে তিন জন নিহত হয়। মাটিচাপা পড়ে নিখোঁজ রয়েছেন দু’জন। তাদের উদ্ধারে কাজ করছে স্থানীয় প্রশাসন।

অন্যদিকে, শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সেন্টমার্টিন দ্বীপে ভারী বর্ষণের ফলে পানি জমে দেয়াল ধসে যায়। এতে আয়েশা বেগম ও তার মেয়ে সাদিয়ার মৃত্যু হয়।

টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দাকার আতাউর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

এছাড়া টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে ডুবে দু’জন নিখোঁজ রয়েছেন। জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি ও গাছপালা।

অন্যদিকে, কক্সবাজার সদর উপজেলার পাহাড়তলী ও ঘোনারপাড়া এলাকায় পাহাড় ধসে ছয় জন আহত হয়েছেন।

বান্দরবান: বান্দরবানে পাহাড় ধসে ঘুমন্ত ভাই-বোন নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন তাদের বাবা। তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

শুক্রবার ভোর ৩টার দিকে জেলা শহরের বনরূপা পাড়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলো- বনরূপা এলাকার আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে আলিফ (১১) ও মিম (৮)। আহত আব্দুর রাজ্জাককে বান্দরবান সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পুলিশ ও দমকল বাহিনী জানায়, গত ছয় দিনের টানা বর্ষণে শুক্রবার ভোর ৩টার দিকে শহরের বনরূপা পাড়ায় পাহাড় ধসে পাদদেশে নির্মিত আব্দুর রাজ্জাকের বসতবাড়ির উপর পড়ে। এ সময় ঘরের মধ্যে ঘুমন্ত অবস্থায় থাকা আব্দুর রাজ্জাকের দুই সন্তান আলিপ ও মিম মাটির নিচে চাপা পড়ে মারা যায়। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় দমকল বাহিনী তাদের লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন নিহতদের বাবা আবদুর রাজ্জাক। তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

নিহতদের মা ফাতেমা বেগম বাংলামেইলকে জানান, তারা স্বামী-স্ত্রী সেহেরি খাওয়ার জন্য ৩টার দিকে ঘুম থেকে উঠেন। এ সময় তার দুই সন্তান ঘুমন্ত অবস্থায় ছিল। সাড়ে ৩টার দিকে বিকট শব্দ শুনতে পেলে তারা ঘর থেকে বের হয়ে আসেন। এ সময় তারা দেখতে পান পাহাড় ধসে তাদের বাড়ির ওপর পড়েছে।

এদিকে, টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বান্দরবানের কেরানীহাট ও রাঙামাটি প্রধান সড়কের কয়েকটি স্থান এখনও পানির নিচে রয়েছে। এতে সারাদেশের সঙ্গে রাঙামাটির সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছে, সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদী পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। টানা বর্ষণে বান্দরবানের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

এছাড়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় ধসের খবর পাওয়া গেছে। বর্ষণ অব্যাহত থাকলে পাহাড় ধসে ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।



মন্তব্য চালু নেই