পাল্টাপাল্টি আন্দোলনের হুঁশিয়ারি বাসমালিক-অটোমালিকদের
সারাদেশের মহাসড়কগুলোয় ১ আগস্ট থেকে সিএনজি অটোরিকশাসহ থ্রি-হুইলার চালিত যানচলাচল বন্ধের ব্যাপারে সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। সরকারি এ নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে বিপরীতমুখী অবস্থানে রয়েছেন বাসমালিক ও থ্রি হুইলার মালিকরা।
সরকারের এ নিষেধাজ্ঞাকে স্বাগত জানিয়েছে বাসমালিকরা। তবে মহাসড়কে সরকারি নিষেধাজ্ঞার পরও থ্রি-হুইলার চালিত যান চলাচল অব্যাহত থাকায় আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। দেশের কোনো কোনো জেলায় ইতোমধ্যে তাদের তরফ থেকে আন্দোলন কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়েছে।
অপরদিকে সরকারের এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে অটোরিকশা মালিকেরা। তাদের দাবি, এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে বেকারদশায় পড়বেন। সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শনিবার দেশের বিভিন্ন মহাসড়কে অবরোধ করে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে। সরকার অবস্থান থেকে সরে না এলে কঠোর আন্দোলনে যাবে বলেও তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
মহাসড়কে অটোরিকশা চলাচলে সরকারী নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে শনিবার সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন অংশ অবরোধ করে মালিক ও চালকরা। ফলে এই মহাসড়কের দু’পাশে সৃষ্টি হয় প্রায় ৭ কি.মি. দীর্ঘ যানজট।
সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শনিবার সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার বালুকান্দি বাসস্ট্যান্ডের কাছে মহাসড়ক অবরোধ করেন অটোমালিক ও চালকরা। এ সময় দাউদকান্দি, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও ও মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার অটোমালিক ও চালকরা অংশ নেন।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গজারিয়া ভবের চরের হাইওয়ে ইনচার্জ মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, অবরোধের ফলে প্রায় ৭ কি.মি. দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়।
অবরোধে অংশ নেওয়া গজরিয়া অটোরিকশা মালিক সমিতির সভাপতি আল-আমীন মাস্টার বলেন, ‘হঠাৎ করে অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করে দিলে আমরা কী খাবো? কী করবো?’
এদিকে, চট্টগ্রামেও শনিবার সকাল থেকে শুরু হয় ব্যাপক ধরপাকড়।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের যানবাহন পরিদর্শক মীর গোলাম ফারুক বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার কারণে চট্টগ্রাম-ঢাকা, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার এবং চট্টগ্রাম-হাটহাজারী মহাসড়কে প্রায় ৮০ শতাংশ অটোরিকশা চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।’
‘তবে মানবিক দিক বিবেচনায় রোগী ও অন্যান্য জরুরী পরিবহনে নিয়োজিত অটোরিকশাগুলোকে মহাসড়কে চলাচলে বাধা দেওয়া হচ্ছে না,’ যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘যেসব অটোরিকশা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন মহাসড়কে সকাল থেকে বেশ কিছু অটোরিকশা জব্দ করা হয়েছে।’
চট্টগ্রাম জেলায় প্রায় ১৮ হাজার অটোরিকশা চলাচল করছে বলেও জানান তিনি।
সীতাকুণ্ড হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ ইয়াসিন বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় সকাল থেকে চারটি অটোরিকশা আটক করা হয়েছে। কেউ যাতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করতে না পারে সেই জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
জোরারগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বারৈয়ারহাট, হাদি ফকিরহাট, নিজামপুর, মীরেরশ্বরাই সদর, সীতাকুণ্ড ও ফৌজদারহাটসহ কমপক্ষে দশটি স্থানে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছে।’
বরিশালেও আন্দোলনের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বাস মালিকরা। সমিতির সভাপতি আফতার হোসেন জানান, তারা সামনের আরও ২/৩ দিন দেখবেন। প্রশাসন থেকে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া না হলে পরবর্তী সময়ে আন্দোলন কর্মসূচি দেওয়া হবে।
নথুল্লাবাদ বাস মালিক সমিতির সভাপতি আফতাব হোসেন জানান, মহাসড়কে অবৈধ টেম্পু চলাচলে দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে। অপরদিকে তাদের যাত্রী সংখ্যা কমে যাওয়ায় মালিকরা পড়ছেন লোকসানের মুখে।
নগর পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) আবু সলেগ মো. রায়হান জানান, তারা ইতোমধ্যেই রূপাতলী থেকে শহীদ আব্দুর রব রেনিয়াবাত সেতু পর্যন্ত এবং ঝালকাঠি রুটে র্যাব ক্যাম্পের পর মেট্রোতে পারমিশন পাওয়া অটো টেম্পু চালাতে নিষেধ করেছেন। এ ছাড়াও অবৈধ যত টেম্পু নগরীতে চলাচল করত কখনোবা ট্রাফিক পুলিশের সহায়তা নিয়ে তা পুরোটা বন্ধ করে দিয়েছেন। এরপরও যদি চলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বরিশালের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘মহাসড়কে যাতে অবৈধ টেম্পু চলাচল না করে সে জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
ভোলা-চরফ্যাশন আঞ্চলিক মহাসড়কের ৮টি রুটে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাস ধর্মঘট ডেকেছে ভোলা বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়ন। বাস চলাচল বদ্ধ থাকায় শনিবার ভোলার সঙ্গে বিভিন্ন উপজেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
শনিবার বিকেলে ভোলা বাস মালিক সমিতির একটি সংবাদ সম্মেলনের পর থেকে বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
সম্মেলনে জানানো হয়, ভোলা-চরফ্যাশন মহাসড়কে তিন চাকার অবৈধ যান চলছে। এতে বাস মালিকরা পরিবহনখাতে ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছেন।
ভোলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, অবৈধ যান চলাচলের বন্ধের ব্যাপারে সরকারি নির্দেশনা মানা হবে। এ ছাড়া বাস মালিকদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যার সমাধান করা হবে।
চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে অটোরিকশা চালক সমিতির সভাপতি গোলাম ফারুক বলেন, ‘আমাদের সমিতির আট হাজার চালকসহ সাড়ে তিন হাজার সিএনজি অটোরিকশার মালিক মিলিয়ে সাড়ে ১১ হাজার পরিবার আমরা চলব কীভাবে?’
উপজেলায় শনিবার বেলা ১২টার দিকে চালকদের এক মানববন্ধনে তিনি এ সব কথা বরেন। এ সময় মহাসড়কের দুইপাশে সারিবদ্ধভাবে অটোরিকশার লাইন দেখা যায়।
মীরসরাই উপজেলা (উত্তর ও দক্ষিণ) চালক সমিতির সভাপতি গোলাম ফারুক বলেন, ‘দেশের মহাসড়কগুলোর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আজ থেকে সড়ক ও সেতুমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী সিএনজি অটোরিক্সা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এতে মীরসরাই উপজেলার দুই থানা এলাকার সাড়ে তিন হাজার সিএনজি ও প্রতি সিএনজি অটোরিকশার জন্য দুইজন করে চালক মিলে সমিতিভুক্ত আট হাজার চালকসহ অটোরিকশার মালিক মিলিয়ে সাড়ে ১১ হাজার পরিবার আমরা অনেকটা বেকার হয়ে পড়ব।’
জোরারগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশের উপ-পরিদর্শক ফরিদ উদ্দিন জানান, ‘সকাল থেকে মহাসড়কে কোনো সিএনজি অটোরিকশা চলেনি।’
সিলেট মহাসড়কের অটোরিকশা চলাচল বন্ধের প্রতিবাদে রবিবার থেকে সিলেটের সড়ক ও মহাসড়কে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জেলা অটোরিকশা (সিএনজি) শ্রমিক ইউনিয়ন।
নগরীর দক্ষিণ সুরমার ভার্থখলা স্টেশন রোডের প্রধান কার্যালয়ে শনিবার দুপুরে মহাসড়কে সিএনজি অটোরিকশা চলাচল বন্ধের প্রতিবাদে এ কর্মসূচি ঘোষণা করে।
সিলেট জেলা অটোরিকশা (সিএনজি) শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাকারিয়া আহমদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মো. আজাদ মিয়ার পরিচালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন- কার্যকরী সভাপতি মো. সুন্দর আলী খান, সহ-সভাপতি মো. মানিক খান, জেলা শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. জিলু মিয়া, অর্থ সম্পাদক মো. শাহাব উদ্দিন, দফতর সম্পাদক ইকবাল আহমদ, প্রচার সম্পাদক খসরু মিয়াসহ অন্যান্যরা।
জেলা অটোরিকশা (সিএনজি) শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাকারিয়া আহমদ বলেন, ‘আমাদের জীবিকার ক্ষতি হয় আমরা এমন কোনো সিদ্ধান্ত মানব না। আমাদের দাবি মানা না হলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।’
মন্তব্য চালু নেই