পারছে না নির্বাচন কমিশন

সিটি নির্বাচনে বিএনপি সমর্থক প্রার্থীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। নির্বাচনী মিছিলের পেছন থেকে তাদের কর্মীদের পুলিশ তুলে নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।

অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের কী করা উচিত, কী করা উচিত নয়- তা বলে দিচ্ছে মন্ত্রীরা। সরকারি দল সমর্থিত প্রার্থী, মন্ত্রী বা এই পদমর্যাদার ব্যক্তিদের আচরণবিধি মানতে বাধ্য করতে পারছে না নির্বাচন কমিশন।

সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে গিয়ে ধারাবাহিকভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে দলের নেতারা আবার অভিযোগ করেছেন।

চট্টগ্রামে বিএনপির নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী জানিয়েছেন, সেখানে এমনকি নির্বাচনী মিছিলের পেছন থেকে তাদের কর্মীদের পুলিশ তুলে নিয়ে যাচ্ছে।

নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে তিনি সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানান।

তবে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, প্রার্থীদের পুলিশি হয়রানির বিষয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ তারা এখনো পাননি। তবে সেনাবাহিনী মোতায়েনের প্রশ্নে তারা আজ সিদ্ধান্ত নেবেন।

আমীর খসরু অভিযোগ করেন, বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এবং তাদের কর্মীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন এবং আচরণবিধি ভেঙ্গে একজন মন্ত্রীও সরকারি দলের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

তিনি বলেন, “মিছিল শেষ হলে মিছিলের পেছন থেকে হয়তো দু’একজনকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। যারা একটু সক্রিয় হয়, ওই এলাকায় তখন পুলিশের তল্লাশি বেড়ে যায়।”

নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সেনা মোতায়েন করারও দাবি জানান মি. চৌধুরী।

হয়রানির অভিযোগ করছেন ঢাকা উত্তরের বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী তাবিথ আউয়ালও। তিনি বলেন, তাদের কর্মীরা সরকারি বাহিনীর হাতে নানারকম হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে তারা খবর পাচ্ছেন।

সরাসরি সেনা মোতায়েনের কথা না বললেও, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে বিশেষ বাহিনীর প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন তাবিথ।

এদিকে নির্বাচনের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে রোববার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর সাথে বৈঠক করছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন বলছে, এ বৈঠকের পরই নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে।

নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ বলেন, কোনো প্রার্থী যেন হয়রানির শিকার না হন সেবিষয়ে তারা আগেই পুলিশকে নির্দেশনা দিয়েছেন।

সেনা মোতায়েনের বিষয়ে তিনি বলেন, “সব দাবিই আমরা বিচার-বিবেচনা করে বাস্তবতার নিরিখে সিদ্ধান্ত নেবো।”

শাহনেওয়াজ বলছেন, হয়রানির অভিযোগের কথা শুনলেও লিখিতভাবে প্রার্থীরা তাদের কাছে এসব অভিযোগ করেননি। আর লিখিত অভিযোগের কথা বলে তাদেরকে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ফেলা হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন মেয়রপ্রার্থী তাবিথ।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আড়াই শতাধিক আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৪৮টি ঘটনায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে প্রার্থী বা তাদের প্রতিনিধিকে জরিমানা করা হয়েছে। নোটিশ দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে ১২৭ ঘটনায়। তবে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, মন্ত্রী বা এই পদমর্যাদার ব্যক্তিদের আচরণবিধি মানতে বাধ্য করতে পারছে না নির্বাচন কমিশন।

একটি দৈনিকের সঙ্গে আলাপকালে দুজন নির্বাচন কমিশনার, একজন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তারা মন্ত্রী বা এমন পদমর্যাদার ব্যক্তিদের কিছু কর্মকাণ্ড ও কথা আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মন্ত্রী পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত। জাতীয় সংসদে তার কার্যালয় রয়েছে। এই পদের কারণে তাঁর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি অবৈতনিকও নন। অথচ তিনি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তার প্রার্থীদের পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। এরশাদের দাবি, আচরণবিধি তার জন্য প্রযোজ্য নয়।

তবে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের দুজন কর্মকর্তা বলেছেন, যে কারণে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীরা নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারছেন না, একই কারণে এরশাদও পারবেন না।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের প্রয়োজন নেই। তিনি এই বক্তব্য দিতে পারেন কি না, তা নিয়েও আলোচনা-সমালোচনা চলছে। কেননা, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে কী করা প্রয়োজন বা প্রয়োজন নেই সেই সিদ্ধান্ত কেবল নির্বাচন কমিশনই নিতে পারে। সরকারের দায়িত্ব শুধু কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী আনুষঙ্গিক সহায়তা দেওয়া।



মন্তব্য চালু নেই