পাবনায় ইট ভাটায় অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ : ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে পরিবেশ ॥ নির্বিকার প্রশাসন

পাবনায় সব কয়টি ইট ভাটায় অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করে প্রতিটি ইট ভাটায় অবাধে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

রোববার সকালে ঈশ্বরদীর বিভিন্ন ইট ভাটায় সরেজমিন ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। ইট ভাটার মালিকেরা জানান, ইচ্ছা থাকা সত্বেও তারা ভাটায় কয়লা ব্যবহার করতে পারছেন না। অনেকটা বাধ্য হয়েই ভাটা চালানোর স্বার্থেই কয়লার বিকল্প হিসেবে কাঠ ব্যবহার করছেন। ভাটায় কাঠ (গাছ) পোড়ানো অবৈধ স্বীকার করে ভাটার মালিকেরা জানান, ভাটা সচল রাখতেই ‘অন্যায়’ জেনেও তারা কাঠ পোড়াচ্ছেন। এজন্য প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করতে হয় বলেও জানান তারা।

প্রতি মাসে ঈশ্বরদী উপজেলা প্রশাসনকে মোটা অংকের টাকা ‘উৎকোচ’ দিতে হয় বলেও জানান ইট ভাটার মালিকেরা। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে অফিস সহকারী রবিউল ইসলাম এই টাকা গ্রহণ করেন বলে জানান তারা। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে করেছেন রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, “ইট ভাটার মালিকদের কাছ থেকে প্রতি মাসে কোন টাকা নেয়া হয় না, তবে ১৬ ডিসেম্বর, ২১ শে ফেব্রুয়ারী ও ২৬ শে মার্চে প্রতিটি ইট ভাটা থেকে কিছু টাকা নেয়া হয় অনুষ্ঠান করার জন্য।

ঈশ্বরদীর প্রতিটি ইট ভাটায় অবাধে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে বলেও তিনি স্বীকার করে বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্যার দেশের বাহিরে আছেন, ঈশ্বরদীতে আসলেই ইট ভাটায় অভিযান চালানো হবে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শুধুমাত্র লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নেই অবৈধ ইট ভাটা রয়েছে ৮টি। ঈশ্বরদীর প্রশাসনকে ম্যানেজ করে সেখানে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে পরিবেশ রক্ষাকারী গাছ (কাঠ)। শুধু কাঠ পোড়ানই নয়; অবৈধ ইট ভাটায় ব্যবহার করা হচ্ছে টিনের ছোট চিমনি। যা পরিবেশের জন্য মারাত্বক ঝুঁকিপূর্ণ।

এদিকে হাওয়া চিমনির কথা বলে বেশির ভাগ ভাটাতেই ব্যবহার করা হচ্ছে ফিট চিমনি। যা অবৈধ বলেও জানান কয়েকজন ভাটার মালিক। জানা গেছে, লক্ষীকুন্ডায় এমএমবি ব্রিকস্, এসআরবি ব্রিকস্, এমএআর ব্রিকস্, এমএমসি ব্রিকস্সহ বিভিন্ন নামে গড়ে উঠেছে অবৈধ ইট ভাটা। এছাড়াও সাহাপুর ইউনিয়নে এসএমবি ব্রিকস্ নামের অপর একটি ভাটাতেও অবাধে পোড়ানো হচ্ছে পরিবেশ রক্ষাকারী গাছ (কাঠ)। প্রতিটি ইট ভাটায় বড় বড় স্তুপ করে রাখা হয়েছে পরিবেশ রক্ষাকারী বিভিন্ন গাছপালা। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে নির্বিগ্নে এসব অপকর্ম হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় এলাকাবাসী মাসুদ রানা, নাসির ফকির ও লোকমান মন্ডল অভিযোগ করে বলেন, ফসলী জমি নষ্ট করে অবৈধ প্রভাবের জোরে এসব ইট ভাটা তৈরি করা হয়েছে। তারা বলেন, অবৈধ এসব ভাটার কারনে তাদের বসত বাড়ি ও ফসলী জমির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এছাড়াও পরিবেশ রক্ষাকারী গাছপালা অবাধে উজাড় হওয়ায় চরম শংকার মধ্যে রয়েছেন বলেও জানা তারা।

অবিলম্বে ইট ভাটায় কাঠ (গাছ) পোড়ানো বন্ধ এবং অবৈধ ইট ভাটা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন তারা। লক্ষীকুন্ডার এসআরবি ব্রিকস্’র ম্যানেজার মোঃ কামরুজ্জামান কাঠ পোড়ানো অবৈধ স্বীকার করে বলেন, সরকার তাদের কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে, তাই ভাটা চালানোর স্বার্থেই তারা কাঠ পোড়াচ্ছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘উপরে’ (প্রশাসন)  যোগাযোগ রক্ষা করেই এ কাজ করা হয়।

দাদাপুরের এমএমসি ব্রিকস্’র ম্যানেজার মোঃ মাহাফুজুর রহমান বলেন, অর্থ না থাকার কারনে তারা টিনের ছোট চিমনি ও কাঠ ব্যবহার করছেন। লাইসেন্স না থাকার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, উপজেলা প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করেই তারা এসব করছেন। উপজেলার কাকে ‘ম্যানেজ’ করেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রবিউল সাহেবকে ‘ম্যানেজ’ করেছি। প্রতি মাসে তার কাছে টাকা দেয়া হয়।

ঈশ্বরদী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) (চলতি দায়িত্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) মুকুল কুমার মৈত্র জানান, ঈশ্বরদীতে বেশ কয়েকটি অবৈধ ইট ভাটা এবং বিভিন্ন ভাটায় কয়লার পরিবর্তে গাছ পোড়ানোর বিষয়টি তিনিও শুনেছেন। শীঘ্রই ইট ভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে বলে তিনি এ কথা জানান ।



মন্তব্য চালু নেই