পাবনার ঈশ্বরদীতে টানা অবরোধে কৃষকদের ক্ষতি ৩৬ কোটি টাকা

উত্তরাঞ্চলের অন্যতম প্রধান সবজি উৎপাদন এলাকা ঈশ্বরদীতে টানা দুই সপ্তাহের অবরোধে কৃষকের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩৬ কোটি টাকা। মঙ্গলবার ঈশ্বরদী উপজলা কৃষি অফিস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ঈশ্বরদীর ভাড়ইমারী,ছলিমপুর, জয়নগর, সাহাপুর, মিরকামারী, মানিক পাকশী, নগর, বড়ইচারা, দাশুড়িয়া ও আওতাপাড়ার বিস্তৃর্ণ এলাকায় এবার শীতে উৎপাদিত সবজি নিয়ে কৃষকদের বাড়িতে বাড়িতে রিতিমতো হাহাকার সৃষ্টি হয়েছে। ঈশ্বরদীর যে সব কৃষকেরা এবার স্বপ্ন দেখেছিলেন শীতের সবজি বিক্রি করে জমি কিনবেন, খামার প্রসারিত করবেন, ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দিবেন ইতো মধ্যে তাদের সেই সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। ঈশ্বরদীর বেশিরভাগ কৃষকই লাভ তো দূরে থাক এবার তাদের জমিতে বিনিয়োগ করার পূজিও ফেরত পাবেন না বলে জানিয়েছেন।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান ঈশ্বরদী দেশের অন্যতম সবজি উৎপাদন এলাকা। বিশেষ করে এই অঞ্চলের প্রধান অর্থকারী ফসল এখন সবজি। শীত মৌসুমে ঈশ্বরদীতে প্রচুর পরিমাণে সিম, গাজর, ওলকপি, পাতাকপি, বেগুন, টমেটো, পালং ও লালশাক আবাদ করা হয়। কৃষি অফিস সূত্র জানায় এই মৌসুমে ঈশ্বরদীতে ৫ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন সবজি আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে শিম, ১ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে ফুল কপি, ৫২৫ হেক্টর জমিতে গাজর, ৪৩০ হেক্টর জমিতে মূলা, ২৪৫ হেক্টর জমিতে ওলকপি, ১৮০ হেক্টর জমিতে বাধাকপি ও ২৫০ হেক্টর জমিতে শাক আবাদ করা হয়েছে। এসব জমিতে উৎপাদন সবজির বেশিরভাগ মাঠেই পড়ে রয়েছে।

ঈশ্বরদীর সবচেয়ে বড় সবজির আড়ত মূলাডুলি থেকে প্রতিদিন কম পক্ষে ৫০ ট্রাক শিম দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠনো হয়ে থাকে। প্রতিটি ট্রাকে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকার শিম লোড হয়। সেই হিসেবে এই আড়ত থেকে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে শুধু শিম পাঠানো হয় প্রায় আড়াই কোটি টাকার। ঈশ্বরদীর দিয়াড় সাহাপুর, জয়নগর বিশ্ব রোডে বিভিন্ন আড়ত থেকে প্রতিদিন শীতকালে অন্যতম প্রধান সবজি পাঠানো হয় কম পক্ষে তিন কোটি টাকার। এইসব ফুল কপি ঢাকার কারওরান বাজারসহ দেশের বড় বড় শহরে পাঠানো হয়ে থাকে। বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক প্রাপ্ত কৃষক ছিদ্দিকুর রহমান কূল ময়েজ, বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক প্রাপ্ত কৃষক জাহিদুল ইসলাম গাজর জাহিদ ও বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক প্রাপ্ত কৃষক নুরুন্নাহার বেগম জানান প্রতি পিস ফুলকপি গড়ে ১৫ থেকে ২০ টাকা হিসেবে পাইকারি বিক্রি করা হয়। প্রতি ট্রাকে গড়ে ৮ হাজার পিস লোড দেওয়া হয় সেই হিসেবে প্রতিদিন ঈশ্বরদী থেকে গড়ে ১০০ ট্রাক ফুলকপি দেশের বিভিন্ন বাজারে পাঠনো হয়। গত দুই সপ্তাহের টানা অবরোধে ঈশ্বরদী থেকে নাম মাত্র ফুল কপি ও শিম পাঠানো হয়েছে। ফলে ঈশ্বরদীতে হাজার হাজার কৃষকের সবজি মাঠে পঁচে নষ্ট হচ্ছে। টানা অবরোধ কর্মসূচীতে যে ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষক ও কৃষি অফিসার।

কৃষকেরা জানান তারা বিভিন্ন ব্যাংক , এনজিও, স্থানীয় সমিতি এবং ব্যক্তিদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে জমি লিজ নিয়ে সবজি উৎপাদন করে থাকেন। সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন শীতকালীন সবজি বিক্রি করার জন্য। এই সময় সবজি বিক্রি করে বাড়তি আয়ের আশায় থাকেন গোটা বছর ধরে। অথচ এই বার বিএনপি নেতৃত্বাধিন ২০ দলীয় ডাকা অবরোধের কারণে তাদের সেই আশা পূরণ হবেনা। শীতকালীন সবজি উৎপাদনের সঙ্গে ঈশ্বরদী ও আশপাশের প্রায় ত্রিশ হাজার সবজি শ্রমিকের ভাগ্যও জড়িত। অবরোধে এখন তাদের মাঠের কাজ বন্ধ। সবজি শ্রমিক রমযান প্রামানিক, আরশেদ আলী, মকবুল হোসেন জানান, সারাদিন মাঠে সবজি উত্তোলন ও গাড়ি লোড দেওয়া কাজ করেন তারা। গত দুই সপ্তাহ ধরে সবজি মাঠের কাজ বন্ধ। ফলে অমানবিক দিনযাপন করছেন তাদের মতো প্রায় ২০ থেকে ৩০ হাজার সবজি শ্রমিক।

বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক প্রাপ্ত কৃষক ছিদ্দিকুর রহমান কূল ময়েজ বলেন, ঈশ্বরদীর কৃষকদের মতো দেশের বিভিন্ন স্থানের কৃষকেরা রোদ, বৃষ্টি ও শীতকে উপেক্ষা করে মাঠে ফসল ফলিয়ে থাকেন। কিন্তু গত দুই বছর যাবৎ বিরোধী দলের হরতাল অবরোধের কারণে তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে পারছেন না। বেশিরভাগ কৃষকের ফসল মাঠেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ঈশ্বরদী থেকে দুই তিন গুণ ভাড়া বেশি দিয়ে কেউ কেউ রাজধানী ঢাকায় সবজি পাঠালেও সেখানে অন্য এলাকার পাইকার না থাকায় তা বিক্রি করতে পারছেন না। সরকারি এবং বিরোধী দল তাদের ভাগ্যের উন্নয়নের জন্য পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে স্বার্থ হাসিল করতে ব্যস্ত থাকেন। হতভাগা কৃষকের কথা কেউ চিন্তা করেন না। তিনি আরও বলেন আমাদের ফসলের কোনো বীমা নেই, ক্ষতিপূরণ নেই, আমাদের নেই কোনো পেনশন। আমাদের মতো কৃষকদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এভাবে দেশ চলতে থাকলে আমাদের মতো দেশের সকল কৃষক একসময় সবজি উৎপাদন বন্ধ করে দিবে। তখন একটি ফুল কপি ১০০ টাকায়ও কিনতে পাওয়া যাবেনা। ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ খুরশিদ আলম জানান, এই ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩৬ কোটি টাকা। তিনি আরও জানান, ঈশ্বরদী থেকে প্রতিদিন শিম, ফুল কপি, ওলকপিগাজর, পেঁপে বেগুন, টমেটো, ও শাকসহ ২০০থেকে ২৫০টি  ট্রাক সবজি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রফতানি করা হয়। টানা অবরোধে সবজি বিক্রি করতে না পারায় কৃষকের উৎপাদিত কষ্টের ফসল মাঠেই নষ্ট হচ্ছে।

 

খালেদা জিয়া অবরোধ করে নিজের দলের ও দেশের ক্ষতি করছে — গোলাম ফারুক প্রিন্স
পাবনা জেলা আওযামীলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক প্রিন্স এম.পি. বলেছেন, নতুন বৎসরে সারা দেশের কমলমতি শিক্ষার্থীরা যখন নতুন বই নিয়ে নব উদ্দোমে শিক্ষা গ্রহণ করছে সেই সময় খালেদা আন্দোলনের নামে এদেরকে জিম্মি করে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত করছে।  খালেদা জিয়া ইস্যুবিহীন আন্দোলনের নামে অবরোধ করে নিজের দলের ও দেশের ক্ষতি করছে। বর্তমানে  বাংলার জনগণ শান্তি ও উন্নয়ন চায় যা বর্তমান সরকার করে যাচ্ছে। অবরোধ জালাও পোড়াও ও অশান্তি চায়না।  এ অবরোধের সাথে জনগণ তো দুরের কথা বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরাও নাই। বিএনপি-জামাতের কোনো নেতাকর্মী অবরোধের সমর্থনে মাঠে নামে নাই এতেই প্রমাণিত হয় এই অবরোধ বিএনপি-জামাতের নেতাকর্মীদের সমর্থন নাই। এতে তাদের দলের ক্ষতি হচ্ছে।

সোমবার দুপুরে সদর উপজেলার মূলগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন উদ্বোধন শেষে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আতাইকুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মঞ্জু মাষ্ঠারের সভাপতিত্বে  বক্তব্য রাখেন- সদর উপজেলা পরিষদের  ভাইস চেয়ারম্যান শাওয়াল বিশ্বাস, স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহম্মদ আলী, আওয়ামী লীগ নেতা সরদার মিঠু আহমেদ,  যুবলীগ সভাপতি শরীফ উদ্দিন প্রধান,  স্বেচ্চাসেবক লীগ সভাপতি জামিরুল ইসলাম মাইকেল, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান সুইট, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ রাসেল আলী মাসুদ, কামরুজ্জামান রকি, আবুল কালাম আজাদ, হিরোক হোসেন, আতিয়ার রহমান, মো. আশু খা, ইসমাইল হোসেন, আলাউদ্দিন, বাদশা আলম প্রমুখ।



মন্তব্য চালু নেই