পাঠ্যবইয়ের বাদ পড়া গল্প-কবিতা নিয়ে বই প্রকাশ, চলছে বিনামূল্যে বিতরণ

পাঠ্যবই থেকে বাদ দেয়া গল্প-কবিতা নিয়ে বই প্রকাশ করেছে উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী। বইটির নাম দেয়া হয়েছে ‘যা আমাদের পড়তে দেয়নি’। বইটি বিনামূল্যে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিতরণেরও উদ্যোগ নিয়েছে সংগঠনটি। ইতোমধ্যে ৫০০ কপি বই ছাপানো হয়েছে। সবগুলো বিতরণ করা হয়েছে। নতুন সংস্করণের পর আবার বিতরণ শুরু হবে।

সংগঠনটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মিজানুর রহমান সুমন বুধবার মুঠোফোনে জানান, ‘আমরা ছোটবেলা যেসব গল্প কবিতা পড়েছি, তা আমাদের মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষা দিতো। যেটাতে ছিল কোনো অসাম্প্রদায়িক চেতনা। সেসব সুন্দর কবিতা ও গল্পগুলো এবার পাঠ্যবই থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। সেগুলো একত্রিত করে আমরা নতুন বই তৈরি করেছি। এই বইগুলো সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিতরণ করা হবে।’

চলতি বছর পাঠ্যবই নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক হয়ে গেছে দেশে। দীর্ঘদিন ধরে প্রথম থেকে দশম শ্রেণিতে পড়ানো হয়, এমন বেশ কিছু আধেয় পাল্টে দেয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে উগ্রপন্থী ইসলাম ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের দাবি মেনেই এই কাজ করেছে সরকার। বিষয়টি কেবল আলোচনা-সমালোচনাতেই থেমে থাকেনি, এ নিয়ে উচ্চ আদালতে আবেদনও করা হয়েছে এবং প্রখ্যাত লেখকদের লেখা বাদ দেয়াকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতেও চেয়েছে হাইকোর্ট।

গত ৬ মার্চ বিচারপতি নাইমা হায়দার এবং বিচারপতি আবু তাহের মোহাম্মদ সাইফুর রহমানের বেঞ্চ এক রুল জারি করে শিক্ষা সচিব ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যানকে জবাব দিতে বলেছে। চার সপ্তাহের মধ্যে তাদেরকে এই জবাব দিতে হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে উদীচীর কর্মী সুমন বলেন, ‘আমরা শিক্ষামন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়ে আমাদের দাবি জানিয়েছি। তারা দৃশ্যত তারা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। আদালতেও রিট করা হয়েছে। আমরা চাই বিষয়টি সবাই জানুক।’

উদীচীর প্রকাশিত বইটিতে ১০টি কবিতা ও পাঁচটি গল্প স্থান পেয়েছে। যেগুলো আগে পাঠ্যবইয়ে ছিল। কিন্তু এবছর তা বাদ দেয়া হয়েছে। কবিতাগুলো মধ্যে রয়েছে- হুমায়ূন আজাদের ‘বই’, গোলাম মোস্তফার ‘প্রার্থণা’, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বাংলাদেশের হৃদয়’, সানাউল হকের ‘সভা’, জসিমউদ্দিনের ‘দেশ’, ভারত চন্দ্র রায় গুণাকারের ‘আমার সন্তান’, জ্ঞান দাশের ‘সুখের লাগিয়ে’, লালন সাহের ‘সময় গেলে সাধন হবে না’, সুনীল গঙ্গোপাধ্যয়ের ‘সাঁকোটা দুলছে’ এবং রুদ্র মোহাম্মদ শহীদুল্লার ‘খতিয়ান’।

এগুলোর মধ্যে ‘বই’ ও ‘প্রার্থণা’ কবিতা দুইটি ছিল পঞ্চম শ্রেণিতে। ‘সভা’ কবিতাটি ছিল ষষ্ঠ শ্রেণিতে, ‘বাংলাদেশের হৃদয়’ কবিতাটি ছিল সপ্তম শ্রেণিতে, ‘দেশ’ কবিতাটি ছিল অষ্টম শ্রেণিতে। বাকিগুলো ছিল নবম ও দশম শ্রেণিতে।

আর গল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে সত্যেন সেনের ‘লাল গরুটা’, এস ওয়াজেদ আলীর ‘রাঁখি বন্ধন’। এই গল্পদুইটি ছিল ষষ্ঠ শ্রেণিতে। রনেশ দাশগুপ্তের ‘মাল্যদান’ গল্পটি ছিল সপ্তম শ্রেণিতে, কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘বাঙালির বাংলা’ গল্পটি ছিল অষ্টম শ্রেণিতে, সঞ্জিম চট্টপাধ্যায়ের ‘পালামৌ ত্রমণ কাহিনি’টি ছিল ছিল নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অজয় রায় বলেন, ‘উদীচী খুবই ভাল উদ্যোগ নিয়েছে। সরকার হেফাজতের কাছে আত্মসমর্পণ করে মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক লেখাগুলোকে বাদ দিয়েছে। আমি বলবো ভবিষ্যতে যেন সরকার এসব কাজ থেকে বিরত থাকে।’

উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, পাঠ্যপুস্তকে অনিয়ম ও ভুল নিয়ে গবেষণাধর্মী আরেকটি বই প্রকাশ করেছে তারা।



মন্তব্য চালু নেই