পাঠ্যবইয়ের ইতিবাচক পরিবর্তনে হেফাজতের প্রশংসা

মোঃ নুর মালেক, হাটহাজারী ( চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি : ২০১২ সালের পরে স্কুল পাঠ্যবইয়ে নাস্তিক্যবাদি ও বিজাতীয় ধ্যান ধারণার সংযোজিত চরম বিতর্কিত কিছু লেখা বাদ দিয়ে তদস্থলে যুগ যুগ ধরে স্কুল পাঠ্যবইয়ে বিদ্যমান থাকা নৈতিকতা ও আদর্শিক শিক্ষার জনপ্রিয় কিছু গল্প ও কবিতা পুনরায় চলতি সনের স্কুল পাঠ্যবইয়ে সংযোজন করায় ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদী গোষ্ঠীর গায়ে জ্বালা ধরেছে বলে কঠোর সমালোচনা করেছেন হেফাজতে ইসলামের আমীর দেশের শীর্ষ আলেম শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী। তিনি বলেন, স্কুল পাঠ্যবইয়ের কিছু ইতিবাচক পরিবর্তনে ইসলামবিদ্বেষী চক্রের গায়ে জ্বালা ধরেছে। আজ (১৪ জানুয়ারী) শনিবার সন্ধ্যায় সংবাদপত্রে দেওয়া এক বিবৃতিতে হেফাজত আমীর উপরোক্ত মন্তব্য করেন।

হেফাজত আমীরের প্রেসসচিব মাওলানা মুনির আহমদ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে হেফাজত আমীর আরো বলেন, দীর্ঘদিনের আন্দোলন ও প্রতিবাদের পর সরকারের নীতি নির্ধারকগণ বিষয়টির গুরুত্ব ও নাজুকতা উপলব্ধি করতে পেরে সিলেবাসে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছেন। কিন্তু পাঠ্যপুস্তকে হেফাজতের দাবী শতভাগ পুরণ করা হয়েছে বলে যারা বিতর্ক তুলতে চাচ্ছে, যারা সাম্প্রদায়িকতার বিষয়বস্তু আবার ফিরিয়ে আনা হয়েছে বলে ইসলামী ভাবধারার গল্প কবিতার প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করছেন, মূলতঃ তারাই মুসলমানদের ঈমানী চেতনাবোধ মুছে ফেলে বাংলাদেশে ইসলাম বিদ্বেষ ও নাস্তিকতা ছড়িয়ে দেওয়ার এজেন্ডা নিয়ে কাজ করছেন। এরা যে শুধুই ইসলাম ও মুসলিম বিরোধী কার্যকলাপে জড়িত তা নয়, বরং এরা মুসলিম বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিয়ে দেশের শান্তিশৃঙ্খলা ও স্বাধীনতার বিরুদ্ধেও হুমকি তৈরি করছে। তারা নানাভাবে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনে দেশের বৃহৎ মুসলিম জনসমাজকে বিক্ষুব্ধ করে দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি করে আধিপত্যবাদি শক্তির আগ্রাসনের পথ সুগম করতে চায়। পাঠ্যবইয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ইসলাম বিদ্বেষী এই চক্রের বক্তব্য গ্রাহ্য করার সুযোগ নেই। যারা স্কুল পাঠ্যবইয়ে সামান্য ইতিবাচক পরিবর্তনেও বির্তক তুলতে চাইছে, তাদের ডাকে দেশের একশ জন মানুষও সাড়া দিবে না। এরা সমাজ ও জনবিচ্ছিন্ন। এদেরকে কঠোরভাবে প্রতিহত করতে হবে।

হেফাজত আমীর আরো বলেন, ২০১৬ সালের ৮ই এপ্রিল হেফাজতে ইসলাম স্কুল পাঠ্যবই নিয়ে এক দীর্ঘ বিবৃতি প্রকাশ করে। সেখানে হেফাজত সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে, “দেশের স্কুল-কলেজ ও ইউনির্ভার্সিটিগুলোতে কোটি কোটি মুসলমানের সন্তানকে নাস্তিক্যবাদ ও হিন্দু তত্ত্বের বিষয়ে পড়ানো হচ্ছে। অভিভাবক ও পিতা-মাতা জানেন না, তাদের সন্তানদেরকে স্কুল পাঠ্যবইয়ে কী কী পড়ানো হচ্ছে?”। হেফাজতের এই অভিযোগ ছিল যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত। কারণ, পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও সংযোজন-বিয়োজনের নিয়ম হচ্ছে, দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর আদর্শিক নৈতিকতা ও ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে সঙ্গতি রেখে এক ধরনের সামাজিক অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জনের রীতি এবং নিয়ম অনুসরন করতে হয়। এবং সেই সামাজিক অংশগ্রহণের আলোকে এনসিসিসিতে বা ন্যাশনাল কারিকুলাম কো-অর্ডিনেশন কমিটি পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে।

আল্লামা শাহ আহমদ শফী আরো বলেন, ২০১৬ সালেই আমরা বুঝতে পারি যে, ২০১৩ সাল থেকে স্কুল পাঠ্যপুস্তকে একধরণের কাঠামোগত পরিবর্তন হয়ে গেছে। সেখানে দেখা গেছে, যুগ যুগ ধরে বিদ্যমান থাকা দেশীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক নয়, এমন জনপ্রিয় গল্প ও কবিতাগুলো বাদ দিয়ে সেখানে হিন্দু তত্ত্ব ও নাস্তিক্যবাদি ধ্যানধারণার গল্প ও কবিতা সংযোজন করা হয়েছে। অথচ এই পরিবর্তনের বিষয়ে স্কুল ছাত্রদের পিতা-মাতা বা অভিভাবকরা মোটেও অবগত নন। তখন আপত্তি তোলাটা খুবই যৌক্তিক। গণতান্ত্রিক শাসনে দেশের যে কোন নাগরিকই এমন প্রশ্ন তুলতে পারেন। তখন আমরা এ বিষয়ে আইন সম্মতভাবেই সরকার প্রধান হিসেবে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছি। ২০১২ সাল থেকে ২০১৩ সালের বইগুলোতে কী কী মৌলিক পরিবর্তন হয়েছে, তার তুলনামূলক একটা তালিকাও আমরা তুলে ধরেছি। তালিকায় দেখানো হয়েছে যে, ২০১২ সাল পর্যন্ত চলে আসা সিলেবাস পরিবর্তন করে ২০১৩ সাল থেকে স্কুল পাঠ্যবইয়ে এমন ১৭টি রচনা বাদ দেয়া হয়েছে, যেগুলো নৈতিকতা ও আদর্শিকভাবে স্বীকৃত হয়ে আসছে কয়েক যুগ ধরে। তার পরিবর্তে এমন ১২টি নতুন রচনা সংযোজন করা হয়েছে, যেগুলো তাত্ত্বিকভাবে সরাসরি হিন্দুত্ব ও নাস্তিক্যবাদি ধ্যানধারণার সাথে যুক্ত। তবে এর মানে এটা নয় যে, ২০১২ সাল পর্যন্ত বিদ্যমান থাকা সিলেবাস আমাদের কাঙ্খিতই ছিল। সেই সিলেবাস নিয়েও আমাদের অভিযোগ ও বলার ছিল।

হেফাজত আমীর বলেন, স্কুল পাঠ্যবই নিয়ে আমাদের আপত্তি ও অভিযোগের প্রতি দেশবাসীর সর্বাত্মক সমর্থন ছিল। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনও আমাদের দাবীর যৌক্তিকতা স্বীকার ও একাত্মতা প্রকাশ করেছে। বিভিন্ন পর্যায়ে সরকারের নীতিনির্ধারকগণও পাঠ্যবইয়ের এমন পরিবর্তনে বিস্ময় ও উষ্মা প্রকাশ করেছেন।



মন্তব্য চালু নেই