পাকিস্তানে মা, ভারতে ছেলে ও বাংলাদেশে বাবা, চলছে নানা নাটক

ছেলেটির নাম রমজান মোহাম্মদ। বাংলাদেশি এই কিশোর ব্যাকুল হয়ে আছে কখন যাবে পাকিস্তানে তার মায়ের কাছে। কখন দেখা পাবে তার মায়ের। কিন্তু কূটনৈতিক প্যাঁচ তাকে আটকে দিয়েছে। ভারতে গিয়ে ছেলেটি এমন জটাজালে পড়েছে, যার জন্য সে পাকিস্তানে ফিরতে পারছে না তার মায়ের কাছেও।

জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে ভারত হয়ে পাকিস্তানে যেতে চেয়েছিল ১৫ বছর বয়সী এই কিশোর। কিন্তু তার কাছে পাকিস্তানি নাগরিকত্বের কোনো কাগজপত্র নেই। তাই দেশটির কর্তৃপক্ষ তাকে বাংলাদেশে পাঠানোর কথা ভাবছে। উদ্দেশ্য, রমজান যাতে বাংলাদেশ হয়ে পাকিস্তানে ফিরতে পারে।

সূত্র থেকে জানা যায়, শরণার্থী রমজানের পরিবার বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে স্থায়ী হয়। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে রমজানকে ভারতের ভোপালে পাওয়া যায়। তাকে চাইল্ডলাইন পরিচালিত একটি শিশুনিবাসে পাঠানো হয়। কিন্তু রমজান কীভাবে ভোপালে গেল? সে এক বিরাট ইতিহাস!

১০ বছর বয়সে মায়ের কাছ থেকে আলাদা হয় রমজান। তাকে তার বাবা কাজল মোহাম্মদ পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। কাজল ফের বিয়ে করেন। এই সংসারে সৎমায়ের নির্যাতনের শিকার হয় রমজান। পাকিস্তানের করাচিতে মায়ের কাছে ফিরে গিয়ে থাকতে উদ্গ্রীব হয়ে ওঠে রমজান। এই উদ্দেশ্যে ২০১১ সালে একাকী সীমান্ত অতিক্রম করে এই কিশোর।

সীমান্ত পার হয়ে ভারতে গিয়ে আটকে যায় রমজান। পাকিস্তানে যেতে পারেনি সে। তাকে নিয়ে পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়। সেই খবরে ভোপালের শিক্ষার্থী হামজা বাসিতের (১৯) মন পোড়ে। রমজানকে তার মায়ের কাছে ফিরতে সাহায্য করার ব্যাপারে মনস্থির করেন হামজা।

রমজানের সঙ্গে দেখা করেন হামজা। এরপর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রচার শুরু করেন। এই সুবাদে করাচির এনজিও, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়।

শেষমেশ রমজানের মায়ের খোঁজ মেলে। মা-ছেলের মধ্যে টেলিফোনে কথাও হয়। রমজানকে করাচি পাঠাতে রাজি হয় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কিন্তু তাতে বাদ সাধে রমজানের নাগরিকত্বের বিষয়টি। তার পাকিস্তানি নাগরিকত্বের পক্ষে তথ্য-প্রমাণ নেই।

চাইল্ডলাইনের ভোপাল শাখার পরিচালক অর্চনা সাহা বলেন, রমজানকে পাকিস্তানে ফেরত পাঠাতে তারা অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তার পাকিস্তানি নাগরিকত্বের কোনো কাগজপত্র নেই। তাই ওই পরিকল্পনা বাদ দেওয়া হয়। তার মা রমজানকে বাংলাদেশে পাঠানোর পরামর্শ দেন। তাহলে তিনি (মা) সহজে বাংলাদেশে গিয়ে ছেলের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। এরপর চাইল্ডলাইন রমজানকে কলকাতায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়, যাতে সে সেখান থেকে বাংলাদেশে যেতে পারে। এই কাজে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে কলকাতাভিত্তিক এনজিও ‘সংলাপ’।

গত বৃহস্পতিবার কলকাতায় আসে রমজান। সে বলে, ‘আমি আমার বাবার কাছে যেতে চাই না। মায়ের সঙ্গে দেখা করতে পারব বলেই বাংলাদেশে যেতে চাই। সেখানে আমি অন্য কোথাও অপেক্ষা করব। সবকিছু ঠিক হলে পাকিস্তানে যাব।’



মন্তব্য চালু নেই