পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা কি সম্ভব?
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দণ্ডপ্রাপ্তদের পক্ষে বক্তব্য দেয়া এবং একাত্তরে কোনো যুদ্ধাপরাধ ঘটেনি বলে দাবি করায় পাকিস্তানের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। ইতিমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট পাকিস্তানের সঙ্গে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট সব সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছে।
পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি নতুন নয়। একাত্তরে স্বাধীনতার পর থেকেই এই দাবি চলে আসছে। তবে বঙ্গবন্ধু থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত আর সব দেশের মতোই পাকিস্তানের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক বজায় রেখে চলছে বাংলাদেশ।
পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সব সম্পর্ক ছিন্ন করা কি সম্ভব?
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, আবেগের জায়গা থেকে বলতে গেলে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক বহু আগেই ছিন্ন হতে পারত। কারণ তারা আমাদের আবেগে বারবার আঘাত হেনেছে। কিন্তু কূটনৈতিক ক্ষেত্রে আবেগের জায়গা নেই।
তারা বলছেন, জাতীয় স্বার্থ ও কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে ভাবলে এখনই পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা যাবে না। কারণ তাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিকের পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক রয়েছে। আর তা করতে গেলে বেশ কিছু নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলা করতে হবে দেশকে।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আশেকা ইরশাদ বলেন, এখনই পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলে উগ্রপন্থীরা উসকানি পাবে। তারা বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে। তাদের সঙ্গে সম্পর্কটা ‘ওয়ার্কিং রিলেশন’ হিসেবে রাখা উচিত। কারণ পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক শুধু দ্বিপক্ষীয় নয়। আঞ্চলিক সম্পর্কও এখানে বিদ্যমান। যেমন- আমরা সার্ক প্রতিষ্ঠা করেছি। অনেক আন্তর্জাতিক ফোরামে একসঙ্গে কাজ করতে হয় দুই দেশকে। এসব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে।
আশেকা ইরশাদ বলেন, “পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক বন্ধ করলে খুব যে লাভবান হওয়া যাবে তা নয়। বরং সম্পর্ক রাখলে আমরা তাদের বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ, সতর্ক, নিন্দা ও হুঁশিয়ার করে দিতে পারব। কিন্তু দরজা বন্ধ করে দিলে আর যোগাযোগই করা যাবে না। এটা ঠিক হবে বলে আমার কাছে মনে হয় না।”
এক প্রশ্নের জবাবে আশেকা ইরশাদ বলেন, “এটা ঠিক যে পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক সীমিত। কিন্তু বিশ্বায়নের এই যুগে কমিউনিকেশন চ্যানেল খোলা রাখা উচিত, যাতে যোগাযোগের মাধ্যম পাওয়া যায়।”
একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মুহা. রুহুল আমিন বলেন, “আবেগ আর জাতীয় স্বার্থ এক নয়। দেশের জাতীয় স্বার্থে ওয়ার্কিং রিলেশন থাকতে পারে। কিন্তু আবেগের জায়গায় পাকিস্তানের সঙ্গে কোনো সম্পর্কই থাকতে পারে না। কূটনৈতিক শিষ্টাচারে সম্পর্ক একেবারে ছিন্ন করা যায় না। সীমিত করা যেতে পারে।”
ভারত-পকিস্তানের সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক রুহুল আমিন বলেন, “ও্ই দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে কিন্তু বাহ্যিক সম্পর্ক অনেক ভালো। ভারত-চীনও কিন্তু একই রকম অবস্থায় আছে। সুতরাং কূটনৈতিক সম্পর্কের বিষয়টি নিয়ে ভাবার সুযোগ আছে। এটিকে জাতীয় স্বার্থে বিবেচনা করতে হবে।”
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, “আজকে ২০১৫ সালে এসে পাকিস্তান বলছে ১৯৭১ সালে তারা কোনো গণহত্যা চালায়নি। আমি মনে করি, এটা নির্জলা মিথ্যা। ১৯৭১ সালে তারা গণহত্যা চালিয়েছে। সে জন্য মনে করি, পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সম্পর্ক রাখা উচিত নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট আজ সোমবার পাকিস্তানের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা সম্পর্ক ছিন্ন করেছে।”
মন্তব্য চালু নেই