পাঁচ হাজার শূন্য পদে স্থবির কৃষি ব্যাংক
শূন্য কিংবা খালি পদের কারণে প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের বিশেষায়িত দেশের অন্যতম বৃহৎ ব্যাংক বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক।
দেশের কৃষি খাতে এককভাবে প্রায় ৩৫ শতাংশ ঋণের জোগানদাতা ব্যাংকটি যথাযথ অভিভাবকের অভাবে চরম অবহেলার শিকার হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
তিন উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) এবং জিএমসহ ৫ হাজার ২৭০টি পদ খালি রেখে অনেকটা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে বিশেষায়িত এই ব্যাংকটি। দীর্ঘদিন যাবৎ ওই পদগুলো খালি রয়েছে। ব্যাংকটিতে অনুমোদিত মোট জনবল থাকার কথা ১৫ হাজার ৪৪২ জন। যেখানে বর্তমানে কর্মরত রয়েছে ১০ হাজার ১৭২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কৃষি ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রাইজিংবিডিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, বর্তমানে ব্যাংকের নির্বাহী পদগুলোর অধিকাংশই শূন্য। চেয়ারম্যানের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদটিও চলছে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে। অনেক দিন ধরে ডিএমডির মতো গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পদই শূন্য। ১৭টি জিএম পদের বিপরীতে আছেন মাত্র ৭ জন। অবশিষ্ট ১০টি জিএম পদ উপমহাব্যবস্থাপক দিয়ে কোনোভাবে চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, আগামী দু-তিন বছরের মধ্যে বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী পিআরএলে (অবসর পরবর্তী ছুটি) চলে যাবেন। এর ফলে আরো হাজারেরও বেশি পদ খালি হয়ে যাবে। এ কারণে অচিরেই ব্যাংকে বিশাল লোকবল শূন্যতার সৃষ্টি হবে। যাতে ব্যাংকের সার্বিক ঋণ বিতরণ কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা দেশের এ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধির ওপর ঋণাত্মক প্রভাব ফেলবে বলেও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
ব্যাংকটির সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ বাদে দেশের সব বিভাগে ১ হাজার ২৯টি ক্রিয়াশীল শাখা রয়েছে। পরিকল্পনা রয়েছে প্রতি ইউনিয়নে একটি করে শাখা খোলার। যা বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে। তাই এখনই উদ্যোগ না নিলে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের এ বিশাল ব্যাংকটি অচল হয়ে পড়ার আশঙ্কাও করছেন ব্যাংকসংশ্লিষ্টরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে ব্যাংকের এ বিপুলসংখ্যক শূন্য পদের বিপরীতে লোকবল নিয়োগ করা যাচ্ছে না। অথচ বছর বছর নতুন নতুন শাখা খোলা হচ্ছে এবং পদও খালি হচ্ছে জ্যামিতিক হারে। কিন্তু দেখার কেউ নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার ও গুরুত্বপ্রাপ্ত কৃষি খাতের অর্থায়নকারী সর্ববৃহৎ এ রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের যদি এ অবস্থা হয় তাহলে অন্যান্য খাতের কী অবস্থা, তা সহজেই অনুমেয়।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে দুরবস্থা বিরাজ করছে ব্যাংকটিতে। একসময়ে অন্যান্য ব্যাংকের মতো এখানেও বছরে ২.৫টি উৎসাহ বোনাস দেওয়া হতো। কিন্তু অলাভজনক প্রতিষ্ঠান বিবেচনায় তা কর্তন করে একটি মাত্র বোনাস দেওয়ার প্রচলন করা হয়। তাও এ বছর মন্ত্রণালয়ের গাফিলতির কারণে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাক্তন গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, ‘বিষয়টি ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ বিষয়, তাই এ নিয়ে কোনো মতামত দেব না। তবে বিষয়টি সরকারকে গুরুত্বসহকারে দেখা উচিত। অন্যদিকে শূন্য পদ পূরণে ব্যাংক কর্তৃপক্ষও প্রচেষ্টা নিতে পারে।’
অন্যদিকে চলতি বছরের অক্টোবরে দায়িত্ব নেওয়া কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ ইউসুফ বলেন, ‘আমি মাত্র ব্যাংকটির দায়িত্ব নিলাম। এখনো ব্যাংকটির সকল বিষয়ে অবগত নই। তাই বিষয়টি নিয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য করতে চাই না।’
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংককে ভেঙে রাজশাহী বিভাগে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক নামে আলাদা একটি কৃষি ব্যাংক এরশাদ সরকারের সময় প্রতিষ্ঠিত হয়। ব্যাংকটি ভর্তুকি সুদ হারে কৃষকদের মধ্যে ঋণ বিতরণ করে ১০ শতাংশ বা এর কম। কিন্তু আমানতের সুদের ক্ষেত্রে অন্যান্য ব্যাংকের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে উক্ত ব্যাংককে ঋণ সুদ হারের কাছাকাছি বা বেশি সুদ প্রদান করতে হয়। ফলে অপারেশনাল কার্য পরিচালনার সময়েই এ ব্যাংকটি লাভ করার উল্টো পথে চলতে শুরু করে।
ব্যাংকটিতে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে কৃষি ঋণ বিতরণ করা হয় ১৬ হাজার ৩৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে এককভাবে কৃষি ব্যাংক ঋণ বিতরণ করে ৫ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা। অন্যদিকে ২০১২-১৩ বছরে বিতরিত মোট কৃষিঋণ ১৪ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকার বিপরীতে কৃষি ব্যাংক দেয় ৪ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা। গড়ে বছরওয়ারি উক্ত ব্যাংক এককভাবে মোট কৃষিঋণের প্রায় ৩৩ শতাংশ বিতরণ করছে। ব্যাংকটিতে বর্তমানে আমানত ও ঋণ স্থিতি যথাক্রমে ১৭ হাজার ৩৮৫ কোটি এবং ১৫ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা এবং মোট ঋণের ২৮ ভাগ শ্রেণীকৃত।
ব্যাংকটি সেবা প্রদানের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন ভাতাসমূহ যেমন- বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা প্রদানসহ কৃষকদের কৃষি ভর্তুকি প্রদান, স্বল্প আয়ের মানুষদের জন্য ১০ টাকার অ্যাকাউন্ট খোলা, সামরিক পেনশন প্রদান, বিভিন্ন ধরনের ইউটিলিটি বিল গ্রহণসহ নানান ধরনের জনমুখী ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। রাইজিংবিডি
মন্তব্য চালু নেই