পর্যায়ক্রমে তিন’শ হল ডিজিটাল করা হবে: প্রধানমন্ত্রী

২০১৩ সালে চলচ্চিত্রের বিভিন্ন শাখায় অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বিজয়ীদের মধ্যে নিজ হাতে পুরস্কার বিতরণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজধানীর আগারগাঁওস্থ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শনিবার বিকেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ পুরষ্কার বিতরণ করা হয়।

দেশীয় চলচ্চিত্র শিল্পে গৌরবোজ্জ্বল ও অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এবার মোট ২৫টি শাখায় ২৯ জন শিল্পী ও কলাকুশলীকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে এ পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের তথ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সভাপতি একেএম রহমতউল্লাহ এমপি। স্বাগত বক্তব্য দেন তথ্য সচিব মরতুজা আহমদে। এর আগে পুরস্কারপ্রাপ্তদের পক্ষ থেকে অনুভূতি ব্যক্ত করেন ২০১৩ সালে আজীবন সম্মাননাপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রের মিষ্টি মেয়ে খ্যাত কিংবদন্তি অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী।

কবরী অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমার এ পুরস্কার একার না, এটা মুক্তিযোদ্ধাদের যারা এ দেশ গঠনে ভূমিকা রেখেছে।যাদের কারণে আমি কবরী হতে পেরেছি সুভাষ দত্ত, খান আতাউর রহমান, রানী সরকার তারা আমার এ পুরস্কারের অংশীদার। কাজকে ভালো না বাসলে বিশ্বজয় করা যায় না। তাই চলচ্চিত্রকে ভালোবেসে কাজ করতে হবে। আমি এই এক লাখ টাকা পুরস্কার থেকে ৫০ হাজার টাকা প্রতিবন্ধীদের জন্য আর বাকি ৫০ হাজার টাকা এতিম শিশুদের দান করবো।’

প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সমাজ জীবনে চলচ্চিত্র শক্তিশালী গণমাধ্যম। শিক্ষাবিস্তারে জাতী গঠনে এবং প্রগতীশীল সমাজ নির্মাণে চলচ্চিত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমরা সরকারের দায়িত্বগ্রহণের পর চলচ্চিত্রে ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহারে দৃষ্টি দিয়েছি। চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে হলে একটা নীতিমালা প্রয়োজন ছিল। ২০১০ সালে আমরা সেই নীতিমালা তৈরি করেছি। চলচ্চিত্র উন্নয়নে ফিল্ম সিটি নির্মাণের জন্য মাস্টার প্লান প্রণয়ন করা হয়েছে। এফডিসির উন্নয়নে ৫৯ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। চলচ্চিত্রের অনুদান ধীরে ধীরে বাড়ছে। গত ৭ বছরে ৮ কোটি টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। তবে দিন দিন জিনিসপত্রের মূল্য বাড়ছে। তাই আগামী বাজাটে এই অর্থ আরো বাড়ানোর জন্য অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আর্কষণ করছি। শিশুদের জন্য এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের জন্য আমরা অনুদান দিচ্ছি। শুধু চলচ্চিত্র নির্মাণ করলে চলবে না চলচ্চিত্র প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। দর্শকদের সিনেমা হলমুখী করতে হবে। আমাদের সরকার দেশব্যাপী একশটি ডিজিটাল হল নির্মাণের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। পর্যায়ক্রমে তিনশ হল ডিজিটাল করা হবে। যুগের চাহিদা অনুসারে সিনেপ্লেক্সও গড়ে উঠছে। সিনেপ্লেক্স গড়ে তুলতে আমরা ৩৫ শতাংশ কর ছাড় দিচ্ছি।’

পুরস্কার প্রদান শেষে অভিনেতা জাহিদ হাসান ও মেহের আফরোজ শাওনের উপস্থাপনায় শুরু হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে প্রথমেই কবরী অভিনীত ‘সুতরাং’ ছবির একটি গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন আমিন খান ও নিপুণ। এছাড়া কবরীর অভিনীত আরেকটি ছবির গান ‘আমি সাত সাগর পাড়ি দিয়ে’ সঙ্গে নাচেন চিত্রনায়ক ওমর সানী ও অভিনেত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া।

এছাড়া ‘সুজন সখী’ ছবির ‘সব সখীরে পার করিতে নেবো আনা আনা’ গানের সঙ্গে নিরব-মেহজাবিন ও ‘রংবাজ’ ছবিতে সাবিনা ইয়াসমিন ও মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকীর গাওয়া ‘হৈ হৈ রঙিলা রঙিলা রে’ গানের তালে চিত্রনায়ক জায়েদ খান, শিরিন শিলা ও পরীমণি।

অন্যদিকে অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী মো. খুরশীদ আলম, মমতাজ, শাকিলা জাফর, আঁখি আলমগীর, দিনাত জাহান মুন্নি, কোনাল ও তৌসিফ।

এক নজরে ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০১৩’

শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র ‘মৃত্তিকা মায়া’ (প্রযোজক ফরিদুর রেজা সাগর ও গাজী রাকায়েত),

শ্রেষ্ঠ পরিচালক গাজী রাকায়েত (মৃত্তিকা মায়া),

শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার গাজী রাকায়েত (মৃত্তিকা মায়া),

শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার গাজী রাকায়েত (মৃত্তিকা মায়া),

শ্রেষ্ঠ সংলাপ গাজী রাকায়েত (মৃত্তিকা মায়া),

প্রধান চরিত্রের শ্রেষ্ঠ অভিনেতা তিতাস জিয়া (মৃত্তিকা মায়া),

প্রধান চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী (যৌথভাবে) মৌসুমী (দেবদাস) ও শর্মিমালা (মৃত্তিকা মায়া),

পার্শ্ব চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদ (মৃত্তিকা মায়া),

পার্শ্ব চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী অপর্ণা ঘোষ (মৃত্তিকা মায়া),

খল চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা মামুনুর রশিদ (মৃত্তিকা মায়া),

শ্রেষ্ঠ চিত্র গ্রাহক সাইফুল ইসলাম বাদল (মৃত্তিকা মায়া),

শ্রেষ্ঠ শব্দ গ্রাহক কাজী সেলিম (মৃত্তিকা মায়া),

শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক (যৌথভাবে) শওকত আলী ইমন (পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী) ও একে আজাদ (মৃত্তিকা মায়া),

শ্রেষ্ঠ গায়ক চন্দন সিনহা (পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী),

শ্রেষ্ঠ গায়িকা (যৌথভাবে) সাবিনা ইয়াসমিন ও রুনা লায়লা (দেবদাস),

শ্রেষ্ঠ গীতিকার কবির বকুল (পূর্র্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী),

শ্রেষ্ঠ সুরকার কৌশিক হোসেন তাপস (পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী),

শ্রেষ্ঠ সম্পাদক মো. শরিফুল ইসলাম রাসেল (মৃত্তিকা মায়া),

শ্রেষ্ঠ শিল্পী নির্দেশক উত্তম গুহ (মৃত্তিকা মায়া),

শ্রেষ্ঠ পোশাক ও অঙ্গসজ্জা ওয়াহিদা মল্লিক জলি (মৃত্তিকা মায়া),

শ্রেষ্ঠ মেকাপম্যান আলী বাবুল (মৃত্তিকা মায়া),

শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী স্বচ্ছ (একই বৃত্তে),

শিশুশিল্পী শাখায় বিশেষ পুরস্কার সৈয়দা অহিদা সাবরিনা (অন্তর্ধান) এবং

শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্যচিত্র শুনতে কি পাও (সারা আফরিন)।



মন্তব্য চালু নেই