পর্নোসাইট বন্ধের উদ্যোগের মধ্যেই ফেসবুক লাইভে পর্নোগ্রাফি!

দেশের পর্নোসাইট বন্ধ করে দেওয় হবে বলে একাধিকবার ঘোষণা দিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। আর পনোসাইট বন্ধের এই উদ্যোগের মধ্যেই ফেসবুক লাইভে এসে টাকার বিনিময়ে পর্নোগ্রাফি দেখানোর ব্যবসাও শুরু করে দিয়েছে এর সঙ্গে জড়িতরা। এ নিয়ে অভিযোগের ভিত্তিতে বিভিন্ন সময় পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নিলেও জামিনে বেরিয়ে পুনরায় এ কাজে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগও আছে এই চক্রের বিরুদ্ধে।খবর বাংলা ট্রিবিউনের।

সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, পর্নোসাইট বন্ধ করে দেওয়ার মধ্য দিয়ে পর্নোগ্রাফি সমূলে রোধ করা সম্ভব নয়। এতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। আর অপরাধবিজ্ঞানীরা বলছেন, রাতারাতি সাইট বন্ধ করে দিলেই নারীর প্রতি সহিংসতা হবে না বা যুবসমাজ নারীর প্রতি সম্মান দেখানো শুরু করে দেবে, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। বরং পর্নোগ্রাফিকে ঘিরে অপরাধ সৃষ্টি হলে সেটার সুনির্দিষ্ট বিচার হওয়া জরুরি।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম গত ১২ ডিসেম্বর সাংবাদিকদের জানান, বাইরে থেকে যেসব পেজ জেনারেট হচ্ছে, সেগুলো শতভাগ বন্ধ করা না গেলেও দেশি সাইটগুলোর বেশির ভাগ যদি বন্ধ করা যায়, সেটা অনেক বড় কাজ হবে।

এর আগে গত ২৮ নভেম্বর সচিবালয়ে ‘অনলাইনে আপত্তিকর কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণ’ সভায় পর্ন ওয়েবসাইট বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ জন্য একটি কমিটি গঠন করে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১২ ডিসেম্বর সচিবালয়ে নিজ দফতরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এই কমিটি যে পেজগুলোর তালিকা আমাদের দেবে, সেগুলোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।’

এদিকে ফেসবুকের একাধিক পেজ থেকে ও ব্যক্তিগত পেজ থেকে ফেসবুক লাইভে গিয়ে সরাসরি পর্নোগ্রাফি চর্চা শুরু হয়েছে। আগে থেকে সময় জানিয়ে দিয়ে লাইভে আসছেন নারীরা। সেখানে তাদের দেখার জন্য বিকাশে টাকা নেওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে। এমনই একটি পেজে (নাম প্রকাশে প্রচার হবে বলে দেওয়া হলো না) ৫০০ টাকা বিকেল ৫টার মধ্যে বিকাশ করলে রাত ৯টায় লাইভ দেখা যাবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। সেই ঘোষণায় ছোট ভিডিও ক্লিপও জুড়ে দিতে দেখা গেছে।

জাস্টিস ফর উইমেন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একাধিক ফেসবুক লাইভ করে এমন নামের পেজ উল্লেখ করে সাইবার সোসাইটি স্যোসাল সিকিউরিটি বরাবর আবেদন করা হয়েছে বলে জানান সংগঠনটির কর্মী মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘বেশ কয়েকটি পেজ আছে, এগুলোর ফলোয়ার সংখ্যা ও ফলোয়ারের ধরন দেখলেই ভড়কে যেতে হয়। অনেক ক্ষমতাশালীর সঙ্গেও তাদের যোগাযোগ আছে বলে শোনা যায়। তারা ফেসবুকে ওপেন টাকা বিকাশে চেয়ে লাইভে এসে কী করবে, তার যে বিবরণ দেয়, সেটা আমাদের সমাজের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এসব দেখে আমরা আবেদন করি, এদের বিরুদ্ধে যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এছাড়া সম্ভব হলে কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করা যায় কিনা, তা বিবেচনায় নিতে ও অনুরোধ করি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বলেন, ‘পর্নোসাইট বন্ধ করা বা ফেসবুক লাইভ বন্ধ করার মধ্য দিয়ে এ ধরনের অপরাধ বন্ধ হবে, এটা ভাবার কোনও কারণ নেই। ফলে বন্ধ করা কোনও সমাধান নয়। বরং যারা এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে, তাদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ফেসবুক লাইভে দুর্দান্ত কিছু কাজ হয়। টাকা নিয়ে লাইভ পর্নো দেখানোর মতো অপরাধমূলক কার্যকলাপের জন্য পুরো ফেসবুক বন্ধ করার কোনও প্রয়োজন নেই। আবার আপনি চাইলেই সব পর্নোসাইট বন্ধ করতে পারবেন না। এটা টেকনিক্যালি সম্ভব নয়। ফলে কোন বয়সীরা এর ভোক্তা, সেটা চিহ্নিত করে তাদের জন্য সাইট ফিল্টারিং এর ব্যবস্থা করা দরকার।’

পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, ‘ফেসবুকে এ ধরনের ঘটনা বিষয়ে আমাদের কাছে খবর এসেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে অভিযোগের ভিত্তিতে আসামিও ধরেছি একটি ক্ষেত্রে। এখন উচ্চআদালত থেকে জামিনে আছে আসামি।’ এই ধরনের লাইভ বন্ধে করণীয় প্রশ্নে কিছু ভাবছেন কিনা—এমনপ্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভাবছি যে কেবল তা নয়, আমরা রীতিমতো কাজও করছি। এ ধরনের ঘটনা আমরা জানতে পারা মাত্রই ব্যবস্থা নিচ্ছি।’



মন্তব্য চালু নেই