পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তনের পক্ষে শিক্ষামন্ত্রী
প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে পাবলিক পরীক্ষার পদ্ধতি পরিবর্তনের পক্ষে মত দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলেন, ‘আমি পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তনের পক্ষে। মাস ভরে পরীক্ষা হয়। এতদিন প্রশ্নপত্র পাহারা দেওয়াও তো কঠিন। মন্দ লোকের এই সুযোগ নেয়।’
শুক্রবার বিকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ)এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা এবং বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ডিআরইউর সদস্যদের সন্তানদের মধ্যে এ বছর এসএসসিতে ১৭ জন, ও লেভেলে ০২জন এবং এইচএসসির ১২জন কৃতি শিক্ষার্থীর হাতে ৩ হাজার টাকা করে শিক্ষাবৃত্তি ও ক্রেস্ট তুলে দেয়া হয়।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘দুই-তিন মাস ধরে পরীক্ষা চলায় ক্লাস বন্ধ থাকে।সময় নষ্ট হয়। শিক্ষার্থীদের ক্ষতি তো আছেই। এই জন্য পাবলিক পরীক্ষার পদ্ধতি পরিবর্তন প্রয়োজন। বিষয়টি নিয়ে চিন্তা চলছে।’ তিনি বলেন, ‘যত সুপার টেকনোলজি ব্যবহার করা হোক না কেন প্রশ্নপত্র ফাঁস পুরোপুরি ঠেকানো যাবে না। যারা অপরাধী তারা সুপার টেকনোলজির চেয়েও এগিয়ে থাকে। তাছাড়া চাইলেও সুপার টেকনোলজি চালু করা সম্ভব না।’
শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের কথা উল্লেখ করে নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘ঘুষ দিয়ে যদি চাকরি নিতে হয় তাহলে সেই শিক্ষক পড়াবেন কীভাবে? তার কাছ থেকে কতটুকু দায়িত্ববোধ আশা করা যায়?’ তিনি বলেন, ‘শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধে সারাদেশে পিএসসির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে। এতে অনিয়ম করার সুযোগ বন্ধ হবে।’
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আক্ষেপ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখনো শিক্ষার মান তেমন উন্নত করা যায়নি। আমরা যখন ক্ষমতায় আসি তখন ৫৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। আমরা এসেই তাদের নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য সময় বেঁধে দেই। এই সময়ের মধ্যে কেউ নিজস্ব ক্যাম্পাসে যায়নি। পরে আমরা ২৭টি বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে বাধ্য করেছি।’
২০১০ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নীতিমালা করা হয়েছে জানিয়েছে তিনি বলেন, ‘কথা না শোনায় ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন বাতিল করেছি। কিন্তু তারা উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ এনে এখনও কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘দেশে বর্তমানে ৩৮টি সরকারি এবং ৮৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এখনও দোকান-পাট এবং বাসা ভাড়া নিয়ে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ক্যাম্পাস চালাচ্ছে। তাদের পেছনে আমি লেগে আছি। কিন্তু রাতারাতি পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।’ তিনি বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা আমাদের খুবই। কারণ, যার যার নিজস্ব নীতিমালা আছে। তারা সেই অনুযায়ী চলে।’
কারিগরি শিক্ষার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘এক সময় বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানকে কারিগরি শিক্ষায় দিতে চাইতেন না। বর্তমানে ১৩ শতাংশ শিক্ষার্থী কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে। ২০২০ সালের মধ্যে এটিকে আমি ২০ শতাংশে নিয়ে যেতে চাই।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি আরিফুর রহমান বলেন, ‘বর্তমান শিক্ষামন্ত্রীকে আমি শতভাগ সফল মন্ত্রী বলতে চাই না। তিনি আংশিক সফল। কারণ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মান নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন আছে। শিক্ষা বাণিজ্য আমরা কতটুকু বন্ধ করতে পেরেছি? এই দায়িত্ব কার?’ তিনি বলেন, ‘অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সার্টিফিকেট বিক্রি করা হয়। দোকানপাট ও বাসাবাড়ি ভাড়া নিয়ে ক্যাম্পাস করা হয়েছে। এগুলো তদারিক দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের। কিন্তু তারা কতটুকু দায়িত্ব পালন করছে? শিক্ষা মন্ত্রণালয়ই বা এ ব্যাপারে কী ভূমিকা রাখছে?’
আরিফুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষা খাতে কোথায় কোন ত্রুটি, বিচ্যুতি রয়েছে শিক্ষামন্ত্রী তা জানেন। বলা হয়, শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। মন্ত্রী যদি এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন তাহলে জাতির মেরুদণ্ড আরও শক্ত হবে।’
ডিআরইউর সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন, ডিআরইউর সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস হোসেন, সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক ডিআরইউর সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ, সদস্য সচিব সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস মোবারক প্রমুখ। ডিআরইউর কল্যাণ সম্পাদক শাহনাজ শারমিনের সঞ্চালনায় অভিভাবকদের মধ্যে এহসানুল হক বাবু, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক কুদ্দুস আফরাদ, আর্শিয়ানা চৌধুরী বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে মানবজমিনের সিনিয়র সাংবাদিক আওলাদ হোসেনের স্মরণে একমিনিট নিরবতা পালন করা হয়। তিনি বৃহস্পতিবার রাতে ইন্তেকাল করেন। ঢাকাটাইমস
মন্তব্য চালু নেই