পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের বর্জ্য নেবে রাশিয়া
নিরাপত্তার সব দিক বিবেচনা করেই পাবনার রূপপুরে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে বলে জাতীয় সংসদকে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এই কেন্দ্রের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়েও কেন্দ্র নির্মাণকারী দেশ রাশিয়ার সঙ্গে কথা হয়েছে তাঁর। রাশিয়াই এসব বিপজ্জনক বর্জ্য নিয়ে যাবে।
বৃহস্পতিবার রাতে জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের তোলা প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে এ কথা বলেন তিনি। রওশন বলেছিলেন, রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন আছে। বাংলাদেশ এটি করতে পারবে কি না, এ নিয়ে কোনো বিপর্যয়ের আশঙ্কা আছে কি না। এর জবাবেই প্রধানমন্ত্রী এই কথা বলেন।
গত ৬ ডিসেম্বর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প অনুমোদন করেছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেক। এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে রাশিয়ার একটি প্রতিষ্ঠান। ২০২৫ সালের মধ্যে পুরো উৎপাদনে যাবে ২৪০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্রটি।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যুৎ উন্নয়নে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী যেসব প্রকল্প নেয় তার মধ্যে অন্যতম রূপপুর। ১৯৬২ সালেই পাবনার রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে জমি নির্দিষ্ট করা হয়। কিন্তু এরপর কোনো সরকার আর প্রকল্পটি নিয়ে আগায়নি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ এত সহজ না। সেই ৬২ সাল থেকেই এর চিন্তা ভাবনা। ১৯৯৬ সালে আমরা ক্ষমতায় এসে একটি কমিটি করি। … আমরা ৯৬ সাল থেকে যে উদ্যোগটা নিয়েছিলাম, ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত কিছু হয়নি। ২০০৯ সালে এসে আবার উদ্যোগ নেই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেখানে আমরা যে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছি, সেটা অত্যন্ত আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন। সেখানে যারা কাজ করবে, আমাদের যারা সায়েন্টিস্ট (বিজ্ঞানী) বা টেকনোলজিস্ট, তাদের প্রত্যেকের ট্রেনিং হচ্ছে। প্রতিনিয়ত আমরা তাদেরকে ট্রেইনিং করিয়ে নিয়ে আসছি।’
রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে উঠা উদ্বেগ অযৌক্তিক বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের যে বর্জ্য হবে, সেটা নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করার আগে আমি আলোচনা শুরু করি, সেই আলোচনায় আমার প্রথম প্রশ্নটাই ছিল, এই বর্জ্যটার ব্যবস্থাপনা কারা করবে? এটা তারা করবে-এটা তারা আমাদেরকে কথা দিয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন অত্যন্ত আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়, সেখানে কোনো ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। পৃথিবীর বহু দেশে এ রকম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে।’
রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করা ব্যক্তিদেরকে নিয়েও সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের কিছু মানুষ আছে, তারা নতুন কিছু করতে গেলেই নানা রকম খুঁত ধরতে শুরু করে। এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। এটুকু আমি অন্তত বলতে পারি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি বাংলার ছাত্রী, আমি কোনো সায়েন্টিস্ট না। তবে আমার স্বামী কিন্তু নিউক্লিয়ার (পরমাণু) সায়েন্টিস্ট ছিলেন, সেটুকু বলতে পারি।’ তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক এটমিক এনার্জি কমিশনের সঙ্গে সরকারের একটা যোগাযোগ আছে, সেখানে আমাদের অনেক বন্ধুবান্ধব আছে, অনেক পরিচিত লোক আছে, সেখানে অনেকে আমাদেরকে ভলান্টিয়ার সার্ভিস দিচ্ছে, সেখানে বাঙালিও অনেকে আছেন, তাদের সঙ্গে আমার কথা হয়। একুটু বলতে পারি, এই বিদ্যুৎকেন্দ্র হওয়ার পর সেখান থেকে দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাবো, সেখানে নিরাপত্তার সব ব্যবস্থাই আমরা নিয়েছি। এটা নিয়ে চিন্তার খুব বেশি আছে কি না জানি না, আমার মনে হয় চিন্তা না করলেই ভালো।’
মন্তব্য চালু নেই