‘পরমাণু অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব চাই’
রতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ড. এ পি জে আবদুল কালাম বলেছেন, পরমাণু অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব প্রতিষ্ঠায় ভারত, পাকিস্তানসহ সব দেশের একসঙ্গে কাজ করা উচিত।
তিনি বলেন, পারমাণবিক শক্তি যখন মানবসভ্যতা ধ্বংসের জন্য ব্যবহার হয়, তা অত্যন্ত ক্ষতিকর।
শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে তরুণদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে পারমাণবিক শক্তির নেতিবাচক দিক সম্পর্কে এ অভিমত দেন আবদুল কালাম।
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এমসিসিআই) ১১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভারতের এ মহাকাশবিজ্ঞানীর সঙ্গে মতবিনিময়ের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে আবদুল কালাম তার জীবনের স্মৃতিচারণার মধ্য দিয়ে তরুণদের উজ্জীবিত করেন। তিনি বলেন, কবি জালালউদ্দিন রুমির কবিতা তার মধ্যে বুনে দিয়েছিল স্বপ্নের বীজ। ওই কবিতা তিনি তরুণদের আবৃত্তি করে শোনান। এরপর অংশ নেন প্রশ্নোত্তর পর্বে।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত। স্বাগত বক্তব্য দেন এমসিসিআইয়ের সভাপতি রোকেয়া আফজাল রহমান। এরপর ভারতের মিসাইলম্যান খ্যাত রাষ্ট্রপতিকে পরিচয় করিয়ে দেন এমসিসিআইয়ের সদস্য তাবিদ এম আউয়াল।
পারমাণবিক শক্তির কারণে ভারত ও পাকিস্তানের বিরাজমান উত্তেজনাকে একজন পরমাণুবিজ্ঞানী হিসেবে তিনি কীভাবে দেখেন? জানতে চাইলে আবদুল কালাম বলেন, আমার মনে হয়েছে, পারমাণবিক শক্তি তখন অমঙ্গলের, যখন তা মানব উন্নয়নের সব ক্ষেত্র ধ্বংসের কাজে ব্যবহার করা হয়।
তিনি বলেন, আমি মনে করি, যেসব দেশের পরমাণু অস্ত্র রয়েছে তাদের জন্য নিরস্ত্রীকরণের সময় এসেছে। ২০২৫ সালের মধ্যে পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা ৩০ শতাংশ কমাতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা অত্যন্ত ইতিবাচক।
তাই ভারত, পাকিস্তানসহ সব দেশের পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের পাশাপাশি পরমাণু অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব প্রতিষ্ঠায় একসঙ্গে কাজ করা উচিত।
তরুণদের জীবনের দর্শন কী হওয়া উচিত? এ প্রশ্নে আবদুল কালাম বলেন, আমি যা বলব তুমিও আমার সঙ্গে সঙ্গে তা উচ্চারণ করো। আমি অনেক বড় স্বপ্ন দেখব। ছোট লক্ষ্য থাকা অপরাধ। আমি অব্যাহতভাবে জ্ঞান আহরণ করে যাব। আমি সমস্যা সমাধানের অধিনায়ক হব। সমস্যার সমাধান করব। এভাবেই সফল হব। এটাই হবে আমার লক্ষ্য।
বক্তৃতার শুরুতে আবদুল কালাম তিনটি বিষয়ের কারণে বাংলাদেশ নিয়ে তার মুগ্ধতার কথা জানান। নদীমাতৃক বাংলাদেশের বিস্তৃত জলরাশি, তৈরি পোশাকশিল্পের সাফল্য আর বিপুল সংখ্যক তরুণ জনগোষ্ঠী তাঁকে আকৃষ্ট করেছে বলে তিনি জানান। এর পাশাপাশি ইতিহাস, শিল্প-সংস্কৃতি আর সম্পদে দুই দেশের নৈকট্য নিয়ে তিনি কথা বলেন।
আবদুল কালাম বলেন, বিপুল জনগোষ্ঠী মানে বিপুল স্বপ্ন। এর পাশাপাশি থাকে সমস্যাও। তবে সমস্যাকে পুঁজি করতে হবে। একে জয়ের মধ্যে লুকিয়ে থাকে সাফল্যের সোপান। আর সফলতার জন্য বড় স্বপ্ন দেখা, জ্ঞান আহরণ আর কঠোর পরিশ্রম অপরিহার্য। তিনি জানান, প্রাথমিক স্কুলে পড়ার সময় তার স্কুলশিক্ষক আয়ার পাখির ছবি এঁকেছিলেন। সেই থেকে তার আকাশে ওড়ার স্বপ্নের শুরু। বৈমানিক তিনি হতে পারেননি, তবে মহাকাশ জয় করেছেন।
তিনি আরো বলেন, সবাইকে অনেক বড় স্বপ্ন দেখতে হবে। ভাবতে হবে আমাকে যেন মানুষ মনে রাখবে। কিন্তু মানুষ কেন মনে রাখবে, সেটি ঠিক করতে হবে। বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সবাই তাঁকে মনে রেখেছে। এভাবেই সবাইকে স্বপ্ন দেখার পাশাপাশি তা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করতে হবে।
প্রসঙ্গত, বুধবার ছিল আবদুল কালামের ৮৩তম জন্মদিন। সঞ্চালক আইনুন নিশাত এ জন্য ভারতের রাষ্ট্রপতিকে জন্মদিনের বিলম্বিত শুভেচ্ছা জানান।
আইনুন নিশাত বলেন, বৈমানিক হওয়ার লক্ষ্য থাকলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচিত হতে পারেননি আবদুল কালাম। তবে এটাকে শাপে বর ধরা উচিত। কারণ সেটি ঘটলে পৃথিবী এমন একজন সফল বিজ্ঞানীকে পেত না।
মন্তব্য চালু নেই