পরকীয়ার বলি হলেন রাজ্জাক
হাজারীগঞ্জের সিঙ্গাপুর প্রবাসির স্ত্রীর সাথে পরকীয়া জনিত কারনে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলা ছাত্রদল সভাপতি আব্দুর রাজ্জাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে দূর্বৃত্তরা। স্থাণীয় সুত্র ও পুলিশ এমন ধারণা করছে। নিহত রাজ্জাক চরফ্যাশন সদর জিন্নাগড় ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের মোহাম্মদ হোসেন মিয়ার ছেলে।
গত শুক্রবার ঈদুল আযহার দিবাগত মধ্যরাতের পর শশীভূষণ থানার দূর্গম হাজারীগঞ্জের বেড়িবাঁধে দুর্বৃত্তরা তাকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। স্থানীয়রা উদ্ধার করে প্রথমে চরফ্যাশন হাসপাতাল এবং পরে ভোলা সদর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানাযায়, শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টায় রাতের খাবার খেয়ে ১০/১২ জন বন্ধুর সঙ্গে হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নে দাওয়াতে যান । রাত আনুমানিক ২টার দিকে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা তার উপরে হামলা চালায়। হামলায় গুরুতর আহত রাজ্জাক রাস্তার পড়ে থাকার সংবাদ পেয়ে আত্মীয় স্বজনরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং স্থানীয়দের সহযোগীতায় তাকে উদ্ধার করে রাত পৌনে তিনটায় চরফ্যাশন হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
অবস্থার গুরুতর দেখে তাকে (রাজ্জাক) তাৎণিক ভোলা সদর হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে বলে চরফ্যাশন হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. তন্ময় কর জানান।
চরফ্যাশন হাসপাতাল থেকে ভোলা সদর হাসপাতালে পৌছলে ভোর ৫টায় কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ভোলা সদর হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে শনিবার রাত সাড়ে ১০টায় জিন্নাগড়ের ৩ নং ওয়ার্ডের পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।
রাজনৈতিক কারণে রাজ্জাককে হত্যা করা হয়েছে বলে তার বাবা মো. হোসেন মিয়া দাবী করেছেন। উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক মোতাহার হোসেন আলমগীর মালতিয়া অভিযোগ করেছেন, হাজারীগঞ্জের স্থানীয় ছাত্রলীগ-যুবলীগ কর্মীরা রাজ্জাককে নির্মম ভাবে হত্যা করেছে। তারা এই হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে খুনিদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান।
এদিকে রাজ্জাক হত্যা নিয়ে পরকীয়া, মাদক , সহ বিভিন্ন বিষয়ে রাজনৈতিক অঙ্গণ থেকে সাধারন মানুষের মধ্যে নানান প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। তার বন্ধুদের ও প্রবাসীর স্ত্রীর ভাই ও তার চাচাতো দের নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, জনৈক সিঙ্গাপুর প্রবাসীর স্ত্রীর সাথে পরকীয়া সম্পর্কের টানে রাজ্জাক নিয়মিত হাজারীগঞ্জের চেয়ারম্যান বাজার এলাকায় রাতে দীর্ঘ আড্ডায় থাকতেন।
এই আড্ডার সাথে পরকীয়া ছাড়াও মাদকের যোগসূত্র থাকতে পারে। ঘটনার রাতে পৈত্রিক বাড়ি থেকে যে ১০/১২ জন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে রাজ্জাক হাজারীগঞ্জের উদ্দেশ্যে বের হন, তাদের মধ্যে পরকীয়া প্রেমিকার আপন ভাই এবং চাচাতো ভাইও ছিল। পুলিশের ধারনা মাদক এবং পরকীয়া প্রেমঘটিত কারণে রাজ্জাক খুন হতে পারেন।
পুলিশ জানায়, নিহত রাজ্জাক চরফ্যাশন পৌরসভার হারুন কমিশনার ও চরফ্যাশন বাজার ব্যবসায়ী ুদিরাম হত্যা মামলার প্রধান আসামী ছিলেন।
এ ছাড়াও তার বিরুদ্বে চরফ্যাশন থানায় ১২টি মামলা ছিল। মামলাগুলো হচ্ছে- নং ১৩ তাং ২২.০৯.৯৮, নং ১১ তাং ০৯.১০.৯৮ইং, নং ১৩ তাং ১০.১০.৯৮ ইং, নং ১২ তাং ১১.০৫.২০০১ইং, নং ৬ তাং ১৫.০৭.২০০১ইং, নং ০৭তাং ১৪.০১.২০০৪ইং, নং ১৩ তাং ২২.১১.২০০৫ইং, নং ২১ তাং ২০.০৭.২০০৭ ইং, নং ২১ তাং ৩১.০৫.২০১৩ ইং, নং ২৪ তাং ২১.০৬.২০১২ইং, নং ০৯তাং ০৯.০১.২০০৭ইং।
এছাড়া চারদলীয় জোট সরকারের শুরুতে চরফ্যাশনের হিন্দুগ্রামে তার নেতৃত্বে সংখ্যালঘুদের বাড়িতে লুট ও ধর্ষণের অসংখ্য ঘটনা ঘটে। এসময় গণধর্ষণে নিহত হয় জিন্নাগড়ের দাসকান্দি গ্রামের প্রিয়বালা, নীল কলমের উজ্বালা ও শেফালী। এসব ঘটনায় রাজ্জাককে প্রধান আসামী করে এজাহার দিলেও তৎকালিন প্রশাসন কোন মামলা নেয়নি বলে তিগ্রস্থ পরিবারের অভিযোগ আছে।
এদিকে রোববার দুপুরে এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত নিহতের পরিবারের পথেকে কোন লিখিত এজাহার না পাওয়ার কথা জানিয়ে শশীভূষণ থানার অফিসার ইন চার্জ সামসুল আরেফিন বলেছেন, খুনের সম্ভাব্য সব কারণগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে ।
মন্তব্য চালু নেই