পদ্মা সেতুতে গাড়ি চলবে ১৮ সালে
বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু নির্মাণে মাটি পরীক্ষা ও সার্ভে কার্যক্রম শুরু করেছে। এরইমধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড মূল সেতুর অবকাঠামো নির্মাণে প্রাথমিক কাজের জন্য মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া চন্দ্রেরবাড়ি এলাকায় ৫৯ হেক্টর জমি সেতু কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বুঝে নিয়েছে।
সেখানে এ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের আবাসন, গবেষণা ও নির্মাণ কাজের সরঞ্জামাদি রাখার জন্য শেড তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এসব কাজের মধ্য দিয়ে মূলত পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো নির্মাণ কাজের সূচনা করেছে।
গত ১৭ জুন সরকারের সঙ্গে এ সেতু নির্মাণে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার ১১ দিনের পর থেকে সেতু নির্মাণস্থল নিয়ন্ত্রণে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সেতু নির্মাণকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
তবে সেতুর অপর প্রান্ত শরীয়তপুরের জাজিরায় প্রতিষ্ঠান কোনো ধরনের কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। অভিযোগ রয়েছে, ডিমে তালে চলছে পদ্মা সেতুর সংযোগ স্থাপনে দুটি অ্যাপ্রোস সড়ক নির্মাণ কাজ। লৌহজংয়ে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ মাওয়া সংযোগ সড়ক এবং শিবচর ও জাজিরা উপজেলায় প্রায় সাড়ে ১২ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণে গুটিকয়েক শ্রমিক কাজ করছে বলে স্থানীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে।
তবে ভারি যন্ত্রপাতির সহযোগিতায় বালু-মাটি ভরাটের কাজ চলছে। গত ছয় মাসে এ দুই সড়কে মাটি ফেলার কাজ হয়েছে গড়ে ২৫ ভাগ। তবে সেতু বিভাগের দাবি মাটি ভরাট কাজের অগ্রগতি আরও বেশি হবে।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের পথে দ্রুত সব কাজ এগিয়ে চলছে। শুধু দেশেই নয় পদ্মা সেতুর কাজ চলছে এখন চীন, সিঙ্গাপুর ও জার্মানিতে। এসব দেশে নির্মিত অংশগুলো জাহাজে করে এনে মাওয়ায় স্থাপন করা হবে।’
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘শিডিউল অনুযায়ী সব চলছে। পদ্মা সেতু এখন দৃশ্যমান বাস্তবতা। এখন আর এটা কোনো স্বপ্ন নয়। টেকনিয়েশানসহ সেতু তৈরিতে দক্ষ শতাধিক চীনা নাগরিক পদ্মা সেতুর কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। মাটি পরীক্ষার কাজও দ্রুত এগিয়ে চলেছে।’
গত ১০ নভেম্বর নদী শাসনের চুক্তি হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘সবকিছু মিলিয়ে আগামী ২০১৮ সালের মধ্যে দেশের সর্ববৃহৎ এই সেতু চলাচলের উপযোগী হবে। সেতু নিমার্ণের স্বার্থে মাওয়াঘাট শিমুলিয়ায় স্থানান্তরও করা হচ্ছে।’
সেতু বিভাগ দাবি করেছে পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নে এ পর্যন্ত ২৫ শতাংশ অগ্রগতি অর্জন করেছে। গত মাস পর্যন্ত এই অগ্রগতি দেখানো হয়।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্রধান অংশগুলো হচ্ছে- মূল সেতু নির্মাণ, নদীশাসন, জাজিরা ও মাওয়া থেকে সেতু পর্যন্ত সংযোগ সেতু নির্মাণ।
প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো: শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আশা করছি মূল সেতুর কাজ খুব কম সময়ের মধ্যেই শুরু করতে পারবো। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এরইমধ্যে নির্মাণসামগ্রী কিনে মাওয়া পয়েন্টে রাখা হয়েছে এবং এখনও কিছু যন্ত্রপাতি চট্টগ্রাম বন্দরে রয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘জার্মানিতে তৈরি নদী খননের প্রধান যন্ত্রটি সমুদ্রপথে বাংলাদেশে আনা হবে। অর্থনৈতিক ব্যাপারে পদ্মা সেতু প্রকল্পে ২৩ শতাংশ ও বাস্তবায়নের ব্যাপারে ১৫ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। তবে অবশ্যই আগামী চার বছরের মধ্যেই পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করা সম্ভব হবে।’
গত তিন বছর দেরি হওয়ার কারণে এই সেতুর নির্মাণব্যয় ৪ হাজার কোটি টাকা থেকে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকায়। প্রকল্পের প্রযুক্তিগত মূল্যায়ন কমিটি ৩৩১ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে কন্সট্রাকসন সুপারভিসন কনসালটেন্ট (সিএসসি) এবং নদী শাসনের জন্য কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে কর্পোরেশনকে অনুমোদন দিয়েছে। সরকার ইতোমধ্যেই চলতি অর্থ বছরে বাজেটে প্রদ্মা সেতুর প্রকল্পের প্রথম কিস্তি হিসেবে আট হাজার ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে।
উল্লেখ্য, পদ্মা সেতু নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ করে বিশ্ব ব্যাংক আপত্তি দেওয়ায় প্রকল্প বাস্তবায়ন তিন বছর পিছিয়ে গেছে। সরকার নিজস্ব অর্থায়নেই এই প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিলেও দেরি হওয়ার কারণে এই সেতুর নির্মাণব্যয় চার হাজার কোটি টাকা থেকে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকায়। তারপরও সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা আশা করছেন, ২০১৮ সাল নাগাদ বহুল প্রতিক্ষিত পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।
জানা গেছে, পদ্মা নদীর ওপরে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ দ্বিতল সেতুর উপরতলায় ৪ লেন বিশিষ্ট সড়ক পথ এবং নিচের তলায় রেলপথ থাকবে। এছাড়া সেতুতে গ্যাস পাইপলাইন, অপটিক ফাইবার ক্যাবল এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন থাকবে। সেতুর আনুষঙ্গিক অবকাঠামোর মধ্যে আরও থাকবে দুটি টোল প্লাজা, দুটি সার্ভিস এরিয়া, ৬টি ছোট-বড় সেতু, ১৪টি কালভার্ট, ৭টি আন্ডারপাসসহ উভয় পাড়ে ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ৪ লেন বিশিষ্ট অ্যাপ্রোচ রোড থাকবে।
মন্তব্য চালু নেই