পদ্মা পাড়ি দিতে শিমুলিয়ায় ঘরমুখো মানুষের ঢল বেড়েছে : দুর্ভোগে যাত্রীরা
নাসরিন আক্তার, মুন্সীগঞ্জ থেকে : ঈদের ছুটি শেষে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম প্রবেশদ্বার শিমুলিয়া ফেরিঘাটে রাজধানী থেকে ছেড়ে আসা ঘরমুখো মানুষের ঢল বেড়েই চলেছে। মঙ্গলবার ভোররাত থেকে পদ্মা পাড়ি দিতে এসব ঘরমুখো মানুষেরা নাঁড়ির টানে ছুটে চলেছেন। এ সময় ছিল ফেরি পারাপারের যানবাহনেরও বাড়তি চাপ। গণপরিবহনেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে ছিল না কোন বাধা। তবে পর্যাপ্ত ফেরি ও কর্তৃপক্ষের দিনভর তদারকিতে দুপুর ১টার পর শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুটের ফেরির ৩টি কাউন্টারে যানবাহনের চাপ একেবারেই কমে যায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সকালের দিকে শিমুলিয়ার ৩টি ফেরিঘাটে ফেরি পারাপারের যানবাহনের দীর্ঘ লাইন। ভোররাত থেকেই ফেরিঘাটে ফেরি পারাপারের অপেক্ষায় যাত্রীবাহী বাড়তি পরিবহনের চাপ দেখা দেওয়ায় ৩টি ঘাটে ঘন্টার পর ঘন্টাব্যাপী আটকে ছিল ছোট ছোট গাড়ী, বাসসহ ৪শতাধিক যানবাহন। বেলা সাড়ে ১২টায় ঘাটে শুধুমাত্র অর্ধশত ছোট গাড়ি ছাড়া যাত্রীবাহী কোন যানবাহন ছিল না বলে বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়া ঘাটের কাউন্টার স্টাফ মো. রফিক জানান। এ সময় ঘন্টার পর ঘন্টা ফেরিঘাটে আটকে থেকে চরম দুর্ভোগে পড়েন ঘরমুখো ফেরিযাত্রীরা। এরআগে সকাল ৬টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত ছোটবড় মিলিয়ে সর্বমোট ৬-৭শত যানবাহন পারাপারে সক্ষম হয় বলে জানান মাওয়া বিআইডব্লিউটিসির ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) শেখর চন্দ্র রায়।
এদিকে ফেরি বহরে মোট ১৮টি ফেরি চলাচল করলেও শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুটের মূল পদ্মায় স্রোতের কারণে ফেরিসহ সকল নৌযান চলাচল কিছুটা বিঘিœত হচ্ছে।
এদিকে, সড়কপথে উপচে পড়া ভিড়ের কারণে ঢাকা শিমুলিয়া মহাসড়কে পরিবহন সঙ্কটে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় ঘরমুখো যাত্রীদের। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে গণপরিবহনেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়। তবুও আগেভাগেই পদ্মা নদী পাড় হওয়ার আশায় বাড়তি ভাড়া গুনছেন শেষ মুহূর্তের বাড়ী ফেরা এসব যাত্রী। যাত্রীদের তুলনায় পরিবহন সঙ্কটের কারণে ঢাকা শিমুলিয়া রুটের সিটিং সার্ভিস ও লোকাল পরিবহনগুলোতে যাত্রীরা নিরুপায় হয়ে দাঁড়িয়েও শিমুলিয়া ঘাটের উদ্দেশ্যে আসছিল।এ সময় যাত্রীদের চাপের সুযোগে পরিবহন মালিকরা নির্ধারিত বাস ভাড়া ৭০টাকার স্থলে ১০০টাকা আদায় করা হয় বলে একাধিক যাত্রীরা অভিযোগ করেন ।
অন্যদিকে, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি ও শিমুলিয়া-মাঝিকান্দি নৌপথে লঞ্চ ঘাটে ছিল যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। লঞ্চে আগে ওঠার প্রতিযোগিতায় কিছু কিছু ঘরমুখো যাত্রীরা নিজেরাই অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে লঞ্চে উঠছেন। তবে অতিরিক্ত চাপের কারণে এ অবস্থা দেখা দিয়েছে বলে খোদ কর্তৃপক্ষ ও লঞ্চমালিকরাই স্বীকার করছেন। কর্তৃপক্ষের দাবি, যাত্রীচাপ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী দেখা দেওয়ায় অতিরিক্ত যাত্রীচাপের কারণে কিছু কিছু যাত্রীরা কোন বাধাই না মেনে লঞ্চের নীচে না গিয়ে লঞ্চের সামনে অবস্থান করছেন। তখন এসব লঞ্চগুলো অভারলোডিং মনে হচ্ছে। ওভারলোডিং ঠেকাতে বিআইডব্লিউটিএ, নৌপুলিশসহ অন্যান্য মোবাইল টিম ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সিবোট কাউন্টারে আর পন্টুনে ছিল উপচে পড়া ভীড়।তবে এসব যাত্রীদের লাইফ জ্যাকেট পড়িয়ে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছেন সিবোট যাত্রীরা।
শিমুলিয়া নদীবন্দরের সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) সাহাদত হোসেন জানান, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত লঞ্চঘাটে যাত্রীচাপ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী দেখা দেয়। এ রুটে ৮৭টি লঞ্চ চলাচল করলেও চলমান এ আবহাওয়ায় লঞ্চ চলাচলে কোন সমস্যা হচ্ছে না। অভারলোডিং ঠেকাতে এখানে ডিজি সিপিংসহ নৌপুলিশ, সেনাবাহিনীর সদস্যরা সর্বাত্মক তদারকি চালাচ্ছে বলে তিনি আরো জানান।
মন্তব্য চালু নেই