পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা আর দুই বছর

পঞ্চম শ্রেণির বদলে প্রাথমিক শিক্ষা হচ্ছে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। আগামী মে-জুন থেকে এটি বাস্তবায়নের কাজ পুরোদমে শুরু হবে। তবে অভিভাবক ও শিক্ষাবিদদের দাবি থাকলেও এখনই পঞ্চম শ্রেণিতে প্রাথমিক সমাপনী বন্ধ হচ্ছে না।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, পঞ্চম শ্রেণিতে সমাপনী পরীক্ষা আরও দুই বছর চালু থাকতে পারে। তবে প্রাথমিকের স্তর অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীত করার সকল কার্যক্রম দ্রুত শেষ হয়ে গেলে ২০১৮ সালের আগেই পঞ্চম শ্রেণি সমাপনী পরীক্ষা তুলে দেয়া হতে পারে।

প্রাথমিক সমাপনী বাতিল হলেও এই পর্যায়ে বিকল্প ব্যবস্থা রাখার কথা ভাবা হচ্ছে। প্রতিযোগিতার বিষয়টি মাথায় রেখে পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি চালু রাখার সুপারিশ করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের নেতৃত্বাধীন কমিটি।

জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীত করার সব প্রক্রিয়া শেষে হলে পঞ্চম শ্রেণি শেষে সমাপনী পরীক্ষা উঠে যাবে। কারণ একই স্তরে দুটি পাবলিক পরীক্ষা থাকা উচিত নয়।’

এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ‘সমাপনী উঠে গেলেও আমরা পঞ্চম শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভাল ফলধারীদের বৃত্তির সুপারিশ করেছি। এটি চালু থাকলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভাল ফল করার প্রতিযোগিতা থাকবে।’

গত ৯ মার্চ এটি বাস্তবায়ন নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষামন্ত্রলালয়ে মধ্যে বৈঠক হয়। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার সব বিষয় দেখভাল করবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এই সিদ্ধান্তের ফলে চার হাজার ৩৬৫টি বেসরকারি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলে যাবে।

এই সিদ্ধান্তের ফলে নিম্ন মাধ্যমিক পর্যায় অর্থাৎ ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদানের অনুমতি, এরপর একাডেমিক স্বীকৃতি, পরে এসব প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির (শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার সরকারি অংশ প্রদান) সিদ্ধান্ত নেবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত শ্রেণি খোলা কিংবা বিষয় খোলার প্রয়োজন হলে তার অনুমতিও দেবে তারা। এত দিন পর্যন্ত এসব সিদ্ধান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন শিক্ষা বোর্ডগুলো দিত।

নতুন সিদ্ধান্তের ফলে প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগের প্রয়োজনীয় কার্যক্রমও চালাবে করবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে নিম্ন মাধ্যমিক পর্যায়ে একাডেমিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে এক হাজার ৩৮টি। আর পাঠদানের অনুমতিপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা হচ্ছে তিন হাজার ৩২৭। নতুন করে পাঠদানের অনুমতির জন্য আবেদন করেছে ৯২টি এবং একাডেমিক স্বীকৃতির জন্য আবেদন করেছে ৩২টি প্রতিষ্ঠান। নতুন সিদ্ধান্তের ফলে একাডেমিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ও পাঠদানের অনুমতিপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলে যাবে। যেসব প্রতিষ্ঠান নতুন করে একাডেমিক স্বীকৃতি ও পাঠদানের অনুমতির জন্য আবেদন করেছে তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্তও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় দেবে।

গত ছয় মাস ধরে একাডেমিক স্বীকৃতি ও পাঠদানের অনুমতি স্থগিত রেখেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

২০১০ সালে প্রণীত জাতীয় শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে, প্রাথমিক শিক্ষার মেয়াদ পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে আট বছর করা হবে; অর্থাৎ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা হবে। এটি করতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের একটি হলো অবকাঠামোগত আবশ্যকতা মেটানো এবং প্রয়োজনীয়সংখ্যক উপযুক্ত শিক্ষকের ব্যবস্থা করা। এ ছাড়া ২০১১-১২ অর্থবছর থেকে প্রাথমিক শিক্ষায় ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণিকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য নতুন পাঠ্যক্রম, পাঠ্যপুস্তক ও শিক্ষক-নির্দেশিকা প্রণয়ন করতে হবে। ২০১৮ সালের মধ্যে ছেলেমেয়ে, আর্থসামাজিক অবস্থা ও জাতি-বর্ণ নির্বিশেষে সব শিশুর জন্য পর্যায়ক্রমে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার কথাও বলা হয়েছে।

শিক্ষানীতি অনুযায়ী অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডকে (এনসিটিবি) নতুন করে প্রাথমিকের উপযোগী করে পাঠ্যক্রম প্রণয়নের তাগিদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর ফলে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে বলে জানা গেছে। জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত নতুন পাঠ্যবই প্রণয়নের কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে।

জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ অনুসারে প্রাথমিক শিক্ষা আট বছর মেয়াদি করার কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৩ শিক্ষাবর্ষে। ওই বছর ৫০৩টি উপজেলা বা থানায় ৫০৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণি চালু করার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত চালু হয় ৫৯৬টি বিদ্যালয়ে। পর্যায়ক্রমে সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণি খোলার মাধ্যমে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোয় এ বছর অষ্টম শ্রেণি খোলা হয়েছে। এগুলো থেকে শিক্ষার্থীরা গত জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানগুলো প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু পরীক্ষার অনুমতি নিতে হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন শিক্ষা বোর্ডগুলো থেকে। এ নিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয় সংশ্লিষ্টদের।

২০১৪ ও ২০১৫ সালে আরো ১৭৩টি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সম্প্রসারণ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আসন্ন জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে। তবে যথারীতি বিভিন্ন বোর্ড এ পরীক্ষাটি নেবে।



মন্তব্য চালু নেই