নয়া নগরপিতার কাঁধে নানান চ্যালেঞ্জ

প্রায় ২ কোটি মানুষের বসবাস রাজধানী ঢাকা নানা সমস্যায় জর্জরিত। ৪০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী এ শহরটি এখন বিশ্বের বাস অনুপযোগী শহরগুলোর মধ্যে দ্বিতীয়। দিনদিন এর বাসিন্দাদের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে নাগরিক ভোগান্তিও। জনবহুল এ নগরটির সেবার মান বৃদ্ধি করতে এর আগে ২০১১ সালের ২৯ নভেম্বর দুই সিটি করপোরেশনকে বিভক্ত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচিত প্রতিনিধি না থাকায় সমস্যার পাল্লা দিনদিন ভারী হচ্ছে। এজন্য তারা আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকে দায়ী করছেন, সেই সঙ্গে দায়ী করছেন দক্ষ বিচক্ষণ ও স্বচ্ছ নগরপিতার অভাবকেও।

দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর গত মঙ্গলবার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতায় এসেছেন নতুন দুই মেয়র। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে জয়ী হয়েছেন প্রয়াত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ছেলে সাঈদ খোকন। আর উত্তর সিটি করপোরেশনে বিজয়ী হয়েছেন ব্যবসায়ী নেতা আনিসুল হক। জনগণের ভোটে বিজয়ী হওয়ার পর তাদের মুখে যেমন হাসি ফুটেছে ঠিক সেই হাসি জনগণের মুখে ফোটানেই এখন বড় চ্যালেঞ্জ এ দুই নগরপিতার। এজন্য তাদের দু’জনকেই ১২টি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে।

এগুলোর মধ্যে রয়েছে- নগর সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়, আর্থিক সঙ্কট, দুর্নীতি, বেদখল সম্পত্তি উদ্ধার, কমন ইউটিলিটি টানেল নির্মাণ, যানজট নিরসন, রিকশা নিয়ন্ত্রণ, রাস্তায় ময়লার কনটেইনার, ভৌত অবকাঠামো ঠিক করা, খেলার মাঠ ও পার্কের উন্নয়ন ও দখলমুক্ত করা এবং নগরবাসীকে মশা আর মাদকের অভিশাপ থেকে মুক্তি।

সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়:

রাজধানী ঢাকায় প্রায় ২০টি মন্ত্রণালয়ের অধীন ৫৩টির অধিক প্রতিষ্ঠান সেবা দিয়ে থাকে। অথচ উন্নত বিশ্বে এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয়ের জন্য নগর সরকার রয়েছে। রাজধানী ঢাকায় এ ব্যবস্থাটি না থাকায় যে কেউ যত্রতত্র সেবা দিতে গিয়ে সিটি করপোরেশনের রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন সম্পদের ক্ষতি করে থাকে। যার ক্ষতিপূরণ বহন করতে হয় খোদ সিটি করপোরেশনকেই।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক্ষেত্রে প্রয়োজন সরকারের সঙ্গে সমন্বয়। দুই সিটি করপোরেশনের সরকার সমর্থিত নতুন মেয়র আনিসুল হক ও সাঈদ খোকনের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি অনেকটা সহজ হবে বলে মনে করছেন অনেকেই। কারণ সরকার দলীয় হওয়ায় সরকারের সঙ্গে তাদের সক্ষতাও থাকবে। তবে বিষয়গুলো তারা সহজে মোকাবেলা করতে পারলেও নির্ভর করবে অন্যসব দপ্তরগুলোর সহনশীলতার উপর।

এর বিকল্পও রয়েছে। আর তা হচ্ছে নগর সরকার গঠন করা। এ বিষয়ে ১৯৯৪ সালে সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফ, ২০০২ সালে সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী বেশ কয়েক বার উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু সরকারের সহযোগিতা না থাকায় তারা এটি প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হন। নতুন দুই মেয়রও এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় প্রতিষ্ঠা করতে নগরসরকার প্রতিষ্ঠায় কতটুকু সার্থক হবেন তাই এখন দেখার বিষয়।

সেন্টার ফর আরবান স্ট্যাডিজ, প্রশিকা, টিআইবিসহ বেশকিছু সংস্থার জরিপে দেখা গেছে- সিটি করপোরেশন, ডেসা, ঢাকা ওয়াসা ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশসহ নগর সেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবার মান নিয়ে খুবই অসন্তোষ ও হতাশা রয়েছে। সমন্বয়, মূল্যায়ন ও মনিটরিং কাজে কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান নিয়োজিত নেই। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে জনমনে অনেক প্রশ্নও আছে। সব ধরনের নগর সেবাদানকারী সংস্থার সমন্বয় নগর সরকারের প্রধান অর্থাৎ মেয়রের হাতে থাকলে এর সমাধান অনেকটাই সম্ভব বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

নগর বিশেষজ্ঞ স্থপতি ইকবাল হাবীব বলেন, ‘এক্ষেত্রে প্রয়োজন সরকারের সঙ্গে সমন্বয়ের। নবনির্বাচিত মেয়ররা যদি সমন্বয় না করেন তাহলে সেবার মান বাড়বে না। এক্ষেত্রে মেয়রকে কঠোর হতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘উন্নত দেশে নগরসেবা প্রদানে সমন্বয়ের জন্য নগরব্যবস্থা চালু রয়েছে। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে মেট্রোপলিটন সরকার। পূর্বের মেয়রদের মতো যদি নতুনরাও বিষয়টি নিয়ে কাজ করেন এবং সরকারের সদিচ্ছা থাকে তাহলে খুব সহজেই নগর সরকার স্থাপন করা সম্ভব।’

জলাবদ্ধতা:

খুব সামান্য বৃষ্টিতেই রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এ জন্য নগরপরিকল্পনাবিদরা ড্রেনেজ ব্যবস্থাকেই দায়ী করেন। তারা বলছেন নির্বাচিত মেয়রকে প্রথমে জলাবদ্ধতাকেই প্রধান্য দিতে হবে। তারা এ বিষয়টিকে রাজধানীর ঢাকার সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে উল্লেখ করেন।

এ বিষয়ে বিআইডাব্লিউটিএ’র সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী, পবার নির্বাহী সদস্য ও নগর বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আমাদের দেশে মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত একাধারে বৃষ্টি হয়। এতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এই নগরীর বিভিন্ন স্থানে পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। তাছাড়া যে স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় সেখানে পাম্প স্থাপনের মাধ্যমেও জলাবদ্ধতা দূর করা যায়।’

তিনি বলেন, ‘অপরিকল্পতি নগরায়নের ফলে এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। নগরীর পরিকল্পনার বিরাট ভূল রয়েছে। ভূপ্রাকৃতিক বিবেচনায় আমরা নগরায়ন করিনি। আমরা যেহেতু রাজধানীর খাল ও জলাশয়গুলো খেয়ে পেলেছি। তাই কোনো পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। এখন যেখানে পানি জন্মে সেখান থেকে পানি নিষ্কাশনের জন্য নিন্মগামী স্থান করে দিতে হবে। অপরিক্ল্পীত রাস্তাঘাট ও দালানকোটা ভেঙে পানি নিষ্কাশনের স্থান করতে না পারলে জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না।’

কমন ইউটিলিটি টানেল:

রাজধানী ঢাকায় বছরের প্রায় প্রতিটি দিনই কোনো না কোনো সরকারি সংস্থা সেবা দান করতে গিয়ে খোঁড়াখুঁড়ি করে থাকে। এ জন্য নগরীর রাস্তায় তীব্র যানজট, সড়কে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়। কিন্তু উন্নত বিশ্বে ইউটিলিটি সার্ভিসের লাইন থাকে একটি কমন লাইনে। যা থাকে রাস্তার নীচে। অথচ রাজধানী ঢাকায় এক একটি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের এক একটি লাইন থাকায় এতে কোনো প্রকার ত্রুটি দেখা দিলে যত্রতত্র খোঁড়াখুঁড়ি কারতে হয়। ফলে বাড়ে নগরবাসীর দুর্ভোগ।

তবে সম্প্রতি বিষয়টি থেকে মুক্তি পেতে উদ্যোগ দিয়েছে সরকার। এজন্য রাজধানীতে কমন ইউটিলিটি টানেল (সেবা সংস্থাগুলোর লাইন সমন্বিতভাবে স্থাপন) নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে চলতি বছরের প্রথম দিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক মো. আশরাফ উদ্দিনের সই করা এক চিঠিতে বিষয়টি তুলে ধরা হয়। কিন্তু এতেও কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতাকেই বাড়ানো হচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

আর্থিক সঙ্কট:

সেবার মান বাড়াতে সিটি করপোরেশনকে বিভক্ত করা হলেও বাড়েনি অর্থনৈতিক উন্নয়ন। বর্তমানে দুই সিটি করপোরেশন প্রায় ৩০০ কোটি টাকারও বেশি শুধু ঠিকাদারদের কাছেই দেনা রয়েছে। এক্ষেত্রে উত্তরের চেয়ে দক্ষিণেই বেশি। আর এ সমস্যাটি মোকাবেলা করতে হবে দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকনকেই। যা তার কাছে অন্যতম চ্যালেঞ্জ।

লুটপাত ও দুর্নীতির মহোৎসব:

সরকারদলীয় লোকজন আর কিছু কর্মকর্তার লাগামহীন দুর্নীতির কবলে পড়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। টেন্ডার সন্ত্রাস, নিয়োগ বাণিজ্য, অবৈধ বিলবোর্ড বাণিজ্যের মাধ্যমে লুটপাট করছে সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু সবকিছু ছাড়িয়ে গেছে সিটি করপোরেশনের মার্কেট দখল। আবার কর্মকর্তা-কর্মচারী আর দখলবাজদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে রাস্তা পর্যন্ত বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় একজন নির্বাচিত মেয়রের পক্ষে দলীয় নেতাকর্মী আর দলবাজ কর্মকর্তাদের চাপে দখলবাজি ও লুটপাট বন্ধ করা কঠিন হয়ে পড়বে।

যেমন রাজধানীর নীলক্ষেতে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জমি দখল করে রাতারাতি তিনতলা ভবন তৈরি করে ফেলেছে একটি চক্র। একই কায়দায় খেলার মাঠ, বাগান এমনকি রাস্তাও বরাদ্দ দিয়েছে করপোরেশনের দর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা। কর্মকর্তাদের চরম দুর্নীতির কারণে দুই সিটি করপোরেশন এখন পরিণত হয়েছে দুর্নীতির আখড়ায়। দুর্নীতি দমন কমিশনেও করপোরেশনের একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রয়েছে মামলা।

এ বিষয়ে দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ‘আমার স্লোগানগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে দল যার যার মেয়র সবার। সিটি করপোরেশনের সব সমস্যাগুলো সমাধান করেই নগরবাসীর জন্য আমার জীবন উৎসর্গ করাই আমার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। অন্যসব কিছুকে আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছি না।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচিত প্রতিনিধিদের একটা বদনাম থাকে। দলবাজি। দলবাজি রুখে সিটি করপোরেশনকে আমি একটি আদর্শীক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করবো।’

যানজট:

ঘর থেকে বের হলেই যানজটে নাকাল রাজধানীবাসী। কখনো কখনো ১০ মিনিটের রাস্তা এক ঘণ্টায় পার হওয়াও দুষ্কর হয়ে পড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, একজন ঢাকাবাসী তার জীবনের ৭ বছর বয়সের সমান সময় আটকে থাকেন যানজটে। এর কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরিকল্পিত নগরায়ন, অতিরিক্ত রিকশা, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যত্রতত্র খোঁড়াখুঁড়ি, প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল রাস্তা, সরু রাস্তা, ফুটপাত দখল ও ভাঙা রাস্তা।

ফলে নতুন রাস্তা তৈরি, ভাঙা রাস্তা মেরামত ও সরু রাস্তা বড় করার মতো কাজেও হাত দিতে হবে নতুন মেয়রদের। কিন্তু এক্ষেত্রে মেয়রকে দখল হওয়া রাস্তা উদ্ধারে কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে।

রিকশা নিয়ন্ত্রণ:

জনসংখ্যার তুলনায় ছোট এই রাজধানীর বুকে রয়েছে প্রায় ১০ লক্ষাধিক রিকশা। নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রিকশার যানজটের অন্যতম কারণ এই রিকশা। অধিক সংখ্যক রিক্শার কারণে রাজধানী ঢাকা এখন গ্রিনেস বুকেও স্থান পেয়েছে। তবে অধিক সংখ্যক এই রিকশা নিয়ে চলছে বাণিজ্য। সরকার দল সমর্থিত একাধিক সংগঠন প্রতিমাসে এই রিকশা থেকে চাঁদাস্বরূপ আয় করে কোটি কোটি টাকা। কোনো কোনো সংগঠন লাইসেন্স দিয়েও বাণিজ্য করে থাকে। অথচ এই রিকশাগুলোর লাইসেন্স সিটি করপোরেশনের আওতায় আনলে সেই টাকাগুলো করপোরেশনের রাজস্ব খাতে জমা হতো। আর সেটি এখন নিয়ন্ত্রণে আনাই বড় চ্যালেঞ্জ মেয়রদের।

রাস্তা থেকে ময়লার কনটেইনার সরানো:

ঢাকাবাসী প্রতিদিন গড়ে ৬ লাখ টন ময়লা বা বর্জ্য উৎপাদন করে। এসব বর্জ্য রাখার জন্য সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সড়কের মোড়ে ৬৫০ ভ্রাম্যমাণ খোলা ডাস্টবিস রাখা হয়। এ কারণে দূষিত হয় পরিবেশ, রাস্তায় সৃষ্টি হয় যানজট। আর একটু বৃষ্টি হলে রাস্তায় জমে থাকা পানিতে ভাসতে থাকে ময়লা-আবর্জনা। অথচ নিয়মানুসারে, প্রতিদিনের আবর্জনা রাত ১২টার পর থেকে ভোরের মধ্যে অপসারণ করার কথা।

এ বিষয়ে উত্তর সিটি করপোরেশনে নবনির্বাচিত মেয়র আনিসুল হক বলেন, ‘সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সব সম্ভব। ঢাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে আধুনিকায়ন করা হবে। ফলে বর্জ্য নিয়ে নগরবাসীর আর কোনো অভিযোগ থাকবে না।’

ফুটপাত দখলমুক্ত করা:

রাজধানী ঢাকার প্রায় প্রতিটি ফুটপাতই এখন বেদখল। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি মাসে দুই সিটি এলাকার ফুটপাত থেকে তিনশ কোটি টাকা চাঁদা আদায় করে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সরকার সমর্থিত বিভিন্ন সংগঠন। এ অবস্থায় হকার্সদের ট্রেড লাইসেন্সের আওতায় এনে রাজস্ব আয় বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে সিটি করপোরেশন। তবে বিষয়টি বাস্তবায়নে মেয়রদেরকে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ এতোদিন ধরে যারা চাঁদা আদায় করছে তারা সহজেই সড়ে দাঁড়ানোর লোক নয়।

ভৌত কাঠামো আরেক চ্যালেঞ্জ:

দুই সিটি করপারেশনের একাধিক ওয়ার্ডে এখনো কোনো খেলার মাঠ, কমিউনিটি সেন্টার, পাঠাগার, শরীর চর্চা কেন্দ্র, মাতৃসদন, নগর হাসপাতাল, কলেজ, মহিলা কলেজ, জাদুঘর, নাট্যমঞ্চসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি নেই। এ ক্ষেত্রে দক্ষিণের চেয়ে উত্তর অনেকটাই পিছিয়ে।

সিটি করপোরেশনের নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দক্ষিণে দাতব্য চিকিৎসালয় ১৮টি, উত্তরে মাত্র ২টি। দক্ষিণে শরীরচর্চা কেন্দ্র ১৪, উত্তরে ২টি। দক্ষিণে পাঠাগার ৭টি, উত্তরে ২টি। দক্ষিণে কমিউনিটি সেন্টার ৩১টি, উত্তরে ৭টি। দক্ষিণে কোয়ার্টার ৭টি, উত্তরে ১টি। দক্ষিণে মাতৃসদন ৩টি, উত্তরে নেই। নগর হাসপাতাল দক্ষিণে ২টি, উত্তরে নেই। দক্ষিণে মহিলা কলেজ ১টি, উত্তরে শূন্য এবং দক্ষিণে জাদুঘর ও নাট্যমঞ্চ-২, উত্তর খালি।

সিটি করপোরেশন জানায়, এসব প্রতিষ্ঠান বাড়ানোর জন্য করপোরেশনের নিজস্ব কোনো জমি নেই। সে কারণেই নগরবাসীর চাহিদা থাকলেও নতুন করে নির্মাণের বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়া যাচ্ছে না।

১৭ মাঠ ও পার্ক বেদখল:

এমনিতেই দিন দিন ইট-পাথরে ভরে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকা। সে তুলনায় কোনো ফাঁকা জায়গা খালি পাওয়া যায় না। এরপর দুই সিটি করপোরেশনের আওতায় ৪৭টি খেলার মাঠ ১০ পার্ক থাকলেও ১৭টি খেলার মাঠ ও পার্ক বেদখল রয়েছে। সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর থেকে এর সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব হয়নি। উল্টো আরো বেদখল হয়েছে মাঠ ও পার্ক। এর বেশ কয়েকটির বিরুদ্ধে রয়েছে মামলা। তবে সিটি করপোরেশনের দুর্নীতিবাজ কিছু কর্মকর্তার কারণে একটি মামলায়ও করপোরেশন জয়ী হতে পারছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। নতুন দায়িত্বপ্রাপ্তরা বিষয়টি নিয়ে কতটুকু সফল হবেন তার দিকেই তাকিয়ে আছেন নগরবাসী।

মশা আর মাদকের অভিশাপ:

এতোদিন রাজধানী ঢাকাবাসীর প্রধান সমস্যা ছিল মশা। কিন্তু সম্প্রতি নগরীর ওয়ার্ড পরিক্রমা করতে গিয়ে দেখা গেছে, মশার পাশাপাশি মদকই নগরবাসীর জন্য এখন অভিশাপ। বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দিয়েও নগরবাসীকে মশা থেকে মুক্তি দেয়া যাচ্ছে না। আর বিনোদনের উল্লেখযোগ্য কোনো ব্যবস্থা না থাকায় যুব সমাজ মাদকের দিকে ঝুকছে। তাছাড়া হাত বাড়ালেই রাজধানীতে পাওয়া যায় মদক। তাই নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের অন্যতম চ্যালেঞ্জ হবে এই মশা ও মাদক নিয়ন্ত্রণ করা।

দীর্ঘদিন রাজধানীবাসী তার নগরপিতা অভাব হারে হারে টের পেয়েছে। তাই জমেছে অনেক আবদার। প্রথম থেকে সেই আবদার পূরণেই ব্যস্ত থাকতে হবে নতুন পিতাদের। আর নগরবাসীর এই চাওয়া-পাওয়ার হিসাব মিলাতে পারলেই তারা হবেন যোগ্য নগরপিতা।বাংলামেইল



মন্তব্য চালু নেই