নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘটে অচল নদীবন্দর

বাংলাদেশ নৌযান পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে দেশের নদীবন্দর থেকে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

ধর্মঘটের কারণে রাতে ঢাকার সদরঘাট থেকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে কোনো নৌযান ছেড়ে যায়নি। এমনকি কোনো যানবাহনও রাতে সদরঘাটে আসেনি।

মজুরি বৃদ্ধিসহ ১৫ দফা দাবিতে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন ও বাংলাদেশ জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকে বুধবার রাত ১২টা থেকে শুরু হয়েছে এই ধর্মঘট।

যাত্রীবাহী, পণ্যবাহী, কোস্টার, ট্যাংকার, বালুবাহী নৌযান, ড্রেজার, শ্যালো ট্যাংকারসহ সব ধরনের নৌযানের শ্রমিকরা এই কর্মবিরতিতে অংশ নিচ্ছেন বলে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাহ আলম ভূঁইয়া বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মবিরতি চলবে।

এদিকে ধর্মঘটের কারণে রাতে বরিশাল, চাঁদপুরসহ অন্যান্য রুটে কোনো নৌযান ছেড়ে যায়নি। তবে বরিশাল, পটুয়াখালীসহ অন্যান্য জায়গা থেকে ছেড়ে আসা লঞ্চগুলো সদরঘাটে পৌঁছে কর্মসূচিতে যোগ দেবে।

নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘটে ঘাটে লঞ্চ না থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। বিকল্প পথে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন অনেকে।

আন্দোলনকারীদের ১৫ দফার মধ্যে রয়েছে- নৌশ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকারি কর্মচারীদের মতো সুযোগ-সুবিধা দেওয়া, নৌপথে অবৈধ চাঁদাবাজি ও অবৈধ ইজারা বন্ধ করা, প্রত্যেক শ্রমিককে নিয়োগপত্র ও সার্ভিস বুক দেওয়া, নৌযান শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, কর্মস্থলে আহত শ্রমিকের চিকিৎসা ব্যয় ও চিকিৎসাকালে বেতন দেওয়া।

এসব দাবিতে কয়েক দফা ধর্মঘটের কর্মসূচি দিলেও সরকারের আশ্বাসে পরে আন্দোলন স্থগিত করে শ্রমিক সংগঠনগুলো। ফেডারেশনের সভাপতি শাহ আলম বলেন, ‘আমাদের শ্রমিকরা বর্তমানে ৪ হাজার ১০০ টাকা বেতন পায়। আমরা চাইছি, বর্তমান বাজারদর ও আনুষঙ্গিক খরচ বিবেচনা করে তা ৮ হাজার ২৫০ টাকা করা হোক।’

নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে চাঁদপুর নৌবন্দরে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। চাঁদপুর থেকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, খুলনা, ভোলাসহ কোনো রুটের কোনো লঞ্চ সকাল থেকে ছেড়ে যায়নি। আগে থেকে জানা না থাকায় যাত্রীদের সকালে ঘাটে এসে লঞ্চ না পেয়ে ফিরে যেতে দেখা যায়।

বরিশালে ধর্মঘট : সারাদেশের ন্যায় বরিশালেও চলছে নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘট। বুধবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে এ ধর্মঘট শুরু হয়েছে।

বরিশাল নৌবন্দরে সব ধরনের যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। বরিশাল লঞ্চ টার্মিনাল থেকে কোনো লঞ্চ ছেড়ে যায়নি। লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় অনেক যাত্রী টার্মিনালে এসে ফিরে যেতে দেখা গেছে।

চাঁদপুরে ধর্মঘট : নৌযান শ্রমিকদের ডাকা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে অচল হয়ে পড়েছে চাঁদপুর নৌবন্দর। ভোর থেকেই নৌপথে চাঁদপুর থেকে সকল রুটে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

নৌধর্মঘটের কারণে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই চাঁদপুর থেকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, ভোলাসহ অন্তত ১২টি রুটে যাত্রীবাহী লঞ্চসহ সকল ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

এমভি ঈগল লঞ্চ ও এমভি ময়ূর লঞ্চের মালিক প্রতিনিধি আলী আজগর জানান, নৌযান শ্রমিকরা তাদের বিভিন্ন দাবি আদায়ের জন্য ধর্মঘটের ডাক দেয়। ধর্মঘটের ব্যাপারে যাত্রীরা আগ থেকে কিছু জানায় অনেকেই ঘাটে এসে ফিরে যান।

চাঁদপুর নৌযান শ্রমিক লীগের সভাপতি বিপ্লব সরকার বলেন, ‘শুনেছি ঢাকায় মালিকদের সঙ্গে শ্রমিক নেতাদের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করা হচ্ছে। সমঝোতা হলে ধর্মঘট প্রত্যাহার হবে।

খুলনায় ধর্মঘট : সারা দেশের ন্যায় বুধবার মধ্যরাত থেকে খুলনায় সর্বাত্মক নৌযান ধর্মঘট চলছে। ধর্মঘটের ফলে মংলা বন্দরসহ খুলনাঞ্চলে সকল ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। অচল হয়ে পড়েছে নৌপথ।

বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের খুলনা জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন জানান, কেন্দ্রের ডাকা ধর্মঘট খুলনায় সর্বাত্মকভাবে পালিত হচ্ছে।

তিনি বলেন, নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘট শুরু হওয়ায় শিল্পনগরী খুলনা ও মংলা বন্দরে অবস্থানরত সব ধরনের দেশি-বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজের পণ্যবোঝাই-খালাস ও পরিবহন কাজ বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া খুলনা ও মংলা বন্দরের সঙ্গে সারা দেশের নৌযোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।

বৃহস্পতিবার সকালে খুলনার বিআইডব্লিউটিএ লঞ্চ টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে কোনো লঞ্চ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়নি। তবে ধর্মঘটের খবর না জেনে যেসব যাত্রীরা এসেছেন তারা পড়েছেন দুর্ভোগে।



মন্তব্য চালু নেই