নোয়াখালীতে অরুণচন্দ্র সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় নতুন ভবন নির্মাণ আসন সংখ্যা বৃদ্ধিতে আরো এগিয়ে যাবে
নোয়াখালী জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত শত বছরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অরুণ চন্দ্র সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। ছাত্র-ছাত্রী অনেক। পড়ালেখার মানও ভালো। কিন্তু ছাত্রছাত্রী অনুপাতে এখানে নেই পর্যাপ্ত অবকাঠামো, ভবন, শ্রেণী কক্ষ, টেবিল-চেয়ার সহ প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র। যার ফলে বেশী সংখ্যক শিক্ষার্থীদের পাঠদান দিয়ে গিয়ে শিক্ষকরা পড়ছেন বিপাকে।
এসব বিষয় নিয়ে অভিযোগ করে অভিভাবকরা উধর্ক্ষতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে দ্রুত যথাযথ উদ্যোগ গ্রহনের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নের করে ছাত্রছাত্রীদের সুষ্ঠ শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানান।
সরেজমিনে জানা যায়, নোয়াখালীর সদর উপজেলা মাইজদীর বাজারে অবস্থিত অরুণ চন্দ্র সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত। বর্তমানে এই বিদ্যালয়ে একটি তিন তলা বিশিষ্ট পাকা ভবন আছে। মোট কক্ষ ৮টি। এর মধ্যে ৭টি শ্রেণী কক্ষ, ৬টি বড় ও একটি ছোট। শিক্ষকদের বসার জন্য একটি অফিস রয়েছে। শিক্ষক সংখ্যা ১২ জন। মোট ছাত্রছাত্রী সংখ্যা ৮৭৫ জন। ১৯৮৭ সালে নির্মিত একমাত্র তিনতলা ভবনটিও বর্তমানে ঝরাজীর্ণ। নির্মাণ ত্র“টির প্রতিটি কক্ষে ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে করে ভবনটি ঝূঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
যেকোনো মূহুর্তে দূর্ঘটনার আশংকা আছে। বিদ্যালয় ভবনের প্রতিটি দরজা-জানালার অবস্থাও অকার্যকর। ৮৭৫ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে বিদ্যালয়টি দুইটি শিফটে পরিচালিত হচ্ছে। এক শিফটের প্রতি শ্রেণীতে গড়ে ৮০-৯০ জন ছাত্রছাত্রী অধ্যয়ন করছে।
পর্যবেক্ষনে দেখা যায়, শ্রেণী কক্ষে পাঠদান কার্যক্রম চলাকালীন সময়ে বসার জন্য আসন সল্পতার কারণে অনেক ছাত্রছাত্রীকে শ্রেণীকক্ষের ভিতরে ও বাহিরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। অনেক সময় একটি বেঞ্চে দুই জন শিক্ষার্থীর স্থলে চার জন করে বসতে হচ্ছে। এতে তাদের লেখাপড়া বিঘ্নিত হচ্ছে। বিদ্যালয়টিতে ছাত্রছাত্রী অনুয়াযী জায়গা ও আসন না থাকায় পাঠদান কার্যক্রমে অংশগ্রহন করতে না পেরে প্রকৃত শিক্ষাগ্রহন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা। তবে সফলতার বিষয় হলো, এত সমস্যা মধ্যেও অরুণ চন্দ্র প্রাথমিক বিদ্যালয়টি পড়ালেখার মান আশেপাশের অন্যান্য প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে অনেক ভালো। বিগত ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এ বিদ্যালয় থেকে বৃত্তি পরীক্ষায় ফলাফলের দিক থেকে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সদর উপজেলা নোয়াখালীর মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করে আসছে।
বিদ্যালয়টিতে শিক্ষকতা করা প্রধান শিক্ষিকা রশিদা বেগম, সহকারী প্রধান শিক্ষিকা বীনা পানি কর, সহকারী শিক্ষক শিরিনা আক্তার, শেফালী বেগম, বোরহান উদ্দিন চৌধুরী, রোকসানা আক্তার, ছন্দা রাণী দাস, লীনা দাস, শরফুদ্দিন মাহমুদ চৌধুরী, সাজেদা জাহান, শামিমা আক্তার, মনোয়ারা বেগম। শিক্ষকদের প্রশংসা করে অভিভাবকরা জানান, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের ক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষিকারা যথেষ্ট আন্তরিক। তাদের গঠনমূলক পাঠদানে এ বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীরা সমাপনী ও বৃত্তি পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়ে প্রথম স্থান অধিকার করে আসছে।
এ বিদ্যলয়ের পড়ালেখার মান ভালো হওয়ায় আশেপাশের অন্যান্য বিদ্যালয়ে থেকেও অনেক ছাত্রছাত্রী অরুণ চন্দ্র সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি আগ্রহী। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে প্রধান শিক্ষিকা রশিদা বেগম বিদ্যালয়ের ঝরাজীর্ণ ভবন, জায়গা সল্পতা ও আসন সংকটের কথা উল্লেখ করে জানান, শহর অঞ্চলে হওয়ায় এ বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী অনেক। শিক্ষকদের পাঠদানে বিদ্যালয়ের ফলাফলও প্রত্যাশিত। কিন্তু এদিকে ঝরাজীর্ণ ভবনের কারণে আমরা ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে ঝূঁকিপূর্ণ পরিবেশে পাঠদান করছি।
অন্যদিকে, জায়গা ও আসন সল্পতার কারণে শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠভাবে পাঠদানও ব্যাহত হচ্ছে। তবে এ বিষয়গুলি উধর্ক্ষতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। কর্তৃপক্ষও অতি দ্রুত বিষয়গুলো সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আনোয়ার হোসেন সিদ্দিকী এ প্রতিবিদকের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরে বলেন, যতটুকু জানি অরুণ চন্দ্র সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পর্যাপ্ত ভূমি নেই।
তবে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে লিখিতভাবে জানালে এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য আমরা উধর্ক্ষতন কর্তৃপক্ষের কাছে জোর সুপারিশ করবো।
মন্তব্য চালু নেই