নৈরাজ্য করলে খালেদাকেও গ্রেপ্তার

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিনা কারণে হরতালের নামে নৈরাজ্য পরিস্থিতি সৃষ্টি করে মানুষ হত্যা, জ্বালাও পোড়াও মুল্যবান সম্পদ নষ্ট করলে প্রয়োজন কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সে যত বড় দলের যত বড় মাপের নেতাই হোন না কেন রেহাই পাবেন না।’

শনিবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদ ও কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারের ইঙ্গিত দিয়ে তিনি এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন শেখ হাসিনা। বৈঠকে একাধিক শীর্ষ নেতা বাংলামেইলকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তারা বলেছেন, বৈঠকে পবিত্র হজ, কোরবানি ঈদ ও পূজার সময়ে হরতালের নামে কোনো ধরনের নৈরাজ্য করা হলে কঠোর হস্তে দমন করার পরামার্শ দেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এসময় প্রধানমন্ত্রী ওই মন্তব্য করেন।

বিকেল সোয়া ৫টায় অনুষ্ঠিত বৈঠকটি নামাজের বিরতি দিয়ে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রীর স্বাগত ভাষণের পর রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়।

বৈঠকে আগামী সোমবার ২০ দলের ডাকা হরতাল প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন ঈদ, পূজায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। হাজিরা হজে যাচ্ছেন। আর বিনা কারণে বিএনপি জোট এ সময় হরতাল ডেকে আবার দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। হরতালের নামে জ্বালাও, পোড়াও করে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে চায়। জামায়াতের হরতাল কেন? তারা কি সাঈদীর ফাঁসি হলে খুশি হতো? সাঈদীর রায়ে আমরাই তো খুশি না। এটা আদালতের রায়। মেনে নিয়েছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশে হরতালের নামে সহিংসতা করে আবারও কোনো মায়ের বুক খালি হোক, জ্বালাও পোড়াও মানুষের সম্পদ নষ্ট করা হলে তা মেনে নেয়া হবে না। মানুষের জীবন যাত্রা স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজন যা যা করা দরকার, বা যত বড় দলের নেতাই হোক কেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

সূত্রমতে, ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতার ওপর নির্মিত ভিডিওচিত্র ও স্থিরচিত্র সম্বলিত ডিভিডি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে তুলে ধরা হবে। এমনকি ডিভিডিটি নিয়ে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা আলোচনা করবেন। প্রধানমন্ত্রীর সাধারণ অধিবেশনের বক্তব্যেও ডিভিডিটির অংশ বিশেষ আলোচনায় তুলে ধরবেন বলে প্রধানমন্ত্রী জানান।

বৈঠকে এ কে খন্দকারের ‘১৯৭১: ভেতরে-বাইরে’ বই নিয়ে কয়েকজন সিনিয়র নেতার আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ কে খন্দকার তার বইয়ে বিকৃত ইতিহাস উপস্থাপন করেছে। এ বই আমলে না নিলেই ভালো হতো। কিন্তু আমাদের দলের নেতারা সংসদে বক্তব্য দিয়ে বই বিক্রি বাড়িয়ে দিয়েছেন। তার বইয়ের একটি সংস্করণই ফুরাতো না, কিন্তু এখন দ্বিতীয় সংস্করণ করতে হয়েছে। বিক্রি বেড়েছে।’

সূত্র আরো জানান, দ্রুততম সময়ের মধ্যে জেলা সম্মেলন করার তাগিদ দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, দশটি টিম গঠন করে দেয়া হয়েছে। ওই টিমগুলো সারাদেশে সাংগঠনিক সফর করে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জেলা সম্মেলন সম্পন্ন করবে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ‘সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা হতাশা থেকে আমাদের দলে আসছেন। এসব অনুপ্রবেশকারীদের ব্যাপারে সর্তক থাকতে হবে।’

বৈঠকে ছাত্রলীগ নিয়ে কথা বলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আবদুর রহমান। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, ‘ছাত্রলীগ এখন আদর্শের সংগঠন থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে। নিজেদের মধ্যে খুনোখুনি করছে। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়েছে। এখন ছাত্রলীগ নিয়ে ভাবার সময় এসেছে।’

শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভায় আরো বক্তব্য দেন, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, বেগম মতিয়া চৌধুরী, ড. হোসেন মুনসুর, মাহবুব-উল আলম হানিফ, ড. আবদুর রাজ্জাক, ড. হাছান মাহমুদ, একে এম রহমত উল্লাহ, আব্দুর রহমান প্রমুখ।



মন্তব্য চালু নেই