নীরবে স্কুলে শিক্ষকতা করছেন বলিউডে ইতিহাস গড়া সেই নায়িকা

শুরুটা হয়েছিল মডেলিং দিয়ে। তারপর ছোট পর্দায় কয়েকটি শোতে সঞ্চালনা করেন। তখনই নজরে পড়েন ভারতের বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক মহেশ ভাটের। কিন্তু প্রথমেই মহেশের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন দিল্লির মেয়ে অনু। কারণ, তিনি কখনো সিনেমার ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন না।

অনুর প্রত্যাখ্যান জেদ আরো বাড়িয়ে দিয়েছিল মহেশের। তিনি ঠিক করেন যে চিত্রনাট্য তিনি লিখেছেন তার জন্য অনু আগরওয়ালকেই চাই। অনুর মধ্যে তিনি এক তারকার উপস্থিতি দেখেছিলেন। মহেশ ভাট অনুকে বলেন, পরবর্তী ছবির চিত্রনাট্য শুধুমাত্র তিনি শুধু তার কথা মাথায় রেখেই লিখেছেন। অনু না করলে ছবিটি তিনি করবেন না। পরিচালক এবং নায়িকার দড়ি টানাটানিতে শেষ পর্যন্ত হার হয় নায়িকার। হ্যাঁ বলেন অনু আগরওয়াল।

নতুন নায়ক রাহুল রায়ের সঙ্গে অভিনয় করলেন ‘আশিকি’তে। ১৯৯০ সালের ১৭ই আগস্ট মুক্তি পেয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করলো ছবিটি। সেই বছরের সেরা হিট ছবি। একইসঙ্গে সুপারহিট সংগীত। ‘আশিকি’র গানের ক্যাসেট বিক্রি হয়েছিল প্রায় দেড় কোটি। হিন্দি সিনেমার ইতিহাসে এই রেকর্ড আর একটিও নেই।

তখন শ্রীদেবী, দিব্যা ভারতীর যুগ। সেই সময়ে দাঁড়িয়ে আপাতত শ্যামলা মেয়েটি খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে যান। কিন্তু বিধির লিখন অন্য কিছুই ছিল। আশিকির পর আরো ৯টি ছবি করেছিলেন অনু। তার একটিও বক্স অফিসে সাফল্য পায়নি। ভুল ছবি নির্বাচন, অসংলগ্ন জীবনযাপন ক্রমশ অন্ধকারে ঠেলে দিতে শুরু করে। এরপর ১৯৯৯ সালে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন এ নায়িকা।

মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে কয়েক মাস লড়াই চলে। ২৯ দিন কোমায় কাটানোর পর স্মৃতিশক্তি হারান অনু আগরওয়াল। কীভাবে দুর্ঘটনা ঘটেছিল সেদিন, কিছুই আর মনে করতে পারেননি তিনি। স্মৃতিশক্তির পাশাপাশি শরীরের কিছুটা অংশ বিকলাঙ্গ হয়ে যায়। আর এখানেই শেষ হয়ে যায় অনু আগরওয়ালের তারকা জীবন।

এরপর আশিকির সেই নায়িকা কোথায় হারিয়ে যান, কেউ তা খোঁজ করে দেখেনি। ১৫ বছর পর ২০১৫ সালে বিহারের মুঙ্গের জেলায় কোনো একটি স্কুলে এক সাংবাদিকের নজরে পড়েন মধ্যবয়স্ক এক মহিলা। যাকে দেখতে অনেকটা অনু আগরওয়ালের মতো। কিন্তু ‘আশিকি’র সেই মেয়েটির সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া কঠিন। মুখের চামড়া কুঁচকে গিয়েছে। চুলে পাক ধরেছে। সেই মধ্যবয়স্ক মহিলা ওই স্কুলের যোগাসন শিক্ষিকা। বিয়ে করেননি। একাই থাকেন।

সাংবাদিকের অনেক দিনের পরিশ্রমের পর জানা যায়, ওই মহিলা ‘আশিকি’র অনু আগরওয়াল। কিন্তু তিনি কীভাবে বলিউডের গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ড থেকে মুঙ্গেরের প্রত্যন্ত গ্রামে পৌঁছালেন, তা জানা যায়নি। তিনি এখনো সেই স্কুলের শিক্ষিকা হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।



মন্তব্য চালু নেই