নিষ্প্রাণ ড্র হচ্ছে ফতুল্লা টেস্ট

ফতুল্লা টেস্টের চতুর্থ দিনের খেলাও বৃষ্টিতে পণ্ড হয়েছে। চতুর্থ দিন মাত্র ৩০.১ ওভার খেলা হয়। মধ্যাহ্ন বিরতির ১০ মিনিট আগে থেকে ফতুল্লায় বৃষ্টি শুরু হয়।

শুরুর দিকে বেশ জোরেই বৃষ্টি হয়। বৃষ্টির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বয়ে যায় ঝড়ো বাতাস। বাতাসে মাঠের পূর্ব দিকের বাঁশের ছাউনি (প্যান্ডেল) হেলে পড়ে। পুরো আকাশ কালো মেঘের দখলে চলে যায়।

প্রায় ঘণ্টাখানেকের বৃষ্টিতে পুরো মাঠে পানি জমে যায়। বৃষ্টি থামার পরপরই গ্রাউন্ডসম্যানরা পানি নিষ্কাশনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।কিন্তু কোনোভাবেই মাঠের পানি কমানো যাচ্ছিল না।বেলা ৩টায় প্রথম মাঠ পর্যবেক্ষণ করেন আম্পায়াররা। সন্তুষ্ট হতে না পারায় ক্রিকেটারদের চা-বিরতিতে পাঠিয়ে দেন।

এক ঘন্টা পর দ্বিতীয় দফায় মাঠ পর্যবেক্ষণ করেন আম্পায়াররা। ঘণ্টা দুয়েক সময় নিয়েও মাঠ খেলার অনুপযুক্ত মনে হয় তাদের কাছে। এ কারণে ৪টা ৬ মিনিটে চতুর্থ দিনের খেলা পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন আম্পায়াররা। রোববার সকাল সাড়ে ৯টায় পঞ্চম ও শেষ দিনের খেলা শুরু হবে।

বৃষ্টিবিঘ্নিত চতুর্থ দিনে বাংলাদেশ ৩ উইকেট হারিয়ে ১১১ রান সংগ্রহ করেছে। ৩৫১ রানে পিছিয়ে থেকে বাংলাদেশ চতুর্থ দিনের খেলা শেষ করেছে। ফলোঅন এড়াতে ২৬৩ রান করতে হবে বাংলাদেশকে। এর আগে ভারত ৬ উইকেটে ৪৬২ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করেন।

তবে নিষ্প্রাণ ড্র হচ্ছে ফতুল্লা টেস্ট। রোববার পঞ্চম দিনে বাংলাদেশের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান ব্যাটিং শুরু করবেন। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশকে অলআউট করে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশকে টার্গেট দেওয়াটা অনেকটা অলিক স্বপ্নের মতো!

ইমরুল কায়েস ৫৯ ও সাকিব আল হাসান শূন্য রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেছেন। ফতুল্লা টেস্টে চতুর্থ দিনে আর ব্যাটিংয়ে নামেনি ভারত। দিনের খেলা শুরুর আগেই ইনিংস ঘোষণা করেন দলটির নতুন অধিনায়ক বিরাট কোহলি।

বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা ইনিংসের শুরুতে ছিলেন বেশ আত্মবিশ্বাসী। উইকেটের চারপাশে শট খেলে দ্রুত রান তোলায় ব্যস্ত ছিলেন দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস। কিন্তু ষষ্ঠ ওভারের শেষ বলে বাংলাদেশ শিবিরে আঘাত হানেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। অশ্বিনের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে বল মিস করেন তামিম। সুযোগ পেয়ে উইকেটরক্ষক ঋদ্ধিমান সাহা তামিমের স্টাম্প ভেঙে দেন।

অনফিল্ড আম্পায়ার তৃতীয় আম্পায়ারের সাহায্য নেন। টিভিতে রিপ্লে দেখে তামিমকে আউট ঘোষণা করেন তৃতীয় আম্পায়ার এনামুল হক মনি। ১৯ রানে আউট হন তামিম ইকবাল।

আউট হওয়ার আগে টেস্টে দেশের হয়ে সর্বোচ্চ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন তামিম। তামিম ভেঙেছেন হাবিবুল বাশার সুমনের রেকর্ড।শনিবার হাবিবুল বাশারকে ছাড়িয়ে যেতে ৭ রান প্রয়োজন ছিল তামিমের। খুব সহজেই সেই রান ছাড়িয়ে যান বাঁহাতি তামিম। তামিমের রান ৩০৩৯।

৫০ টেস্টে ৯৯ ইনিংসে হাবিবুল বাশারের ব্যাট থেকে আসে ৩০২৬ রান।২০০৭ সালে অবসর নেন হাবিবুল বাশার।
তামিমের প্রস্থানের পর দ্বিতীয় উইকেটে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন মুমিনুল হক ও ইমরুল কায়েস। এই দুই ব্যাটসম্যান দ্বিতীয় উইকেটে ৮১ রানের জুটি গড়ে কিছুটা প্রতিরোধ গড়েন। তবে অহেতুক শট খেলতে গিয়ে হতাশ করেন মুমিনুল।

অনেকদিন পর টেস্ট দলে ডাক পাওয়া হরভজন সিং এর বলে এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে মিড অফে উমেশ যাদবের তালুবন্দি হন মুমিনুল। ৫৪ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ৩০ রান আসে মুমিনুলের ব্যাট থেকে।

মুমিনুলের বিদায়ের পর দলের সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটসম্যান ও টেস্ট দলপতি মুশফিকুর রহিম অশ্বিনের বলে রোহিত শর্মার হাতে ক্যাচে দিয়ে আউট হন। মাত্র ২ রানে শেষ হয় মুশফিকের ইনিংস।

টানা দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। মুশফিকের বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন সাকিব আল হাসান। তাকে সঙ্গ দেবেন আগে থেকেই ক্রিজে থাকা ইমরুল কায়েস। ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফসেঞ্চুরি তুলে নিয়ে ৫৯ রানে অপরাজিত আছেন ইমরুল। অবশ্য ব্যক্তিগত ১০ রানে শেখর ধাওয়ানের হাতে জীবন পান তিনি। উমেশ যাদবের বলে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ দিলে বল তালুবন্দি করতে পারেননি ধাওয়ান। সাকিব এখনো রানের খাতা খুলতে পারেনি।

এর আগে শুক্রবার তৃতীয় দিন শেষে ৬ উইকেটে ৪৬২ রান করেছিল সফরকারীরা। ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ ১৭৩ রান করেন শিখর ধাওয়ান। ১৯৫ বলে ২৩ বাউন্ডারিতে ইনিংস সাজান এই বাঁহাতি ওপেনার।

আরেক ওপেনার মুরালি বিজয় করেছেন ১৫০ রান। এটি ছিল তার ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরি। ২৭২ বলে ১২ চার ও ১ ছক্কায় ১৫০ রানের ইনিংস গড়েন মুরালি। এ ছাড়া মাত্র ২ রানের জন্যে ক্যারিয়ারের চতুর্থ টেস্ট সেঞ্চুরি থেকে বঞ্চিত হন অজিঙ্কা রাহানে। ৯৮ রানে সাকিবের শিকার হন তিনি।

অধিনায়ক হিসেবে কোহলির শুরুটা ভালো হয়নি। মহেন্দ্র সিং ধোনি টেস্ট থেকে অবসর নেওয়ার পর এটি ছিল কোহলির অধীনে ভারতের প্রথম টেস্ট। কিন্তু প্রথম ইনিংসেই ফ্লপ কোহলি। মাত্র ১৪ রান করে তরুণ তুর্কি জুবায়েরের কাছে হার মানেন কোহলি।

বল হাতে বাংলাদেশের সেরা বোলার সাকিব আল হাসান। ৪ উইকেট নেন তিনি। এ ছাড়া লেগ স্পিনার জুবায়ের হোসেন লিখন নেন ২ উইকেট।



মন্তব্য চালু নেই