নিষ্পত্তি হওয়া ২১২ অপহরণ মামলায় ৯০ শতাংশ আসামিই খালাস!

বছরের পর বছর অনিষ্পন্ন থাকছে অসংখ্য ঘটনায় দায়ের করা মামলা। আবার যেগুলো নিষ্পত্তি হচ্ছে, তার প্রায় ৯০ শতাংশই খালাস হচ্ছে আদালতের রায়ে। সরকারি আইনজীবী ও পুলিশের চরম অবহেলায় যুগ যুগ ধরে চলছে ২৩৭৯টি অপহরণ মামলার বিচারকাজ। ঢাকার ৪২টি নিন্ম আদালতে এসব মামলা বিচারাধীন।

বিচারসংশ্লিষ্টদের দাবি, এভাবে চলতে থাকলে এসব মামলা নিষ্পত্তি হতে লাগতে পারে কয়েক যুগ। ততদিনে মামলার বাদী কিংবা সাক্ষীদের আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। ইতিমধ্যে অনেক সাক্ষী মারাও গেছেন। এর ফলে মামলার দায় থেকে পার পাবেন অপহরণকারীরাও। ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হবেন বিচারপ্রার্থী জনগণ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ২৫ বছরে নিষ্পত্তি হওয়া ২১২ অপহরণ মামলার মধ্যে ১৯০ মামলাতে খালাস পেয়েছে আসামিরা। সাজা হয়েছে মাত্র ২১ মামলায়। অর্থাৎ ৯০ শতাংশ আসামিই এসব মামলায় খালাস পেয়েছে। এসব মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন ২১০৩ আসামি। ইতিমধ্যে ২ হাজার আসামি জামিনে বেরিয়ে গেছেন। এদের মধ্যে আদালতে নিয়মিত হাজিরা দেন ১৬৭৭ জন। জামিন পাওয়ার পর আদালতে আর হাজির হননি, এমন পলাতক আসামির সংখ্যা ৫২৬ জন। এ ছাড়া মামলা দায়েরের পর থেকেই ২৮৭৬ আসামি পলাতক আছেন।

আরও জানা যায়, গত ১২ বছরে সারা দেশে দায়ের করা ২৭০৮০টি অপহরণ মামলার মধ্যে ঢাকায় হয়েছে ১৯৬৯টি। এর মধ্যে ২০১৩ সালে সারা দেশের ৮৭৯টির মধ্যে ঢাকায় হয়েছে ১৫৩টি, ২০১২ সালে ৮৪০টির মধ্যে ঢাকায় ১৫৪টি, ২০১১ সালে ৭৯২টির মধ্যে ঢাকায় ১২৭টি এবং ২০১০ সালে সারা দেশে দায়ের করা ৮৭০টির মধ্যে ঢাকায় ১৫৫টি। এ ছাড়া ঢাকার আদালতগুলোতে বিচারাধীন ২৩৭৯টি অপহরণ মামলার মধ্যে ১২ বছরের বেশি সময় ধরে চলছে ৬১২টি মামলার বিচার কাজ। এর মধ্যে অপহরণ এবং হত্যা মামলার সংখ্যা ২২০টি।

ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৩৯-গ এর ২ ধারায় বলা হয়েছে, ‘দায়রা জজ, অতিরিক্ত দায়রা জজ বা সহকারী দায়রা জজের বিচারের জন্য মোকদ্দমাপ্রাপ্ত হওয়ার ৩৬০ দিনের মধ্যেই বিচার সমাপ্ত করবেন।’ এ ছাড়া ২০০৯ সালের ক্রিমিনাল রুলস অ্যান্ড অর্ডারস ভলিউম-১ অনুযায়ী সাক্ষীদের আদালতে নির্ধারিত তারিখ ও সময়ে হাজির করার দায়িত্ব পুলিশ এবং প্রসিকিউশনের।

জানতে চাইলে ঢাকার মহানগর পুলিশের গণসংযোগ বিভাগের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, ‘পুলিশের কারণে অপহরণ মামলার বিচার শেষ হচ্ছে না এটা সঠিক নয়। পুলিশ সমন কিংবা গ্রেফতারি পরোয়ানার খবর পেলে আদালতে যায়।’ তিনি জানান, ‘বিচারাধীন পুরাতন অপহরণ মামলা বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।’

‘অপহরণকারীদের সাজা না হওয়া’ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক মো. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘অপহরণ মামলার বিচার না হওয়া বড়ই উদ্বেগের বিষয়। অপহরণকারীদের শাস্তি না হওয়ার কারণেই অপহরণ, হত্যা, গুম, চাঁদাবাজিসহ বড় বড় ফৌজদারি অপরাধের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের যদি সঠিক বিচার না হয় তবে আদালতের প্রতি মানুষের আস্থা আরও কমে যাবে।’

সূত্র: দৈনিক যুগান্তর



মন্তব্য চালু নেই