নির্ভীক এক জেলের সাম্রাজ্য

সারারাত মাছ ধরে নৌকায় টিমটিম আলো জ্বালিয়ে ফিরে আসছে জেলে দল। ভোরের আলোর ফোটার আগেই যেভাবে হোক তাদের ভিক্টোরিয়া লেকের নাকাতিবা মাছঘাটায় ফিরে আসতে হবে। একটু দেরি হয়ে গেলেই পাইকারী মাছ ক্রেতাদের কাছে আর মাছ বিক্রি করতে পারবে না তারা। আর একদিন যদি মাছ বিক্রি করা না যায়, তাহলে পরিবার-পরিজন নিয়ে একপ্রকার উপোস করেই কাটাতে হবে। তবুও জেলেরা আফ্রিকার সবচেয়ে বড় মিঠা পানির ক্ষেত্র এই ভিক্টোরিয়া লেকে আসেন মাছ শিকার করতে। আর এই ভিক্টোরিয়া লেকেই জেলেদের পাশে দাড়িয়েছেন দুঃসাহসিক এক নারী মামা সিলভিয়া।

উগান্ডার মতো একটি দেশে যেখানো কোনো নারীর পক্ষে ব্যবসা করার কথা ভাবাই যায় না, সেখানে মামা সিলভিয়া একজন নারী হওয়া স্বত্ত্বেও অনেক বাধার মুখেও চালিয়ে যাচ্ছেন তার মাছ ব্যবসা কেন্দ্র। কিন্তু সিলভিয়া এই মাছ ব্যবসা করার আগে নিজেই একজন জেলে ছিলেন। লোকচক্ষুর অন্তরালে রাতের অন্ধকারে তিনি লেকে যেতেন মাছের জন্য। সিলভিয়ার ভাষ্য মতে, ‘এই লেকের পাশেই আমি জন্মেছি। শৈশবে আমার চর্তুপাশে জেলে আর মৎসব্যবসায়ীদের দেখে বড় হয়েছি। আমার মতো আরও অনেক নারীই আছেন যারা নিজেরাই মাছ ধরতে যান। কিন্তু আমি খেয়াল করে দেখলাম নারী জেলেদের সমাজে খুব একটা ভালো চোখে দেখা হয় না, পাশাপাশি ঠকানোও হয়। তাই মাছ ধরা বাদ দিয়ে দেই।’

মাছ ধরা বাদ দেবার পর সিলভিয়া চলে যান বুগালা নামক স্থানে। তৎকালীন সময়ে ওই স্থানটিতে অনেক মাছ পাওয়া গেলেও, জঙ্গলাকীর্ণ হওয়ার কারণে অধিকাংশ জেলেই ওখানে যেত না। পুরো অঞ্চলটিতে মাত্র চারটি পরিবারের বসবাস ছিল। বিদ্যুৎহীন এবং অজস্র সাপের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে তাদের। কিন্তু মামা সিলভিয়ার চেষ্টায় আজ পুরো অঞ্চলটিই সৌরবিদ্যুতে বিদ্যুতায়িত। শুধু তাই নয়, বুগালায় এখন রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে প্রতিটি মানুষের বাড়িতে পানির পাইপও রয়েছে। যদিও আজকের এই অবস্থা একদিনে হয়নি। শুরুর দিকে আবহাওয়ার সঙ্গে লড়াই করতেই অনেকটা সময় গিয়েছে তাদের।

প্রায় ২৭ বছর আগে একটি ছোটো নৌকা সম্বল করে মাছ ধরা শুরু করেছিলেন সিলভিয়া। ১৯৯৪ সালের দিকে নিজের জমানো টাকা দিয়ে একটি নৌকার ইঞ্জিন কিনে নেন, এবং মাত্র চার বছরের মাথায় আরও তিনটি ইঞ্জিন কিনতে সমর্থ্য হন সিলভিয়া। আজ তিনি নিজে একাই ২২টি মাছধরা ইঞ্জিন নৌকার মালিক এবং প্রতিটি নৌকার মূল্য প্রায় সাড়ে সাত হাজার ডলার। পনেরো বছর আগে মাছঘাট স্থাপনের অনুমতি পান তিনি। এখনও নিজের হাতেই কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। কোনো নৌকার ইঞ্জিন খারাপ হলে, নিজের হাতেই ঠিক করার চেষ্টা করেন তিনি। তার কঠোর স্নেহময় শাসনের চোখ এড়িয়ে কেউ তাকে ঠকাতে পারে না এখন আর। অনেক মৎসজীবিই এখন অন্য মাছঘাটায় মাছ বিক্রি না করে এই ঘাটে আসেন, কারণে এই ঘাটে মাছ বিক্রির জন্য অত দরাদরি করতে হয় না। মাছঘাটায় দর ঠিক করাই থাকে, সিলভিয়ার তত্ত্বাবধানে সেই মাছকে সঠিক মাছ করে তুলে নেয়া হয় অর্থের বিনিময়ে।



মন্তব্য চালু নেই