বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপ

‘নির্বাচনে গেলে বিএনপি একটা নতুন লীজ পাবে’

রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত বিবিসি বাংলা সংলাপের প্যানেল আলোচকরা মন্তব্য করেছেন বিএনপি সিটি নির্বাচনে অংশ নিলে চলমান আন্দোলনে তাদের রাজনৈতিক দাবিগুলো একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে আসবে। এবারের পর্বে প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জি এম কাদের, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব:) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বীরপ্রতীক, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. দিলারা চৌধুরী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. সাদেকা হালিম।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের একজন নেতা বলেছেন শুধু বিএনপিই নয়, বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের অন্যরাও সর্বাত্মক চেষ্টা করবে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নিতে। তিনি বলেন এ নির্বাচনে অংশ নিলে আন্দোলনের যৌক্তিকতা হারাবেনা কারণ আন্দোলন হচ্ছে জাতীয় নির্বাচনের জন্য।

জাতীয় পার্টির একজন নেতা বলেছেন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে তা চলমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানে ভূমিকা রাখবে। একি সঙ্গে তিনি বলেছেন সংসদে বিরোধী দলে থেকে মন্ত্রীত্ব নেয়াটা সাংঘর্ষিক ও বেআইনি।

ঢাকায় বিয়াম মিলনায়তনে সংলাপের এ পর্বে জনপ্রতিনিধি অপসারণে সরকারের পদক্ষেপ এবং পুরুষ নির্যাতন বিরোধী আইনের দরকার আছে কি-না এমন বিষয়গুলোও আলোচনায় উঠে আসে।

বাংলাদেশ সংলাপে একজন দর্শক জানতে চান বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা যদি ঢাকা ও চট্টগ্রামে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়, তাহলে দলটির চলমান রাজনৈতিক আন্দোলনের কোন যৌক্তিকতা কি থাকবে?

জবাবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অংশীদার কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহম্মদ ইব্রাহিম বলেন ৫ই জানুয়ারির প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের কারণে আন্দোলন হচ্ছিলো আরেকটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য।

তাই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নিলে তা আন্দোলনের যৌক্তিকতার বিষয়ে কোন ভূমিকা রাখবেনা বলেই মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, “নির্বাচনে যদি যাই, বিএনপি একটা নতুন লীজ পাবে, সরকার একটু বুঝতে পারবে।

আর সরকার যদি উনিশ থেকে বিশ করে তাহলে পৃথিবী দেখবে যে এই সরকারের নির্বাচনকালীন আচরণ কি হয়। মনোনয়নপত্র দাখিল, বাছাই, এবং শেষ দিনে ভোট পর্যন্ত মাঝখানে কর্ণফুলী থেকে হালদা নদীতে অনেক পানি গড়িয়ে যাবে।”

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী জিএম কাদের বলেন, নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হলে তা রাজনৈতিক সংকট সমাধানে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন “যদিও নামে বিরোধী দল, কিন্তু কোন সময় না-ভোট দিতে পারবে না জাতীয় পার্টি। না-ভোট দিতে না পারলে সেটা কখনোই বিরোধী দল হিসেবে গণ্য হবে না। নামে এটা ঘোষণা করা হলেও সংবিধানের সাথে এটা সাংঘর্ষিক। আমাদের দেশের সংবিধান এটা কখনো অ্যালাও করে না”।

আলোচনায় অংশ নিয়ে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন জনগণ আরেকটি জাতীয় নির্বাচন আশা করে এবং সেটি হয়নি বলে বিএনপির দাবি এখনো যৌক্তিক পরিণতি পায়নি।
এ সত্ত্বেও বিএনপির সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়া উচিত।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, “আমি মনে করি বিএনপির স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করা উচিৎ। সাধারণ নির্বাচনের পর যে উপজেলা নির্বাচন হয়েছিল সেখানে তাঁরা অংশ নিয়েছিলেন, এবং সেখানে দেখেছি ব্যাপক কারচুপি হয়েছিল।

এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা আবার দেখতে পাব যে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন কেমন হয়।”

অপর প্যানেল আলোচক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপি আবারো রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় ফিরে আসতে পারবে।

তিনি বলেন, “আমার মনে হয় পরিনিতি আরও চলমান হবে কারণ উনারা একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে চলে আসবে। একটা রাজনৈতিক চিত্র সেটার মধ্যে আসবে।” বাংলাদেশ সংলাপে একজন দর্শক জানতে চান গত এক বছরে জাতীয় পার্টি কি সংসদে সত্যিকার অর্থে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে পেরেছে?

জবাবে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী জি এম কাদের বলেন সংবিধান অনুযায়ী মন্ত্রীপরিষদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জাতীয় পার্টির মন্ত্রীরা সংসদে ভোট দিলে তাদের সংসদ সদস্য পদই থাকতে পারেনা। তাছাড়া সংসদে সদস্য সংখ্যা কম থাকার কারণেও জাতীয় পার্টির ভূমিকা রাখার সুযোগ কম।



মন্তব্য চালু নেই