নিরাপত্তা বাহিনী কি এখন জঙ্গিদের মূল টার্গেট?

বাংলাদেশে একের পর এক বেড়েই চলেছে জঙ্গি হামলা। ২০১৩ সাল থেকে থেমে থেমে শুরু হলেও ২০১৬ সালে ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলার মধ্য দিয়ে তা ভীতিকর অবস্থায় পৌঁছেছে।

ওই বছর শোলাকিয়ার ঈদগাহ মাঠে আবারো হামলা হলে তৎপর হয়ে উঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের জোরদার অভিযানে জঙ্গি তৎপরতার খানিকটা কমে এসেছিল কিন্তু সম্প্রতি এক সপ্তাহের ব্যবধানে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে কয়েকটি অভিযান ও হামলা চেষ্টার ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে কেন জঙ্গি কার্যক্রম হঠাৎ বেড়ে গেল?

নিরাপত্তা বিশ্লেষক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বাংলাদেশে এই ধরনের হামলার চেষ্টা করা হবে সেটা আগেই থেকেই কিছুটা ধারণা করা যাচ্ছিল। তিনি বলেন, অনেকটা প্রেডিকটেড ছিল যে এ ধরনের ডেসপারেট অ্যাকশন হবে বাংলাদেশে।

সাখাওয়াত আরও বলেন, ‘এটাকে আমারা রি-অর্গানাইজ পিরিয়ড হিসেবে ধরবো যখন কোনো হামলা হয়নি। নতুনভাবে সংগঠিত করা এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারিতে যারা প্রশিক্ষণ নিচ্ছে তাদেরকে সামনে নিয়ে আসা। এই সময়টা তারা চুপ থাকে এবং নতুন কৌশল সাজায়।’

গতকাল শনিবার সিলেটে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে লক্ষ্য করে ‘বোমা বিস্ফোরণের দায়’ স্বীকার করেছে কথিত জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট বা আইএস।

গত ১৭ই মার্চ ঢাকায় আশকোনায় র‍্যাবের একটি ব্যারাকের মধ্যে শরীরে বাঁধা বোমার বিস্ফোরণে নিহত হন সন্দেহভাজন একজন জঙ্গি। এক সপ্তাহ পর গতকাল ২৪ মার্চ বিমানবন্দরের কাছে একটি পুলিশের নিরাপত্তা চৌকির কাছে আরো একজন ব্যক্তি নিজের শরীরে বাধা বোমা বিস্ফারণে নিহত হন। দুই ঘটনার দায় নেয় কথিত জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট। তবে কি নিরাপত্তা বাহিনী এখন জঙ্গিদের মূল টার্গেট?

জঙ্গিবাদ নিয়ে কাজ করেন আইন ও শালিস কেন্দ্রের নুর খান লিটন বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে যেহেতু তাদের সাময়িক বাধার সৃষ্টি হয়েছে তাই তাদেরকে বিভ্রান্ত এবং মনোবল ভেঙে দেয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে।

নুর খান লিটন আরও বলেন, বেশ কিছু ক্ষতি হওয়ার পর তারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করেছে। অর্থাৎ তাদের মধ্যে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে, মনোবল ভেঙে দিয়ে, যাতে করে আরো জঙ্গি কার্যক্রম চালাতে পারে সেজন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে টার্গেট করা হচ্ছে।

ঠিক যে মুহূর্তে সিলেটে সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তানায় অভিযান হচ্ছে তখনি ঢাকার পুলিশের চেকপোস্টের কাছে বোমা বিস্ফারণের এবং সিলেটে দুটি বোমা বিস্ফারণে ঘটনা, মুল অভিযান স্থল থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা হিসেবে দেখছেন কেউ কেউ।

নিরাপত্তা পরিস্থিতি যারা পর্যবেক্ষণ করেন তারা বলছেন, অভিযানের পর জঙ্গি সংগঠনগুলো একটা সময় নেয় নিজেদেরকে আবারো সংগঠিত করার জন্য- পরে তারা ফিরে আসে। সেটাই এখন দেখা যাচ্ছে।

আব্দুর রব খান বলেন, নিষিদ্ধ সংগঠন হরকাতুল জিহাদের শীর্ষ নেতা মুফতি হান্নানের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিষয়টা সাম্প্রতিক হামলার কারণ কি না সেটাও খতিয়ে দেখার বিষয়।

তিনি বলেন, এর আগে টঙ্গিতে তাদের ছিনিয়ে নেয়ার একটা চেষ্টা হয়েছিল। সেই মৃত্যুদণ্ড কার্যকরকে সামনে রেখে তাদের কার্যক্রমকে বাড়িয়ে দিয়েছে কি না সেটা ভেবে দেখার বিষয়। যদি সেটা হয় তাহলে আমরা ধরে নিতে পারি সামনের দিনগুলোতে আক্রমণের মতো কাজগুলো আরও বেড়ে যাবে।’

ইতোমধ্যে এমন কয়েকটি ঘটনা ক্রমান্বয়ে সংঘটিত হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এক্ষেত্রে দেশটি তাদের নিজ দেশের নাগরিকদের নিরাপদে থাকার অনুরোধ জানিয়ে বিবৃতিও দিয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই