নিজের ডিপ্রেশনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন যেভাবে

ডিপ্রেশন মনের বা শরীরের এমন একটি সমস্যা যার ফলে একজন মানুষ ক্রমশ বেঁচে থাকার ইচ্ছা হারিয়ে ফেলে। আপনি যদি নিজের মধ্যে ডিপ্রেশনের লক্ষণ দেখতে পান তাহলে নিজেকে এর থেকে বের করে আনতে চেষ্টা করতে হবে আপনাকেই। ডিপ্রেশনের ধরণ এবং এর থেকে পরিত্রাণের উপায় জেনে নিই চলুন।

ডিপ্রেশন ৩ ধরণের হয় যেমন- হালকা, মধ্যম এবং গুরুতর। এই ধরণগুলোর চিকিৎসা পদ্ধতিও আলাদা হয়। প্রায় সব মানুষই হালকা ডিপ্রেশনে ভুগে থাকে। যখন কোন মূল্যবান জিনিস হারিয়ে যায় অথবা প্রিয় মানুষের সাথে ঝগড়া হয় তখন মানুষ হতাশ ও বিমর্ষ হয়। এই ধরণের মানসিক অবস্থা কয়েক ঘন্টা বা কয়েকদিন স্থায়ী হয়। এর জন্য কোন চিকিৎসা নেয়ার প্রয়োজন হয়না।

মধ্যম মাণের বিষণ্ণতা দুই সপ্তাহের বেশি সময় স্থায়ী হতে পারে। এই সময় ঘুম না হওয়া ও ক্ষুধা কমে যাওয়ার মত লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারে। এই ধরণের বিষণ্ণতার ক্ষেত্রে কাউন্সেলিং এর সাহায্য নেয়া যেতে পারে তবে ঔষধের প্রয়োজন পরেনা। মধ্যম মাণের বিষণ্ণতা দীর্ঘদিন স্থায়ী হলে মেজর ডিপ্রেশনে পরিবর্তিত হতে পারে।

মেজর ডিপ্রেশনের রোগীরা অকর্মণ্য হয়ে পরেন। সে জীবনের প্রতি আশা হারিয়ে ফেলে এবং তার পছন্দের কাজগুলো করতেও আর উৎসাহ বোধ করেন না। সে কাজে যাওয়া বন্ধ করে দেয়, খাওয়া ও ঘুম একেবারেই কমে যায় নয়তোবা অনেক বেশি খায় এবং দীর্ঘসময় ধরে ঘুমায়। তার মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দেয়। গুরুতর বিষণ্ণতার রোগীদের চিকিৎসার প্রধান অংশ ঔষধ। ঔষধ সেবনের ফলে সে হয়তো ভালো অনুভব করবে কিন্তু সে সুস্থ হবেনা। যত দীর্ঘ সময় যাবৎ ঔষধ গ্রহণ করবে তত সে ভালো থাকবে। কিন্তু যে মুহূর্তে ঔষধ গ্রহণ বন্ধ করে দেবে ঠিক সেই মুহূর্তেই আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাবে। এ কারণেই সাইকোথেরাপির প্রয়োজন হয়।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. সঞ্জয় মুখারজি তার থেরাপির নাম দিয়েছেন A DOSE of happiness যাকে বিশ্লেষণ করে বলা যায় Anand-amine, Dopamine, oxytocin, Seretonin & Endorphins. Anand-amine সুখকে নির্দেশ করে এবং DOSE হচ্ছে এমন কিছু হরমোন যেগুলো বিষণ্ণতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। তিনি এই হরমোনগুলোকে সক্রিয় করে তোলার জন্য এবং ডিপ্রেশনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য যে কাজগুলো করার পরামর্শ দিয়েছেন সেগুলো হল :

১। মানুষ
ডা. মুখারজি বলেন, আপনার পরিবারের সদস্যদের সাথে ও প্রিয় মানুষদের সাথে এবং বন্ধুদের সাথে সময় কাটানো অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মানুষকে এড়িয়ে যাবেন না। আপনার কাছে মূল্যবান মনে না হলেও মানুষের সাথে মিশুন। অন্যকারো উপস্থিতির ক্ষমতা থেকে বিমুখ হবেন না। মানুষের দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে থাকলে বিভিন্ন ধরণের হরমোন নিঃসৃত হয় যা আপনাকে সুস্থ হতে সাহায্য করবে।

২। আনন্দ
মজা করুন, যা করলে আপনি আনন্দ অনুভব করেন এমন কাজ করুন। যদি রান্না করতে পছন্দ করেন তাহলে রান্না করুন মজার কোন খাবার, যদি ছবি আঁকতে পছন্দ করেন তাহলে ছবি আঁকুন। আর যদি ভিডিও গেম খেলতে পছন্দ করেন তাহলে তাই করুন।

৩। আসক্তি
যেহেতু আমরা বেশিরভাগ সময় কাজেই অতিবাহিত করি তাই আমাদের এমন কাজ করা উচিৎ যা করতে আমরা ভালোবাসি এবং আসক্তি বা আবেগ নিয়ে করতে পারি। আপনার কাজই হওয়া উচিৎ আপনার আসক্তি।

৪। দেহ
যেহেতু স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল তাই সুখি থাকার জন্য শারীরিক সুস্থতা অনেক অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই সুস্থ থাকার জন্য ব্যায়াম করা প্রয়োজন। যেকোন ধরণের শারীরিক সক্রিয়তার ফলে সুখি হরমোন নিঃসরণে সাহায্য করে। যা আপনাকে ভালো অনুভূতি দেবে এবং আপনাকে আস্তে আস্তে ডিপ্রেশন থেকে বের হয়ে আসতে সাহায্য করবে।

৫। শান্তি
শান্তি অর্জনের জন্য আপনাকে মেডিটেশন করতে হবে। যেকোন ধরণের মেডিটেশনই আপনার মনকে শান্ত করতে এবং বিষণ্ণতার বিরুদ্ধে আপনাকে যুদ্ধ করতে সাহায্য করবে।



মন্তব্য চালু নেই