নিজেই নিজের ছবিতে প্রণাম করতে বাধ্য হয়েছিলেন জিতু!

প্রায় ৮ বছর হল টেলিভিশন জগতে প্রবেশ করেছেন জিতু কমল। সানন্দা টিভি-র ধারাবাহিক ‘ভোলা মহেশ্বর’-এ তাঁর অভিনয় প্রশংসা পেয়েছিল। এখন তিনি ‘মিলন তিথি’-র অর্জুন, প্রায় এক বছর পেরলো ‘স্টার জলসা’-র এই ধারাবাহিক। এবেলা ওয়েবসাইটের সঙ্গে আড্ডায় জানালেন তাঁর টেলি-কেরিয়ারের নানা অভিজ্ঞতার কথা।
আপনার হোয়াটসঅ্যাপ স্টেটাস ‘ওম নমঃ শিবায়’। এটা কি সানন্দা টিভির ‘ভোলা মহেশ্বর’ ধারাবাহিকের কথা মাথায় রেখে?
জিতু: আসলে আমি ছোটবেলা থেকেই শিবভক্ত। সোমবার নিরামিষ খাই। আমার দেখাদেখি আমার পরিচিত অনেকেই এখন এটা মেনে চলেন। আমার হাতে ত্রিশূল রয়েছে। কাজেই ওটা আমার বিশ্বাসের জায়গা।

‘মিলন তিথি’ সিরিয়ালের তো এক বছর পূর্ণ হল। আপনার কী মনে হয়, দর্শকরা কতটা পছন্দ করছেন আপনাকে?
জিতু: আসলে এর আগের ধারাবাহিকে আমি যে চরিত্রটা করতাম, সেটা এখনও দর্শকদের মন থেকে মুছে যায়নি। ‘রাগে-অনুরাগে’ সিরিয়ালে আমার চরিত্রটি ছিল ৪৫ থেকে ৫০ বছর বয়সি একজনের, যার তিনটি ছেলেমেয়ে রয়েছে। ওই চরিত্রটা এখনও মানুষ মনের মধ্যে ধরে রেখেছে। আর ‘মিলন তিথি’-র এই চরিত্রটা আমার মনে হয় ওই জনপ্রিয়তাটা ছুঁতে পারেনি। এটা আমারই ডিসক্রেডিট বলা যায়। আর আমারও একটা ভুল হয়েছে। আমি ‘রাগে-অনুরাগে’ শেষ হওয়ার ঠিক পরেই ব্যাক টু ব্যাক এই প্রজেক্টে কাজ করতে শুরু করেছি।

‘রাগে-অনুরাগে’ সিরিয়ালে মল্লার-এর ভূমিকায়
আমরা কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘মিলন তিথি’ নিয়ে প্রচুর নেগেটিভ কমেন্টস দেখেছি। আমাদের নিজেদের ফেসবুক পেজে অন্য কোনও সিরিয়াল নিয়ে প্রতিবেদন পোস্ট করার পর দেখেছি অনেকেই লিখেছেন যে এই ধারাবাহিকটি বন্ধ হওয়া উচিত। সে বিষয়ে আপনি কি কিছু জানেন?
জিতু: আমার চোখে পড়েছে, শুনেওছি অনেকের কাছে। হয়তো কিছু ত্রুটি রয়েছে আমাদের, যার জন্য এমন কমেন্টস আসছে। কিন্তু অন্যদিকে এটাও বলা হয়তো জরুরি যে, শুরু থেকেই ‘মিলন তিথি’ প্রথম পাঁচ জনপ্রিয় সিরিয়ালের তালিকায় ছিল, এখনও রয়েছে। গত এক বছর ধরেই ধারাবাহিকভাবে প্রথম পাঁচে আমরা আছি। গত সপ্তাহে তো আমরা দ্বিতীয় স্থানে ছিলাম। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, ‘মিলন তিথি’-র এই চরিত্রটির মধ্যে এমন কোনও দৃষ্টান্ত আমি স্থাপন করতে পারিনি যে, চরিত্রটি মানুষের মনে দাগ কেটে যাবে। হয়তো সে সুযোগটাও হয়নি। বলতে পারেন, এই নিয়ে আমি বেশ ডিপ্রেসড। প্রোডাকশন হাউস বলুন বা চ্যানেলের প্রতিনিধিরা, সবাই খুব হেল্পফুল, তাঁরা সব সময় গাইডও করেন কিন্তু সামহাউ মনে হয় আমার চরিত্রটা অতটা জনপ্রিয় হতে পারেনি। তাই হয়তো অভিনয় নিয়ে কোনও প্রশ্ন করলে বার বার আমি আমার পুরনো চরিত্র, ‘রাগে-অনুরাগে’-র ‘মল্লার’-এ ফিরে যাই। আর আমার ইন্ডাস্ট্রিতে আসা কিন্তু অভিনয় দিয়ে নয়। আমি প্রথমে অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর হিসেবে কাজ শুরু করি। থিয়েটার লাইট, মিউজিক ছিল আমার প্রথম প্যাশন—

আপনি কোন নাটকের দলে ছিলেন?

জিতু: আমি গৌতম মুখোপাধ্যায়ের দলে ছিলাম। ‘গোর্কির মা’ যিনি করেন। তিনি আমার গুরু, আমার ভগবান। আমি যতটুকু শিখেছি, ওঁর কাছে শিখেছি। এছাড়া আমি কোনও ইনস্টিটিউটে বা আলাদা করে কোনও ওয়র্কশপে অভিনয় শিখিনি। শুধু থিয়েটার নয়, অভিনয় নয়, জীবনের পথে কীভাবে হাঁটতে হবে, সেটাও ওঁর কাছ থেকে শেখা।

কবে থেকে থিয়েটার করতে শুরু করেন?
জিতু: আমার প্রথম স্টেজে ওঠা ৬ বছর বয়সে। তার পর সিরিয়াসলি থিয়েটারে আসি ২০০৩ থেকে। তখন ক্লাস নাইনে পড়তাম। তার পর সেখান থেকে ২০০৮ সালে আমি টেলিভিশনে আসি।

আপনি একটু আগে বললেন যে, আপনি এই মুহূর্তে আপনার কেরিয়ার নিয়ে একটু ডিপ্রেসড। কীভাবে এখান থেকে বেরবেন? ভবিষ্যতের কিছু পরিকল্পনা?
জিতু: আমি মনে করি, মানুষকে খারাপ এবং ভাল— দুটো সময়ই ফেস করতে হয়। হাজার হাজার মানুষ শ্যুটিংয়ে ঢোকার জন্য মুখিয়ে থাকে। আমি সেখানে ফরচুনেট, প্রতিদিন আমি শ্যুটিং ফ্লোরে যেতে পারি। তাছাড়া মল্লার চরিত্রের জন্য, ‘ভোলা মহেশ্বর’-এ মহাদেবের চরিত্রের জন্য মানুষের থেকে যে রেসপেক্ট পেয়েছি, সেটা আমাকে অনেক ডিপ্রেসড অবস্থাতেও ভীষণ ইনস্পায়ার করে। ‘ভোলা মহেশ্বের’-এর জন্য প্রচুর প্ল্যাকার্ড, কাট আউট বিভিন্ন জায়গায় লাগানো হয়েছিল। সেই প্ল্যাকার্ড, যেখানে মহাদেবের সাজে আমি রয়েছি, সেগুলো দক্ষিণেশ্বরের বিভিন্ন জায়গায় পুজো হতে দেখেছি। সোদপুরে আমাদের বাড়ির পাশের বাড়িতে আমার সেই ছবি ঠাকুরঘরে রাখা রয়েছে। একটা ছোট ঘটনা বলি। একবার শ্রাবণ মাসে বাইকে করে ফিরছি, অল্প বৃষ্টি পড়ছিল তাই তাড়াহুড়ো করছিলাম। সামনে কাঁধে বাঁক নিয়ে একটি ছোট দল ছিল। তারকেশ্বর যাচ্ছিল সম্ভবত। আমি অধৈর্য হয়ে অনেকবার হর্ন দিয়েছিলাম। তখন তারা অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে আমাকে দু’চার কথা বলে। আমি হেলমেট পরেছিলাম, আমার মুখটা তারা দেখতে পায়নি। আমি একটু রেগেই পাশ কাটিয়ে সামনের দিকে যাই কিছু বলব বলে। সামনে গিয়ে দেখি, আমারই ছবি, মানে ‘ভোলা মহেশ্বর’-এর সাজে আমার ছবি সাজিয়ে নিয়ে তারা যাচ্ছে। আমি তখন স্পিচলেস। আর কী বলব? উল্টে আমিই আমার ছবিতে নমস্কার করে চলে আসি।

আপনার তো অনেকদিন টেলিভিশনে কাজ করা হয়ে গেল। সিনেমায় অভিনয় করার ইচ্ছে নেই?
জিতু: অফার অনেক পেয়েছি, মাঝেমধ্যেই পেয়ে থাকি কিন্তু আমি খুব চুজি। পাওলি দামের সঙ্গে একটি ছবি করেছি, ‘সুইটহার্ট’। সেখানে হিরো ছিলাম না, একটা স্পেশ্যাল অ্যাপিয়ারেন্স ছিল। শুধু পাওলি নয়, শ্রাবন্তী, শুভশ্রী… আমি কিন্তু বাংলার প্রধান নায়িকাদের প্রায় সবার সঙ্গেই কাজ করেছি ‘মহালয়া’ করার সুবাদে। সানন্দা টিভির ‘ভোলা মহেশ্বর’ করার পর থেকেই কিন্তু আমি ধারাবাহিকভাবে একাধিক চ্যানেল থেকে মহালয়ার অনুষ্ঠানে মহাদেবের ভূমিকায় অভিনয় করার অফার পাই। আসলে আমি ঠিক ছকবাঁধা নাচ-গান করা নায়ক হতে চাই না। এমন একটা চিত্রনাট্যে কাজ করতে চাই, যেখানে চরিত্রটাই নায়ক হয়ে উঠবে। আমি পার্সোনালি হিরো হতে চাই না। এখনও পর্যন্ত তেমন কোনও অফার আমি পাইনি। একটা ভাল চরিত্রের জন্য মুখিয়ে রয়েছি। হতে পারে সেই চরিত্রটা পর্দায় থাকবে পাঁচ মিনিট। কিন্তু সেই পাঁচ মিনিটে যেন দর্শকের মনে দাগ কেটে যেতে পারি।
এতজন নায়িকার সঙ্গে কাজ করেছেন, নায়িকাদের সঙ্গে আপনার কেমিস্ট্রি কেমন? টেলি-নায়িকা হোক বা চলচ্চিত্র নায়িকা…

জিতু: হা হা… অনেকে বলেন, আমি নাকি সব হিরোইনদের সঙ্গেই প্রেম করি। আর শ্রাবন্তী বলুন বা পাওলি, ওঁদের সঙ্গে যত অল্প কাজই করি না কেন, প্রচুর রেসপেক্ট পেয়েছি। ওঁরা একবারও আমাকে ফিল করতে দেননি যে আমি নতুন বা ওঁদের মতো অতটাও জনপ্রিয় কেউ নই।

আর টেলি-নায়িকারা?
জিতু: আমি কাউকে আঘাত করতে চাই না, কিন্তু এটা ঘটনা যে টেলিভিশনের একটি প্রজেক্টে আমার নায়িকার সঙ্গে সেই কেমিস্ট্রি আমি তৈরি করতে পারিনি। আর অন্য কোনও প্রজেক্টে এটা হয়নি। প্রত্যেকবার টেলি-সম্মানে আমার জুরি অ্যাওয়ার্ড বাঁধা ছিল। কয়েক বছর টানা সেই পুরস্কার আমি পেয়েছি। কিন্তু একটিমাত্র প্রজেক্টে এই কেমিস্ট্রিটা ঠিকমতো তৈরি না হওয়ার মূল কারণ বোধহয় এটাই যে আমি আমার প্রাপ্য সম্মানটুকু সেই নবাগতা নায়িকার থেকে পাইনি। অভিনেতা হিসেবে বা মানুষ হিসেবে তো একটা ন্যূনতম সম্মান আমি আশা করি আমার কাজের জায়গায়, তার উপর আমি এই প্রফেশনে সিনিয়র, ও একেবারেই নতুন! গোটা বিষয়টার ফল দাঁড়িয়েছে এই যে আমার চরিত্র এবং সেই নায়িকার চরিত্র, কোনওটাই ঠিকভাবে এস্টাবলিশড হয়নি।

কে সেই নায়িকা?
জিতু: নামটা বলতে চাই না।



মন্তব্য চালু নেই