নিখোঁজদের তালিকায় এবার তিন তরুণীর নাম

পরিরারের সদস্যদের কিছু না জানিয়ে উধাও হওয়াদের তালিকায় এবার যোগ হয়েছে তিন তরুণীর নাম। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন এসব তরুণীও জঙ্গি তৎপরতায় জড়িয়েছে বলে সন্দেহ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলায় জড়িত পাঁচ তরুণই দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন। ঘর থেকে পালিয়ে গিয়েই তারা জঙ্গি প্রশিক্ষণ নেন এবং এক পর্যায়ে আর্টিজানে আক্রমণ করে ২০ জনকে হত্যা করেন। এরপর জানা যায়, তাদের মত আরও তরুণ একই প্রক্রিয়ায় ঘর ছেড়েছে।

এ রকম নিখোঁজ তরুণদের ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে টেলিভিশনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে অভিভাবকদের পক্ষ থেকে আকুতি জানানো হচ্ছে। কিন্তু ধর্ম, মানবতা ও ইসলামের স্বার্থে ফিরে আসার এই আহ্বান পাত্তা দিচ্ছে না কেউ।

প্রথমে ১০ জনকে ফিরে আসার আহ্বান সম্বলিত বার্তা প্রচার হলেও এই তালিকা এখন বড় হচ্ছে। সবশেষ যোগ হলো তিন তরুণী নাইমা আক্তার, রেজওয়ানা রোকন ও রামিতা রোকনের নাম।

নিখোঁজ বেশিরভাগ তরুণের মত তিন তরুণীর পরিবারও আর্থিক দিক থেকে স্বচ্ছল এবং তারা উচ্চশিক্ষিতও। তবে কারা এবং কোথায় এদেরকে নিয়ে গেছে, সে বিষয়ে অন্ধকারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এদের বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা তৎপর থাকলেও এখন পর্যন্ত গোলকধাঁধায় তারা।

এখন পর্যন্ত নাম ছাড়া এই তরুণীদের বিষয়ে তেমন কোনও তথ্য দিতে পারছে না পুলিশ। আর চার তরুণের মধ্যে একজনের বিষয়ে কিছুটা তথ্য পাওয়া গেছে।

কেবল বাংলাদেশ নয়, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকেও পালিয়ে গিয়ে তরুণদের পাশাপাশি তরুণীরা মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনে জড়াচ্ছে।

তিন তরুণী

যে তিনজনের নাম জানা গেছে তাদের সবাই পাসপোর্টধারী। তারা কোথায় পড়তেন, কী করতেন, তারা কোনও সংগঠনের সঙ্গে জড়িত কি না, তাদের পরিবারের সদস্যদের অবস্থান বা অবস্থা কী-সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত বিস্তারিত তথ্য দিতে পারনি পুলিশ। কেবল এরা কোন এলাকায় থাকতেন, সে বিষয়টি প্রকাশ করেছে বাহিনীটি।

নিখোঁজদের তিন জনই থাকতেন রাজধানীর রামপুরা এলাকায়। এদের মধ্যে নাইমা আক্তারের পাসপোর্ট নম্বর বিসি ০০০৬৯৩৭। রেজওয়ানা রোকনের পাসপোর্ট নম্বর ০০৩৫১৯৮। আর রামিতা রোকনের পাসপোর্ট নম্বর: বিসি ০০৪৫৩৩৯।

এই তিনজন দেশের বাইরে চলে গেছে কি না- সে বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ইমিগ্রেশন) ফারজানা ইসলাম। তিনি বলেন, ‘কেবল এই তিন তরুণী নয়, নিখোঁজ সবার বিষয়েই ইমিগ্রেশনের একটি দল কাজ করছে। তাদের প্রতিবেদন এখনও না আসায় এদের বিষয়ে (তিন তরুণী) কিছু জানাতে পারছি না’।

রেজওয়ানা ও রামিতার নামের মধ্যে মিল থাকলেও তারা স্বজন কি না-তাও জানাতে পারেননি রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘নিখোঁজদের বিষয়ে আমার থানায় কেউ কিছু জানায়নি’।

অন্য চার তরুণ

এই তিন তরুণীর সঙ্গে যে চার তরুণকেও ফিরে আসার আহ্বান জানানো হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুসন্ধানে জানা গেছে, এদের একজন সেজান রউফ ওরফে অর্ক ওরফে মরক্কো থাকতেন রাজধানীল গুলশান এলাকায়। তার পাসপোর্ট নম্বর: ৪৭৬১৪৫৯৯২।

সেজানের প্রায় সমবয়সী রামপুরার বাসিন্দা সাদ কায়েস। তিনি থাকতেন রামপুরয়। তার পাসপোর্ট নম্বর: বিএফ ০৪৮৬৬৪২।

রামপুরারই আরেক বাসিন্দা চিকিৎসক রোকনুদ্দীন খন্দকারের নামও আছে নিখোঁজদের এই তালিকায়। তার পাসপোর্ট নম্বর: এএফ ১০১৩০৮৮)।

অন্যজন হলে বনানীর তাওসীফ হোসেন (পাসপোর্ট নম্বর- বিই ০৩৫২৭৬১ এবং ডব্লিউ ০৫৫৯২২৭)।

তাওসীফের বিষয়ে জানতে চাইলে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘কয়েকজন আগেও নিখোঁজ হয়েছিল বলে শুনেছিলাম। এখন আবার নিখোঁজদের নাম পাচ্ছি। এদের নিয়ে আমরা কাজ করছি তবে কেউ এখনো ফিরে এসেছে বলে কোন তথ্য আমার কাছে নেই।

সেই ১০ তরুণের হদিস নেই এখনও

গুলশান হামলার পর ফিরে গণমাধ্যমে আহ্বান জানানো হলেও নিখোঁজ ১০ তরুণের কেউ ফিরে আসেননি। এই তরুণরা হলেন ঢাকার ইব্রাহীম হাসান খান, আশরাফ মোহাম্মদ ইসলাম, ঢাকার তেজগাঁওয়ের মোহাম্মদ বাসারুজ্জামান, বাড্ডার জুনায়েদ খান, ধানমন্ডির জুবায়েদুর রহিম, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নজিবুল্লাহ আনসারী, সিলেটের তামিম আহমেদ চৌধুরী, মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ ওজাকি ও জুন্নুন শিকদার এবং লক্ষ্মীপুরের এটিএম তাজউদ্দিন।

র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, নিখোঁজ কিছু তরুণের বিষয়ে তথ্য পেয়েছেন তারা। তবে তাদের কেউ এই ১০ জনের মধ্যে আছে কি না তা জানাননি তিনি।ঢাকাটাইমস



মন্তব্য চালু নেই