নিখোঁজ জোহা প্রধানমন্ত্রীকে যা জানাতে চেয়েছিলেন (ভিডিওসহ)
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ লোপাটের ঘটনায় আলোচনার জন্ম দেওয়া তথাকথিত তথ্য প্রযুক্তিবিদ তানভির হাসান জোহা বুধবার রাত থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। তবে তার পরিবার দাবি করছে-কয়েকজন সশস্ত্র দুর্বৃত্ত তাকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। জোহা নিখোঁজের আগে একটি সংবাদ মাধ্যমের কাছে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের টাকা চুরির আসল ঘটনা আমি সংবাদ মাধ্যমকে বলেছি, এ কারণে আমাকে চাপ দেওয়া হচ্ছে। আমাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমি প্রধানমন্ত্রীকে পুরো ঘটনা জানাতে চাই।’
জোহা বলেছিলেন, অর্থ বরাদ্দ হয়ে গেছে। আমারা আবারও কাজ শুরু করব। আমি রবিবার (১৩ মার্চ) রাতেও র্যাবের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত কাজে অংশ নিয়েছি। আমি এখন তাদের আমন্ত্রণে ব্যক্তিগতভাবে ছায়া তদন্তকারী হিসেবে কাজ করছি।’
তানভির হাসান জোহা আরও বলেছিলেন, ‘আমি যদি কেউ না-ই হই তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘটনার তদন্তে কিভাবে কাজ করছি? আমাকে চিঠি দিয়ে তদন্ত কাজে ডেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘এর আগে সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার আমন্ত্রণে আমি জঙ্গি তৎপরতাসহ সাইবার অপরাধের বড়-বড় ঘটনা তদন্তে সহায়তা করেছি। তখন কোনও প্রশ্ন ওঠেনি। এখন একটি মহলের স্বার্থে আঘাত লাগায় তারা আমার বিরুদ্ধে লেগেছে।’
ভিন্ন এক প্রশ্নের জবাবে তানভির হাসান জোহা বলেছেন, ‘রবিবার রাতে বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়ে এটা নিশ্চিত হয়েছি যে, রিজার্ভের সুইফট কোডের কম্পিউটার আলাদা ছিল না। এটা সাধারণ কম্পিউটারের সঙ্গেই ছিল। এই কম্পিউটারের আলাদা কোনও নিরাপত্তা ছিল না।’
সাক্ষাৎকারে তানভির হাসান জোহা বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা নিয়ে তদন্তকারীরা কেউ কথা বলেননি। আমি বলেছি। আমি আমার দায়িত্ব থেকেই বলেছি। এটা প্রকাশ করা প্রয়োজন।’ তিনি দাবি করেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরি নিয়ে প্রকৃত তথ্য সংবাদ মাধ্যমের কাছে প্রকাশ করায় একটি মহল আমার ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছে। তাই তারা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। তারা তদন্ত সহায়তা থেকে আমাকে সরিয়ে দিতে চাইছেন। কারণ, আমি অনেক বিষয়েই প্রশ্ন তুলছি।’
নিখোঁজের আগে তানভির হাসান জোহা আরও বলেছিলেন, ‘আমি বিদেশি নাগরিকদের তদন্তে রাখা নিয়ে আপত্তি করেছি। কারণ, আমি মনে করি, হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি হোল (গর্ত) তৈরি করেছেন, আর এখন বিদেশি বিশেষজ্ঞদের হাতে তদন্তের নামে তথ্য তুলে দিলে আরও বড় হোল তৈরি হবে। আমি পুরো বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকেও জানাতে চাই।’
উল্লেখ্য, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) মন্ত্রণালয়ের সাইবার নিরাপত্তা বিভাগের ডিরেক্টর (অপারেশন) হিসেবে কর্মরত আছেন তানভির হাসান জোহা। বাংলাদেশ ব্যাংকের ১০১ মিলিয়ন ডলার রিজার্ভ চুরির বিষয়ে র্যাবের ছায়া তদন্ত টিমের সদস্য হিসেবে কাজ করছেন তিনি। কিন্তু হঠাৎ করেই বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে জোহা নিখোঁজ হওয়ার খবর প্রকাশ হয়। পরিবারের সদস্যদের দাবি, অপহরণ করা হয়েছে তাকে। এ ব্যাপারে কয়েকটি থানায় গিয়েও জিডি করা যায়নি বলেও অভিযোগ তাদের।
বৃহস্পতিবার কলাবাগানের নিজ বাড়িতে জোহার স্ত্রী কামরুন্নাহার জানান, বুধবার রাত সোয়া ১১ টায় কাজ শেষে কচুক্ষেত থেকে শেষবারের মতো ফোন দিয়েছিলেন জোহা। ফোন বলেছিলেন, ‘বাড়ি ফিরছি’। তবে সোয়া ১২ টার পর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জোহার এক বন্ধুর বরাত দিয়ে কামরুন্নাহার বলেন, আমাকে ফোন দেয়ার পরপরই জোহা তার এক বন্ধুকে ফোন দেন। সে কচুক্ষেতে গিয়ে জোহার সঙ্গে সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হচ্ছিল। তবে সিএনজি ছাড়ার আগেই দুটি গাড়ি এসে তাদের সামনে থামে। সশস্ত্র কয়েকজন তাদের গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে যায়। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের সামনে জোহার বন্ধুকে গাড়ি থেকে ফেলে দেয়া হলেও জোহাকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে দাবি তার স্ত্রীর।
জোহার স্ত্রী আরো অভিযোগ করেন, বুধবার রাত থেকে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট, কাফরুল ও কলাবাগান থানায় জোহার অপহরণ-নিখোঁজের জন্য জিডি করতে গেলে পুলিশ তার অভিযোগ আমলে নেয়নি।
এদিকে জোহা নিখোঁজের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘তদন্তের স্বার্থে তাকে গ্রেফতার করা হতে পারে। তবে গ্রেফতারের বিষয়টি আমি নিশ্চিত নই।’
মন্তব্য চালু নেই