নিঃসঙ্গ অস্ট্রেলিয় পুলিশ!

পুলিশের কাজ হলো সমাজে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। এই শাসন প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে অপরাধীদের হরহামেশাই গ্রেপ্তার করতে হয় পুলিশদের। কিন্তু আজ আমরা এমন এক পুলিশের ব্যাপারে জানবো যিনি সর্বশেষ অপরাধী গ্রেপ্তার করেছেন আজ থেকে চার বছর আগে। আর এই চার বছরের মধ্যে কোনো অপরাধীকেই এই পুলিশের আশেপাশে দেখা যায়নি। আপনারা যদি ভেবে থাকেন যে, নেলি ম্যাকসেন ইচ্ছে করেই অপরাধীদের গ্রেপ্তার করেননি তাহলে খুব ভুল হয়ে যাবে। কারণ অস্ট্রেলিয়ার এমন এক স্থানে নেলিকে দায়িত্ব পালন করতে হয় যেখানে খুব কম মানুষই থাকে। মোটকথা গত দশবছর ধরে এক প্রকার নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করছেন নেলি।

নেলি তার ৪০ বছরের পুলিশি জীবনে মোট তিনটি পৃথক রাজ্যে দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার এই বার্ডসভিল অঞ্চলে এসে বিগত তিন রাজ্যের কোনো অভিজ্ঞতাই এখানে কাজে লাগেনি। ব্রিটেনের চেয়ে আয়তনে বড় বার্ডসভিলের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশাল মরুভূমির ওপাশেই কুইন্সল্যান্ড। বিস্তীর্ণ এই মরুভূমিতে কোনো কাজ না থাকলে কেউ সচরাচর আসে না। কারণ একদিকে পানির সঙ্কট এবং প্রচণ্ড তাপের কারণে যেকোনো প্রাণীর পক্ষে এই মরুভূমিতে টিকে থাকাই মুশকিল। আর সেই বিরুপ পরিবেশেই দিনের পর দিন কাটাতে হয় সিনিয়ন কনস্টেবল নেলিকে।

মরুভূমির ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে দাড়িয়ে থেকে কাজ করা কিন্তু চাট্টিখানি কথা নয়। তবে ভাগ্যদেবিও কিন্তু নেলির পক্ষে নয়। তিনি যেদিন বার্ডসভিলে যোগদান করেন তার পরের দিনই ছিল অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা। এরকম বিরুপ পরিস্থিতির ভেতর দিয়েই নেলিকে কাজ শুরু করতে হয়। পুরো অঞ্চলে খুব কম মানুষ থাকার কারণে অপরাধ এবং অপরাধীর সংখ্যা নেই বললেই চলে।

প্রথম কাজ করতে আসার পর প্রায়ই কেঁদে ফেলতেন নেলি নিঃসঙ্গতার কারণে। সন্তান সন্ততিরা বিভিন্ন কারণে বার্ডসভিলে আসতে পারছিলেন না, এবং অন্য পুলিশ সদস্যরা না থাকায় মানসিক চাপটা আরও বেশিই ছিল তার। অবশেষে তার স্ত্রী-সন্তান আসলে পরিস্থিতি কিছুটা পাল্টে যায়। ‘আমি ভাগ্যবান যে শেষমেষ আমার পরিবার আমার কাছে চলে এসেছে। এর আগে যে জায়গাগুলোতে কাজ করেছি তার তুলনায় বার্ডসভিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। মাঝেমধ্যেই খাবার ফুরিয়ে গেলে, প্রচণ্ড তাপের মধ্যে দীর্ঘ রাস্তা গাড়ি চালিয়ে যেতে হয় শহরে।’

প্রায় চার বছর আগে একটি প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে ছোটো একটি ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনায় নেলি একজনকে গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হন। এটাই ছিল গত চার বছরে তার একমাত্র অপরাধী গ্রেপ্তার করা। তবে মরুভূমিতে কেউ আটকে গেলে তাকে উদ্ধার করতে যেতে হয় নেলিকে। এটাই সবচেয়ে চ্যালেঞ্জের কাজ তার জন্য। যদিও নেলিকে আর বেশিদিন এই চ্যালেঞ্জের কাজ করতে হবে না। আগামী বছরের শুরুতেই অবসরে যাচ্ছেন এই ৫৯ বছর বয়সী নিঃসঙ্গ পুলিশ সদস্য।



মন্তব্য চালু নেই