নারী দুই

লেখিকার বাসায় লেখিকা ও লতা বসে আছেন। সম্পর্কে তারা দু’জনে বান্ধবী। বেশ কয়েক দিন পর দেখা। লেখিকা বললেন, বিদেশের গল্প আরও কিছু শোনা। লতা বললেন, যা হবার হয়েছে। ও সব মনে করে আর কাঁদতে চাইনে। কবিতাটা?

– ভালো হয়েছে কিন্তু কোন পত্রিকায় দেবো?
-যে কোন পত্রিকায় দিলেই চলবে…

-নারীদের পত্রিকায় দিলে পাঠক বেশ টানবে, এইসব পত্রিকায় মেয়েদের একটু খোলা মেলা ভাবে উপস্থাপন করা হয়, তাই সবার আগ্রহ বেশী। কী ছেলে কী বুড়ো, সবার কাছেই এইসব পত্রিকার আগ্রহ আছে।
লতা লেখিকার কথার গুরুত্ব না দিয়ে বললেন, তুই কি নিয়ে লেখালেখি করছিস?
– আমি নারীবাদী। নারীদের নিয়েই লিখি।
লতা অসহায়ের মতো বললেন, না…রী বা…দী…
– এত অসহায়ের মতো করে বলছিস কেন? নারীবাদী লেখা লেখি কারণ আমাদের দাম সবাই দেয়। লেখার মান আর যাই হোক। লেখা হলেই হলো। তাছাড়া মেয়েদের দাম সবখানেই। আজকাল মেয়েরা সবখানেই আছে। অর্থ সমস্যায় পড়ছে না … ইনকাম এমনিতেই হয় যদি শরীর খাটাতে পারে।

লতা বিরক্ত হয়ে বললেন, নারীদের কোন বিষয় নিয়ে লিখছিস? কোন সেকটরে নারীরা পিছিয়ে আছে? এবার লেখিকাও বিরক্ত হলেন। বিরক্তির ভাবটা চেপে রেখে বললেন, পিছা-পিছির কোনো বিষয় নেই। এটা আমরা এমনিতেই বলি। আধুনিকতার নামে প্রগতির নামে আমরা ফ্রি সেক্স চর্চা করি। তাই তো দু বেলা খাবার, ভালো বাসস্থান, উন্নত শিক্ষার কথা না বলে বলছি যৌন শিক্ষার কথা, পাশ্চাত্য সংস্কৃতির সফলতার কথা।

-তা তো জানি।
– অবাধ যৌন জীবনের অধিকারী যে, সে অর্থ সমস্যায় পড়ছে না। যেখানে সেখানে নিজেকে মেলে ধরলে অর্থ আসে…।
লতা মৃদু হেসে বললেন, ওহ…তুই তো নারী বা…দী… মনেই ছিলোনা। তোদের দ্বাড়া সম্ভব।
লেখিকা অবিজ্ঞ লোকের মতো লতাকে বোঝাতে লাগলেন, দ্যাখ, যে মেয়ে অবাধ যৌনাচারে অভ্যস্থ নয় তার উপর পুরুষেরা নির্যাতন করে বেশি। কারণ তার উপর আগ্রহ সব মেয়ের চেয়ে বেশি। আর তাছাড়া পুরুষেরা সব সময় পিওর মেয়ে পছন্দ করে। মেয়েরা যদি পিওর না হয় তাহলে তার প্রতি পুরুষের আগ্রহ থাকবে না। ফলে সে নির্যাতনের হাত থেকে বেচে যাবে।
লতা ঘেন্নায় বললেন, এতে কি নির্যাতন কমে?
-কমে না বাড়ে তার হিশেব করি না। তবে আত্মহত্যা করেনা। মেয়েদের সতীত্ব টতীত্ব নিলে, জোর করে কেড়ে নিলে তার আত্ম সম্মানে লাগে, তাই আত্মহত্যাও করতে পারে যা স্বাভাবিক। আমরা নারীবাদীরা তা হতে দিতে চাই না। আমরা চাই সব মেয়ে আমাদের মতো হোক। তখন স্বভাবতই আত্মহত্যার প্রশ্নই উঠে না।
লতা উপহাস করে বললেন, বাহ! কী চমৎকার! আচমকা আবার লেখালেখির প্রসঙ্গে এসে বললেন, এখন কি লিখছিস যেন?
– কলংক নামে একটা উপন্যাস। এতে কি ভাবে ছাত্রী নির্যাতন করা হয় তার রগরগে বাস্তব প্রমান আছে।
লতা দু হাতে হাত ঘষে বললেন, কেমন প্রমান, কি করে পেলি? লেখিকা সবজান্তার মতো উত্তরে বললেন, আমরা সব জানি, সব খবরই রাখি।
লতা বিস্তারিত জানার জন্য বললেন, তারপর…
-এটা আলমগীরনগরের ছাত্রীদের নিয়ে।
-এখানে প্রায় ছাত্রীদের নির্যাতন করা হয়।
-প্রায় নয় প্রতিদিন-
-হয়তো বা। আমি তখন দেশেই ছিলাম। অই যে একবার সেক্যুলার চেতনায় বিশ্বাসী ছাত্ররা ধর্ষণের সেষ্ণুরী করে মিষ্টি বিতরণ করলো…
লেখিকা হেসে বললেন, আমি ওখানে ছিলাম… মিষ্টিও খেয়েছি। আসলে দ্যাখ আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। আমরা যদি আমাদের দেশ আমাদের মতো করে গড়ে নিতে না পারি তাহলে সব মাটি।
লতা অসহায় বোধ করে বললেন, তা ঠিক।
-খেয়াল করে দ্যাখ, আলমগীরনগরের একটা ছাত্রীও আত্মহত্যা করেনি।
-সত্যিই তো! লতার চোখে পানি এলো। চোখ মুছলেন।
লেখিকা বলতে লাগলেন, আমাদের ভয় হয় মৌলবাদীদের। মৌলবাদীরা আমাদের ক্ষতি করার জন্য সব সময় তৎপর। ওরা আমাদের সব জানে কিন্তু প্রকাশ করতে পারে না। আর কোন মেয়ে আছে যে তার লজ্জার কথা সবার সামনে প্রকাশ করবে। এই কাজটা অবশ্য আমাদের করার কথা। কিন্তু আমরা চাই লজ্জাহীন একটা সমাজ। কী আছে তা তো সবাই জানে। আমরা চাই খোলামেলা জীবন। এজন্যে আমাদের প্রশিক্ষিত ধর্ষক বাহিনী কাজ করছে।
-লাভ?
-লাভ সব সময় নগদ আসে না।
-বাদশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশজন ধর্ষক শিক্ষক আছে- লতার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে লেখিকা বলতে লাগলেন, শুধু বিশ জন নয়। আরো অনেক, অগনিত। শুধু বাদশাহীতে কেন সারা দেশের সব কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ওরা আছে।
-ছাত্রী নির্যাতন করে লাভ?
-লা…ভ আছে। লাভ না থাকলে কেউ কিছু করে। আমরা আমাদের এই দেশটাকে ইউরোপ এ্যামেরিকার মতো বানাতে চাই। অই দেশে গুলোর মতো হবে সব।
কিছু ক্ষণ দু’জনে চুপচাপ। লেখিকা ফের শুরু করলেন, দেশ বাদ। বিদেশ কেমন লাগলো, সেটাই বল তো।
লতা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, যে কবিতা তোকে দিয়েছি ওটাতে সব আছে…
-ওটা তোর জীবন। ওখানকার স্থানীয়দের জীবন কেমন?
-এ্যামেরিকায় বত্রিশ সেকেন্ডে একজন ধর্ষিত হয়। একশ পচিশটা ধর্ষণ করলে একবার শাস্তি। সে জন্য বোধহয় মামলা কম হয়। এই বাক্যটা শুনেই মনে হলো লেখিকা বিশ্ব জয় করলেন, আমরা সেটাই চাই। মামলা কম হবে এদেশেও। মামলা হলে নারীদের অর্থ ব্যয় করতে হবে, সময় নষ্ট হবে।
লতা মাথা নিচু করে জিজ্ঞেস করলেন, তুই জানিস একটা ধর্ষিতা মেয়ের যন্ত্রণা?
লেখিকা বেহায়ার মতো হা…হা করে হাসতে হাসতে বললেন, আমি…আমি চাই সারা পৃথিবীর যতো পুরুষ আছে, সবাই আমাকে ধর্ষণ করুক। আমি একটুও বাধা দেবো না।
লতা অদ্ভুত হাসি দিয়ে বললেন, আচ্ছা…এত…?… যাক আমি চলি…আমার কবিতা কি করবি?
লেখিকা অন্য মনস্ক হয়ে বললেন, শোন, আমি সত্য কথা বল্ িআমি প্রতারনা, হয়রানি করতে চাই না। তোর অই কবিতা কোথাও ছাপা হবে না। আমরা চাই না কেউ আমাদের বিরোধীতা করুক। বাংলাদেশের কোনো আধুনিক প্রগতিশীল পত্রিকা ওটা ছাপাবেনা।
‘আচ্ছা-যাই। ছাপা না হয় নাই’ বলে চেয়ার ছেড়ে উঠে চলে যেতে লাগলেন লতা। লেখিকা সৌজন্যতা দেখাতে দাড়িয়ে বললেন, আবার দেখা হবে।



মন্তব্য চালু নেই