নারীরা কেন তাদের চুল ঢেকে রাখেন?

ধর্মের প্রতি আনুগত্যর কারণে বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মের নারীরাই মাথা ঢেকে রাখেন। বার্লিনের ইহুদি জাদুঘরে এক প্রদর্শনীতে প্রশ্ন রাখা হয়েছে, মাথা ঢেকে রাখার ক্ষেত্রে কোন বিষয়টি অনুপ্রাণিত করে তাদের? গ্রেস কেলি ৬০ বছর আগে মাথায় স্কার্ফ পরা শুরু করেছিলেন, এটা তার সাজসজ্জার অংশ। আজ বিভিন্ন ধর্মের নারীরা তাদের বিশ্বাসের কারণে মাথার চুল কাপড়ে ঢেকে রাখেন। বহু বছর ধরেই এই প্রথা চলে আসছে। বহু সংস্কৃতিতে নারীদের মাথার চুল দেখানোতে বিধি-নিষেধ রয়েছে। তবে যখন সামাজিক রীতিনীতি এবং ধর্মীয় ভাবধারা একসাথে হয়, তখন কিছুক্ষেত্রে দ্বন্দ্ব ও সংঘাতেরও জন্ম দেয়। এক্ষেত্রে একটা উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে।

এই যেমন, ফ্রান্সের সমুদ্রসৈকতে বিকিনি পরেন অনেকেই। সে সময় তাদের মধ্যে যদি কোনো মুসলিম নারী বুর্কিনি পরে উপস্থিত হন, তখন অন্যান্যরা অস্বস্তি বোধ করেন, এমনকি ক্ষুব্ধও কেউ কেউ হন। একটি অসাম্প্রদায়িক সমাজ ধর্মকে কতখানি সহ্য করে? করতে পারে? শ্যারশে লা ফাম শীর্ষক প্রদর্শনীর বিষয় ঠিক এটাই। বার্লিনের ইহুদি জাদুঘরে এই প্রদর্শনী চলবে ২ জুলাই পর্যন্ত। উদ্বোধনীর দিন জাদুঘরের কিউরেটর বা তত্ত্বাবধায়ক মিরিয়াম গোল্ডমান এর সঙ্গে কথা বলেছে ডয়চে ভেলে। মূল প্রসঙ্গ ছিল নারীরা কেন তাদের চুল ঢেকে রাখেন?

ডয়চে ভেলে : শ্যারশে লা ফাম বা ‘লুক ফর দ্য উইমেন’ প্রদর্শনীরটির আক্ষরিক অর্থ নারীদের খুঁজুন। অর্থাৎ খুঁজে নিন তাদের অস্তিত্ব। আমাদের কি আসলেই নারীদের চেহারার দিকে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন?
মিরিয়াম গোল্ডমান : মুসলিম নারীদের হিজাব করা সম্পর্কে আমার মতামত হলো, এটা নারীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর পুরুষরাই এটা করেছে, করছে। কেননা ধর্মীয় যে বিধি-বিধান সেটাও তো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুরুষদেরই লেখা। এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে আমরা নারীদের একটা সুযোগ করে দিতে চাই, যাতে তারা মনের কথা খুলে বলতে পারেন। আমরা তাদের মাথা ঢাকার বিষয়টি নিজেদের মতো করে ভাবি। কিন্তু আসলে যারা এটা করছেন, তারা কী ভাবছেন সেটাই দেখার বিষয়।

এই প্রদর্শনীতে খ্রিষ্টান, ইহুদি, ইসলাম, সব ধর্মের নারীদের দেখানো হয়েছে, যারা মাথা ঢেকে রাখেন। এদের মধ্যে কি কোনো যোগসূত্র রয়েছে? শালীনতা প্রতিটি ধর্মেই আছে। এর মধ্যে চুল এমন একটা বিষয়, যেটাকে অনেক ধর্মে একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে নারীদের চুল শুধুমাত্র স্বামী বা পরিবারের মানুষ দেখতে পারবে। যে বিষয়টি আমাকে বিস্মিত করে তা হচ্ছে, যে নারীরা হিজাব করেন, তারা কি সত্যিই এ কথা বিশ্বাস করেন যে চুল দেখানোর মধ্যে পাপ আছে? গোঁড়া ইহুদি নারীরাও বর্তমানে অভিনব পদ্ধতিতে মাথা ঢাকেন। এ সবের বিরুদ্ধে কখনো কখনো প্রতিবাদ হয়েছে, আন্দোলন হয়েছে, তার কিছু এই প্রদর্শনীতে উপস্থাপন করা হয়েছে।

আপনারা কি চাচ্ছেন যে দর্শনার্থীরা এ সব ছবি দেখে এবং বিষয়গুলো জেনে প্রশ্ন করুক? আর সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য কি কোনো ব্যবস্থা রেখেছেন আপনারা? না, নারীকে কেন্দ্র করে সামাজিক রীতিনীতি নিয়ে সাম্প্রতিককালে যেসব বিতর্ক রয়েছে, এই প্রদর্শনীতে সেগুলো উঠে এসেছে। এই যেমন ফ্রান্সে বুর্কিনি নিষিদ্ধ করার প্রসঙ্গ। খ্রিষ্টধর্মের ক্ষেত্রে যেমন বলা হয় যে, এটা একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। এখানে প্রদর্শনের কিছু নেই। কিন্তু ইহুদি বা ইসলামে বিষয়টি ভিন্ন: ধর্মীয় প্রথা এবং সামাজিক রীতিনীতি ওতোপ্রতোভাবে জড়িত সেখানে।

ইহুদি নারীদের তুলনায় মুসলিম নারীদের মাথার স্কার্ফ কি বেশি নজর কাড়ে? হ্যাঁ, ঠিক তাই। আমার মনে হয়, ইহুদি নারীদের সঙ্গে অতীতে খুব খারাপ আচরণ করা হয়েছে। তাদের মূল্যবোধে আঘাত করা হয়েছে। ইহুদিদের মধ্যে এই প্রচলনটা এসেছে, কারণ সংখ্যালঘু গোষ্ঠী হিসেবে তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হয়েছিল। ইতিহাস থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে তারা ঠিক করেছেন যে এভাবে তারা নিজের দেশ ও জাতির প্রতি কীভাবে সম্মান দেখাবে। কিন্তু মুসলিম নারীরা কোনো সংহতি দেখানোর জন্য বা রাজনৈতিক কোনো কারণে এটা ব্যবহার করেন না।

নারীদের মাথা ঢেকে রাখার বিষয়ে আপনার মতামত কী? এটা আসলে লিঙ্গ বৈষম্য। এটার সঙ্গে শক্তি এবং যৌনতা জড়িয়ে রয়েছে। প্রশ্ন হলো, পুরুষ নারীর মাথার চুলকে কীভাবে দেখে? তারা নারীর কেশকে যৌন আবেদনময় হিসেবে মনে করে। তাই তারাই ঠিক করে দিয়েছে যে, নারীদের এটা লুকিয়ে রাখতে হবে। কেননা এটা দেখে তাদের উত্তেজনা হয়।

সূত্র : ডয়চে ভেলে



মন্তব্য চালু নেই