নারীদের হাড়ের ক্ষয় কেন বেশি হয়?
হাড়ের ভেতরের ঘনত্ব বাড়া-কমা একটি চলমান প্রক্রিয়া। ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত হাড়ের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। তবে ২০ বছর বয়স পর্যন্ত হাড়ের ভেতরের গঠন ও ক্ষয় একই গতিতে চলতে থাকে। বয়স ৪০ বছর পার হলে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাড়ের ক্ষয়ের মাত্রা একটু একটু করে বাড়তে থাকে। পুরুষের তুলনায় নারীরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। বিশেষ করে নারীদের মেনোপজ বা ঋতুস্রাব বন্ধের পর শরীরে ইস্ট্রোজেন নামক হরমোন কমে যায়, ফলে হাড়ের ক্ষয়ের মাত্রা বেড়ে যায়।
কী কী কারণে নারীদের হাড় ক্ষয় বেশি হয়?
• মেনোপজ বা ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া।
• পর্যাপ্ত পরিমাণ শারীরিক পরিশ্রম না করা।
• পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি গ্রহণ না করা।
• শরীরে ওজন (বিএমআই অনুযায়ী অতিরিক্ত কম হলে)।
• অতিরিক্ত ধূমপান বা অ্যালকোহল পান করলে।
• তা ছাড়া কিছু কিছু অসুখে হাড় ক্ষয়ের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। যেমন :
• শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা কমে গেলে।
• শরীরে থাইরয়েড বা প্যারালাইরয়েড হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেলে।
• যে রোগে খাবার শোষণ ব্যাহত হয়, যেমন : সিলিয়াজ ডিজিজ, ক্রনস ডিজিজ।
• যেসব রোগে দীর্ঘদিন শুয়ে থাকতে হয়, হাঁটাচলা করতে পারে না, সে ক্ষেত্রে হারের ক্ষয় বেশি হয়। যেমন : ব্রেইন স্ট্রোক, এমআইভি, স্তন ক্যানসার ইত্যাদি।
• তা ছাড়া কিছু ওষুধও হাড়ের ক্ষয় বাড়িয়ে দেয়। যেমন : কটিকেস্টেরয়েড, খিচুনিবিরোধী ওষুধ।
• ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ।
হাড় ক্ষয়ের লক্ষণ কী?
যেহেতু বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে হাড় ক্ষয় একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, তাই প্রাথমিক পর্যায়ে তেমন কোনো লক্ষণ থাকে না। কিন্তু হাড়ের ভেতরের উপাদান বা ত্বক অধিক পরিমাণ কমে গেলে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা যায়। যেমন : সারা শরীরে ব্যথা অনুভূত হয়। বেশিক্ষণ হাঁটাহাঁটি বা চলাচল করতে কষ্ট হয়। শরীরে ভারসাম্য কমে যায়। যার ফলে পড়ে গিয়ে হাড় ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। আত্মবিশ্বাস বা মনোবল কমে যায়। এ কারণে নারীদের হিপ ফ্যাকচার বেশি দেখা যায়।
হাড় ক্ষয় নির্ণয় করবেন কীভাবে?
হাড়ের ক্ষয় রোগ সহজেই নির্ণয় করা যায়। চিকিৎসক রোগীর ক্লিনিক্যাল উপসর্গ পর্যবেক্ষণ, রোগীর বয়স, পূর্ববর্তী রোগ ও ওষুধের হাড়ের এক্স-রে ও বিএসডি (বোন মিনারেল ডেনসিটি) পরীক্ষার মাধ্যমে হাড়ের ঘনত্ব নির্ণয় করা যায়।
হাড় ক্ষয় প্রতিরোধ করণীয় :
১. সুষম খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা। যেমন : প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা। যেমন : ননী তোলা দুধ, কম স্নেহজাতীয় দই, কড লিভার অয়েল ইত্যাদি।
২. নিয়মিত শরীরচর্চা ও ব্যায়াম করা।
৩. ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করুন।
৪. পতন বা পড়ে যাওয়া রোধ করুন।
৫. ৫০-এর ঊর্ধ্ব প্রত্যেক নারীর হাড়ের ঘনত্ব নির্ণয় করতে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
হাড় ক্ষয়ের চিকিৎসা
চিকিৎসার মূল উদ্দেশ্য হলো আপনার হাড়কে শক্তিশালী করে তোলা, হাড় ক্ষয়ের হার কমানো। সর্বোপরি হাড় ভাঙার ঝুঁকি কমানো। এই চিকিৎসায় বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ব্যবহৃত হয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য : এলেন্ডানেট সোডিয়াম, রিমোড্রোনেট সোডিয়াম, ইবানড্রেনিক এসিড, জলিবিক এসিড, হরমোনের সমস্যা থাকলে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি সালিলেন্ট।
হাড় ক্ষয়ের চিকিৎসা না করলে পরিণতি
হাড় ক্ষয় প্রাথমিক অবস্থায় তেমন উপসর্গ থাকে না, তখনই যন্ত্রণাদায়ক হয় যখন হাড়ে ফাটল ধরে বা হাড় ভেঙে যায়। হাড় ক্ষয়ের ফলে হাড়ের ঘনত্ব কমে হাড় দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে যায়। যার ফলে সামান্য আঘাত লাগলে কিংবা পড়ে গেলে, এমনকি দৈনন্দিন স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে গিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গার হাড় ভেঙে যেতে পারে।
মন্তব্য চালু নেই