নাবালিকা মেয়ের কান্না: ‘আমার বিয়ে হবে এখানে, তা আমি নিজে জানতাম না’

মেয়েকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে পাত্রের বাড়িতে এনে জোর করে বিয়ে দেওয়ার আয়োজন করেছিলেন মা-বাবা৷ কিন্তু ছাঁদনাতলায় হঠাত্‍ বেঁকে বসে তেরো বছরের কন্যা৷ অথচ মা-বাবা নাছোড়, কিশোরী কন্যার বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু করতে পুরোহিতকে নির্দেশ দেন৷ জোর করে শাঁখা-পলা পরিয়ে দেওয়া হয় বালিকা কনের হাতে৷ বরের বয়স তেইশ৷ কোনও উপায় না দেখে নাবালিকা বধূ বিয়ের পিঁড়ি থেকেই চিৎকার করে পাড়া-প্রতিবেশীদের জড়ো করে৷

পাড়ার লোকেরাই এই নাবালিকা বিবাহ-র খবর দেন শিশু কল্যাণ সমিতিতে৷ শেষপর্যন্ত চাইল্ড লাইনের মহিলা কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে নাবালিকাকে উদ্ধার করেন৷ মঙ্গলবার এই ঘটনার সাক্ষী থাকলেন উত্তর দিনাজপুরের ইটাহারের দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দারা৷ বালিকার অনিচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছে পুলিশ৷ এই ঘটনার পর আর মা-বাবার কাছে ফিরে যেতে না চাওয়ায় এই নাবালিকাকে আপাতত রায়গঞ্জের হোমে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।

উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়া থানার পায়রা গ্রামের বাসিন্দা ওই নাবালিকা স্থানীয় হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী৷ বাবা শ্যামল মণ্ডল উত্তর দিনাজপুরের এক ছেলের সঙ্গে একমাত্র মেয়ের বিয়ে ঠিক করেছিলেন৷ ছেলে অসীম বর্মন কলকাতার ‘শিশুমঙ্গল’ হাসপাতালের ওয়ার্ড বয়ের কাজ করেন৷ অথচ বিয়ের ব্যাপারে মেয়ে বিন্দুবিসর্গ জানত না বলে অভিযোগ৷

ঘুরতে যাওয়ার নাম করে বাবা-মায়ের সঙ্গে সোমবার কলকাতা-রাধিকাপুর এক্সপ্রেস ট্রেনে চড়ে বসে সে৷ বিয়ের দিন সকালে নাবালিকা মেয়েকে নিয়ে বাবা-মা সোজা হবু পাত্রের দুর্গাপুর গ্রামের ভুপালপুরের বাড়িতে ওঠেন৷ কিন্তু তখনও তেরো বছরের কন্যা বুঝতে পারেনি যে ওই ছেলেই তার জীবনসঙ্গিনী হতে চলেছে৷ বিষয়টি স্পষ্ট হল আরও পরে৷ রাতে ছাদনাতলায়।

বুধবার রায়গঞ্জের দেবীনগরের হোম থেকে কান্নাভেজা গলায় ওই কিশোরী জানায়, আমার বিয়ে হবে এখানে, তা আমি নিজে জানতাম না৷ তাছাড়া বাবা বাদুড়িয়ার বাড়িতে বলেছিলেন, আত্মীয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানের কথা৷ কিন্তু আমাকে যে বিয়ে করতে হবে, তা আগে বুঝলে আসতাম না৷ আর বাড়ি ফিরতে চাই না৷ কেননা, বাড়ি ফিরলে বাবা- মা মারধর করবেন৷”

জেলা শিশু কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান অসীমকুমার রায় বলেন, “মাত্র তেরো বছরের মেয়েকে নিজের বাড়ি থেকে ফুঁসলে বাবা-মা বিয়ে দিচ্ছেন এই খবর পেয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়৷” তবে কাউন্সেলিং করে যাতে নাবালিকাকে তাড়াতাড়ি পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া যায় সে ব্যাপারে উদ্যোগী হবেন বলে জানিয়েছেন সমাজকল্যাণ দফতরের জেলা আধিকারিক পিনাকী গুপ্তা।-সংবাদ প্রতিদিন



মন্তব্য চালু নেই