নাটকীয়তায় এরশাদের মঞ্জুর হত্যা ও রাডার মামলা

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের বিরুদ্ধে বর্তমানে ঢাকার নিম্ন আদালতে দুটি মামলা বিচারাধীন। মামলাগুলোর মধ্যে একটি বিমানের রাডার ক্রয়ে দুর্নীতি এবং অন্যটি জেনারেল আবুল মঞ্জুর হত্যা মামলা।

এরশাদের মামলা দুটিতে যেন নাটকীয়তার অন্ত নেই। একের পর এক নাটকীয় ঘটনা ঘটেছে। নাটকীয়তার মধ্যে জেনারেল আবুল মঞ্জুর হত্যা মামলা রায়ের পর্যায় থেকে পুনরায় তদন্তে গিয়েছে এবং রাডার দুর্নীতি মামলার শুনানিতে বিচারক বিব্রতবোধ করায় বিচার ঝুলে গেছে।

প্রায় ২০ বছর ধরে বিচারচলমান বহুল আলোচিত মেজর জেনারেল মঞ্জুর হত্যা মামলায় ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ হোসনে আরা বেগম রায় ঘোষণার জন্য গত বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন। কিন্তু তার আগেই ওই বিচারককে বদলি করায় নতুন বিচারক খন্দকার হাসান মো. ফিরোজ রায় থেকে পুনরায় যুক্তিতর্ক শুনানির জন্য ওই বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন। ওই তারিখে রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটির তদন্তেÍ কিছু ত্রুটি উল্লেখ করে অধিকতর তদন্তের আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। ফলে ঝুলে যায় বিচার।

বর্তমানে মামলাটি সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহার আকন্দ তদন্ত করছেন। এ পর্যন্ত তিনি কয়েক দফা সময় নিলেও প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেননি।

মামলায় এরশাদ ছাড়াও মেজর (অব.) কাজী এমদাদুল হক, লে. কর্নেল (অব.) মোস্তফা কামাল উদ্দিন ভূইয়া, মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুল লতিফ ও লে. কর্নেল (অব.) শামসুর রহমান শামসও আসামি।

প্রায় ৩৫ বছর আগে সংঘটিত এ হত্যাকা-ের বিচার ২১ বছরে প্রায় ১২ জন বিচারকের হাত ঘুরেছে।

১৯৮১ সালের ১ জুন জেনারেল মঞ্জুরকে পুলিশ হেফাজত থেকে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। ১৯৯৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জেনারেল মঞ্জুরের বড় ভাই ব্যারিস্টার আবুল মনসুর আহমেদ বাদী হয়ে চট্টগ্রামের পাঁচলাইস থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই বছরের ১৫ জুলাই তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল কাহার আকন্দ আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

অন্যদিকে প্রায় ২০ বছর ধরে চলমান বিমানের রাডার ক্রয়ে দুর্নীতির মামলার বিচারও ঝুলে গেছে। মামলাটি ঢাকার বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন থাকা অবস্থায় গত বছরের ১১ জুন যুক্তিতর্কের শুনানি পর্যায়ে বিব্রতবোধ করেন বিচারক। এরপর মামলাটির বিচারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ মো. জহুরুল হক। কিন্তু তিনিও বদলি হয়ে যাওয়ায় মামলার দায়িত্ব পড়েছে বর্তমান মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লার ওপর। মামলাটিতে এরশাদের পক্ষে আংশিক শুনানি হয়েছে। পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য রয়েছে।

মামলাটিতে এরশাদ ছাড়াও আরো তিনজন আসামি রয়েছেন। অপর তিনজন হলেন- বিমানবাহিনীর প্রাক্তন সহকারী প্রধান সুলতান মাহমুদ, মমতাজ উদ্দিন আহমদ ও ইউনাইটেড ট্রেডার্স লিমিটেডের পরিচালক এ কে এম মুসা। মামলায় মুসা পলাতক এবং এরশাদসহ তিন আসামি জামিনে রয়েছেন।

১৯৯২ সালের ৪ মে তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরো মামলাটি দায়েরের পর ১৯৯৪ সালের ২৭ অক্টোবর আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। ১৯৯৫ সালের ১২ আগস্ট এরশাদসহ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত মামলাটি সুপ্রিম কোর্টের আদেশে স্থগিত ছিল। মামলার ১৮ বছর পর ২০১০ সালের ১৯ আগস্ট শুরু হয় বাদীর সাক্ষ্যগ্রহণ।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা অবৈধ আর্থিক সুবিধা নিয়ে ফ্রান্সের থমসন সিএসএফ কোম্পানির অত্যাধুনিক রাডার না কিনে বেশি দামে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্টিং কোম্পানির রাডার কিনে সরকারের ৬৪ কোটি ৪ লাখ ৪২ হাজার ৯১৮ টাকা আর্থিক ক্ষতি করেন।

এদিকে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশের ৮৯টি উপজেলায় টেলিফোন লাইন স্থাপনে (টিঅ্যান্ডটি) দুর্নীতি মামলায় ২০০৯ সালের ২ জানুয়ারি খালাস পান এরশাদ। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যে অর্থপাচারের অভিযোগ থেকে তিনি ও তার বান্ধবী মরিয়ম মমতাজ মেরীকে অব্যাহতি দিয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়।

অন্যদিকে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আরো তিনটি মামলায় এরশাদ খালাস পান। মামলাগুলো হলো- বিটিভির ইএনজি ক্যামেরা ক্রয় সংক্রান্ত দুর্নীতির মামলা, শিল্প ব্যাংকের ঋণ গ্রহণ সংক্রান্ত দুর্নীতি ও আলোচিত স্বর্ণ চোরাচালান সংক্রান্ত দুর্নীতির মামলা।রাইজিংবিডি



মন্তব্য চালু নেই