নাগরিকদের হাতে স্মার্টকার্ড আগস্টে
বারবার তারিখ পেছানোর পর অবশেষে আলোর মুখ দেখছে স্মার্টকার্ড। আগামী আগস্টেই নাগরিকের হাতে এই উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র (স্মার্টকার্ড) তুলে দেয়ার পরিকল্পনা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগস্টে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন শেষে প্রথমে ঢাকা মহানগরীর ভোটারদের মাঝে এটি বিতরণ করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ না করলেও ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা শিগগিরই স্মার্টকার্ড বিতরণে যাবো।’
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দিন বলেন, ‘আগামী মাসেই স্মার্টকার্ড বিতরণের কাজ শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছি। সব গুছিয়ে এনে যথাসময়ে বিস্তারিত তথ্য গণমাধ্যমে জানানো হবে। কীভাবে বিতরণ করা হবে, বিতরণের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করেই সার্বিক কর্মপরিকল্পনা গণমাধ্যমে তুলে ধরা হবে।’
প্রসঙ্গত, বিশ্বব্যাংকের সহায়তাপুষ্ট ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং এক্সেস টু সার্ভিস’ (আইডিইএ) প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এই প্রকল্পের অধীনেই স্মার্টকার্ড তৈরির কাজ চলছে।
ইসি সূত্র জানায়, গত বছরের ১৪ জানুয়ারি ১৮ মাসের মধ্যে ৯০ মিলিয়ন (৯ কোটি) স্মার্টকার্ড তৈরি করে দেওয়ার জন্য ফ্রান্সের অবার্থার টেকনলোজিস নামের একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে ইসি। কিন্তু এক বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও কাজের তেমন অগ্রগতি হয়নি। ফলে চলতি বছরের ১১ ও ১২ মে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসে রিভিউ মিটিংয়ে ২০১৭ সালের মধ্যে স্মার্টকার্ড বিতরণ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়।
এছাড়া ৮ জুন জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগ থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের কাছে পাঠানো প্রস্তাবনায় বলা হয়, চুক্তি অনুযায়ী ৯০ মিলিয়ন কার্ড পর্যায়ক্রমে অবার্থার টেকনোলজিসের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কার্ড প্রস্তুত ও বিতরণের জন্য নির্ধারিত সময়সূচি কিছুটা বিলম্বিত হয়েছে। যা সমন্বয়ের জন্য সরেজমিনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সার্বিক প্রস্তুতি ও আইডি কার্ড উৎপাদন কার্যক্রম পরিদর্শন করা প্রয়োজন।
ইসি সূত্রে জানায়, ২০১৬ সালের জুনে নাগরিকের হাতে স্মাটকার্ড দেয়ার কথা ছিল ইসির। কিন্তু সময় মতো না দিতে পারার আশঙ্কা ইসি মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ব্যয় না বাড়ানোর শর্তে এ প্রকল্পে আঠার মাস সময় বাড়িয়ে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় নেয়। কিন্তু এ সময়ের মধ্যেও জনগণের কাছে স্মার্টকার্ড বিতরণ শেষ করা নিয়ে দেখা দেয় শঙ্কা। এ নিয়ে স্মার্টকার্ড উৎপাদন ও বিতরণে জরুরিভিত্তিতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করার জন্য ইসিকে তাগাদা দেয় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)।
সম্প্রতি অর্থমন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ খালেদ-উর-রহমান ইসি সচিবকে এক চিঠিতে জানান, গত ১১ ও ১২ মে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসে ‘ত্রিপক্ষীয় পর্যালোচনা বৈঠকে’ (ট্রাইপারটাইট পোর্টফোলিও রিভিও মিটিং) বিভিন্ন প্রকল্পের সঙ্গে ইসি সচিবালয়ের বাস্তবায়নাধীন ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং এক্সেস টু সার্ভিস’ (আইডিইএ) প্রকল্পের বিষয়েও আলোচনা হয়। এতে বিশ্বব্যাংক, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, ইসি সচিবালয় ও আইডিইএ প্রকল্পের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনায় উল্লেখ করা হয় যে, বিশ্বব্যাংক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পটি ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ সালে সমাপ্ত হবে। কিন্তু প্রকল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম জনগণের কাছে এনআইডি কার্ড বিতরণ ইতোমধ্যে আরম্ভ করা সম্ভব হয়নি। আলোচনায় প্রকল্প পরিচালক উল্লেখ করেন, ত্রুটির কারণে চার মাস কার্ড উৎপাদন বন্ধ ছিল এবং এ কারণে কার্ড বিতরণ কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এতে সভায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কার্ড বিতরণ কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করার বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। এ অবস্থায় প্রকল্পের বাকি সময়ের মধ্যে কার্ড উৎপাদন ও বিতরণ কার্যক্রম এবং সফলভাবে প্রকল্প সম্পন্ন করার বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নিতে ইসি সচিবকে ইআরডির পক্ষ থেকে চিঠি দেয়া হয়।
ইসি সূত্রে জানা যায়, ৮ জুন থেকে ১৬ জুন বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দল স্মার্টকার্ড প্রকল্প পরিদর্শন করে এর সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন।
সম্প্রতি এনআইডি অনুবিভাগ সিইসিকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দল গঠন করে তাতে সদস্য হিসেবে ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম ও স্মার্টকার্ড প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেলারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দীনকে রাখার প্রস্তাব করলেও ইসি সচিব ও প্রকল্প পরিচালককে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে অনুমোদন দেন সিইসি। পরে তারা ১৭ থেকে ২৪ জুন ফ্রান্স সফর করেন ইসি সচিব সিরাজুল ইসলাম ও প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দীন।
বর্তমানে দেশে প্রায় ১০ কোটি ভোটার রয়েছে। এর মধ্যে ইতোমধ্যে কোটি নাগরিকের স্মার্টকার্ড বিতরণের জন্য প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ মূসা।
মন্তব্য চালু নেই