না’গঞ্জে সাত খুনের তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত
নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনায় আদালতের নির্দেশে গঠিত প্রশাসনিক তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে। আগামী সপ্তাহে প্রতিবেদন আদালতের কাছে দাখিল করা হবে।
তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রথম সচিব (উপ-সচিব) আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বৃহস্পতিবার বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুতের কাজ আমরা চূড়ান্ত করেছি। শব্দগুলো ঠিক আছে কিনা তা দেখা হচ্ছে। আশা করছি আগামী সপ্তাহে আদালতের কাছে প্রতিবেদন দিতে পারব।’
তদন্ত কমিটি গঠনের ১১ মাসের মাথায় প্রতিবেদন জমা দেওয়া হচ্ছে।
ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তি ও প্রতিবেদনের সুপারিশের বিষয়ে জানতে চাইলে মহিউদ্দিন এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু না জানিয়ে বলেন, ‘বিষয়গুলো বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে এসেছে। তদন্ত প্রতিবেদনে আমরা সব বিষয়ই রাখার চেষ্টা করেছি। সাক্ষীরা যে সব তথ্য দিয়েছেন তাও লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।’
গত বছরের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহীমকে অপহরণ করা হয়। তিন দিন পর শীতলক্ষ্যা নদীতে তাদের লাশ পাওয়া যায়।
এর পর আদালতের নির্দেশে ৭ মে অভিযোগ তদন্তে তখনকার অতিরিক্ত সচিব (জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়) শাহজাহান আলী মোল্লাকে (এখন সরকারি কর্ম কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সচিব) প্রধান করে সাত সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
কমিটির কয়েকজন সদস্য জানিয়েছেন, নিজেদের মন্ত্রণালয়ের কাজে ব্যস্ত থাকায় তদন্তকাজে সময় দিতে পারেননি তারা। সমন্বয়হীনতাও ছিল। কমিটির আহ্বায়ক বদলি হলে পুরো তদন্তকাজ স্থবির হয়ে পড়ে।
গত ৯ নভেম্বর কমিটির আহ্বায়ক মো. শাহজাহান আলী মোল্লাকে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) ভারপ্রাপ্ত সচিব হিসেবে বদলি করা হয়। এর পর ৯ ডিসেম্বর নতুন আহ্বায়ক হন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুল হাকিম। কিন্তু এর পরদিনই শাহজাহান আলী মোল্লাকে পুনর্বহালের নির্দেশ দেন আদালত। আবার বহাল করা হয় আগের আহ্বায়ক শাহজাহান আলী মোল্লাকে।
তদন্ত কমিটির একজন সদস্য জানান, কমিটি চার শতাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী, সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, র্যাবের মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান, অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান রয়েছেন।
কাউন্সিলর নজরুলসহ সাতজনকে অপহরণ ও হত্যার জন্য র্যাবকে দায়ী করে নজরুলের শ্বশুর শহীদুল অভিযোগ তোলেন, কাউন্সিলর নূর হোসেন অর্থ দিয়ে র্যাবের মাধ্যমে তার জামাতাকে হত্যা করিয়েছে।
এর পর র্যাব-১১ এর কমান্ডিং অফিসার (সিও) লে. কর্নেল সাঈদ তারেক, মেজর আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার এম এম রানাকে র্যাব থেকে সরিয়ে নিজ বাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়।
আদালতের নির্দেশে চাকরিচ্যুত তিন কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়। রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে তিনজনই সাত খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন।
অপরদিকে নূর হোসেনকে গত বছরের ১৪ জুন কলকাতা বিমানবন্দর সংলগ্ন কৈখালী এলাকার একটি ফ্ল্যাট থেকে গ্রেফতার করা হয়। নূর হোসেনকে দেশে আনার চেষ্টা চললেও সরকার এখনো তাতে সফল হয়নি।
তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে আদালতের কাছে কয়েক দফা অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
মন্তব্য চালু নেই