নর্থ সাউথের প্রোভিসির বাড়িতেই জঙ্গিদের ব্রিফ করেন তামিম

গুলশানে জঙ্গি হামলার দু’দিন আগে অর্থাৎ ৩০ জুন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (বরখাস্ত) অধ্যাপক এস এম গিয়াস উদ্দিন আহসানের বসুন্ধরার বাড়িতে জঙ্গিদের সঙ্গে তামিম চৌধুরীর বৈঠক হয়। বৈঠকে তামিম জঙ্গিদের হামলার পরিকল্পনা এবং নানা কলাকৌশল ব্রিফ করেন। সশরীরে ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সূত্রের দাবি, গ্রেফতার হাসনাত করিম ও তাহমিদ হাসিব রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছে এ তথ্য জানিয়েছেন।

গুলশানে জঙ্গি হামলার ঘটনায় উভয়কে সন্দেহভাজন হিসেবে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে ৮ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। শনিবার ছিল রিমান্ডের প্রথম দিন। প্রথম দিনে তারা পুলিশকে এ তথ্য জানিয়েছে।

রিমান্ডে তারা জানায়, গুলশানে হামলার কয়েকদিন আগে জঙ্গিরা নর্থ সাউথ প্রো-ভিসির বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ই ব্লকের ছয় নম্বর সড়কের ‘টেনামেন্ট-থ্রি’ এর এ-সিক্স ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন। ৩০ জুন সেখানে তাদের ব্রিফ করতে আসেন কানাডা প্রবাসী তামিম চৌধুরী। হামলার দিন ঘটনাস্থলে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

হাসনাত ও তাহমিদের তথ্যের আলোকে অনুসন্ধান চালাচ্ছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটি) ইউনিট। তারা সিসি ক্যামেরার ফুটেজে তামিমের উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন। ঘটনার দিন তামিম গুলশানের আশপাশেই ছিলেন। টেলিভিশন দেখে জঙ্গিদের নানা ধরনের পরামর্শ দিয়েছেন।

পুলিশের দাবি, কানাডা প্রবাসী তামিম নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশকে (জেএমবি) নবগঠিত করছেন।

সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক বলেন, তামিম চৌধুরী নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) নতুন গ্রুপের। গুলশানে হামলার আগে তামিম জঙ্গিদের ব্রিফিং করেছিলেন বলে পুলিশের কাছে তথ্য আছে। তাকে ধরিয়ে দিলে ২০ লাখ টাকা পুরষ্কার দেয়া হবে।

আইজিপির সংবাদ সম্মেলনের আগেই ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়া পত্রিকায় গোয়েন্দাদের বরাত দিয়ে জানায়, বাংলাদেশের কয়েকজন জঙ্গি ভারতে প্রবেশ করেছে। তারা যে নামের তালিকা দিয়েছিল তাদের মধ্যে তামিমের নাম ছিল।

এ বিষয়ে আইজিপি বলেন, তারা (তামিম ও মেজর জিয়া) দেশে আছে না কি বিদেশে, এ বিষয়ে এখনো নিশ্চিত না। তবে তামিম গুলশান হামলার আগে বাংলাদেশে ছিল।

এর আগে গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার ও জিম্মিদশার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার প্রাথমিক প্রতিরোধে প্রাণ হারান পুলিশের ঊর্ধ্বতন দুই কর্মকর্তা। পরদিন সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে নিহত হয় হামলাকারী ৬ জঙ্গি। এ ঘটনায় গুলশান থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলার তদন্তের দায়ভার দেয়া হয় পুলিশের সিটি ইউনিটকে।

সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানের পর দেশি-বিদেশি জিম্মিদের উদ্ধার করে সবাইকে সম্মিলিত সামরিক (সিএমএইচে) হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কার্যালয়ে নেয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদের পর সব জিম্মিকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। হাসনাত করিম ও তাহমিদকেও ছেড়ে দেয়ার দাবি করে পুলিশ। তবে গুলশান হামলার ১ মাস পরেও তারা বাড়ি ফেরেননি। বৃহস্পতিবার ৪ আগস্ট তাদের ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

গুলশান হামলার ঘটনার দিন আর্টিসানের পাশের বাড়ির এক কোরিয়ান নাগরিকের ভিডিও ফুটেজে জঙ্গিদের সঙ্গে হাসনাত করিমকে স্বাভাবিক আচরণ করতে দেখা গেছে। পাশের বাড়ি থেকে তোলা আরেকটি ছবিতেও হাসনাত ও তাহমিদকে জঙ্গিদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা গেছে। তাই তাদের গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।-জাগো নিউজ



মন্তব্য চালু নেই