ন’মাস ধরে ঋতুস্রাবের রক্ত দিয়ে ছবি আঁকলেন টিমি, তোলপাড় সোশ্যাল মিডিয়া

রোমানিয়ার শিল্পী টিমি প্যাল বহুদিন ধরেই একটু স্বতন্ত্র ধাঁচের শিল্পকর্মের জন্য আন্তর্জাতিক স্তরে প্রশংসা পেয়েছেন। কিন্তু সম্প্রতি তিনি যা করেছেন তা অনেকেই কল্পনা করতে পারবেন না। টিমি ৯ মাস ধরে তাঁর ঋতুস্রাবের রক্ত দিয়ে এঁকেছেন ন’টি ছবি। তার পর সেই ন’টি ক্যানভাসকে জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে এক পূর্ণাঙ্গ গর্ভস্থ ভ্রুণের ছবি। টিমি তাঁর ফেসবুক পেজে সম্প্রতি সেই পূর্ণাঙ্গ ছবি ও খণ্ড ক্যানভাসগুলির ছবি আপলোড করেছেন, সঙ্গে লিখেছেন একটি দীর্ঘ পোস্ট। কেন তিনি এই ব্যতিক্রমী কাজে হাত দিলেন তা জানিয়েছেন টিমি।

যেহেতু গর্ভধারণ না হলে অনিষিক্তি ডিম্বাণুর নারী শরীর থেকে নিষ্ক্রমণই হল ঋতুস্রাব, তাই সেই অনুযায়ী ডিম্বাণু নিষিক্ত না হওয়ার অর্থ হল একটি সম্ভাবনা শেষ হয়ে যাওয়া। অর্থাৎ, টিমির মতে, প্রত্যেক ঋতুস্রাব আসলে এক সন্তানের সম্ভাবনার মৃত্যু। এই অনুভূতি থেকেই টিমি-র মনে হয় যদি এই রক্ত দিয়েই এঁকে ফেলা যায় এক ভ্রুণের ছবি তবে এই ঋতুরক্ত ক্ষরণ সার্থক হবে। মেডিক্যাল সায়েন্সের কাছে এই রক্তের কোনও গুরুত্ব নেই। ঋতুস্রাব হল কি হল না সেটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু, এই রক্তক্ষরণ জনমানসে অনেকটা বর্জ্যের মতো। বিশেষ করে হিন্দুধর্মে তো এই রক্তকে অশুচি বলেই গণ্য করা হয়।

টিমি হিন্দু নন, ইউরোপীয় কিন্তু ঋতুস্রাবের রক্ত ইউরোপীয় সংস্কৃতিতেও আর কিছু না হোক, পবিত্র বলে বিবেচিত হয় না। এই মনোভাবকেই খানিকটা আঘাত করতে চেয়েছেন টিমি এবং এই তথাকথিত ‘বর্জ্য’ রক্ত দিয়েই সৃষ্টি করতে চেয়েছেন একটি শিশুকে। টিমি ফেসবুকে লিখেছেন এই শিশুটির কোনও লিঙ্গ নির্ধারিত করা নেই, এই শিশুর কোনও ‘রং’ নেই, সেটা ত্বকেরই হোক বা ধর্মের। এই শিশু কোনওদিন কথা বলবে না, হাঁটতে শিখবে না, শ্বাসও নেবে না পৃথিবীর বাতাসে। তবু এই শিশুটিকে নিয়ে মানুষ কথা বলবেন।

সবশেষে টিমি লিখেছেন, যখন একটি ডিম্বাণুর মৃত্যু হয়, তখন জন্ম নেয় একটি শিল্পকর্ম। টিমির এই ব্যতিক্রমী শিল্পকর্ম প্রশংসা এবং সমালোচনা দু’য়েরই সম্মুখীন হয়েছে। তবে, ঋতুরক্ত দিয়ে ক্যানভাসে ছবি আঁকার বিষয়টি এই প্রথম নয়। এর আগে ‘গ্লাসগো স্কুল অফ আর্ট অ্যান্ড ডিজাইন’-এর জেস কামিন প্রথম এই রক্ত দিয়ে ছবি আঁকেন। কিন্তু টিমির এই ছবিটি শুধুমাত্র ঋতুরক্ত দিয়ে আঁকা বলেই ব্যতিক্রমী তা নয়, এই ছবিটি ব্যতিক্রমী কারণ টিমি এইভাবে মাতৃত্ব ও তার যন্ত্রণাকে ছুঁতে চেয়েছেন।



মন্তব্য চালু নেই