নবজাতকের জন্ডিসে করণীয়

সব ঠিকঠাক থাকলেও জন্মের পর শতকরা ৭০ থেকে ৮০ ভাগ নবজাতকের জন্ডিস হতে পারে। জন্ডিস আক্রান্ত শিশুর প্রায় ৫০ শতাংশের বেলায় একে বলে স্বাভাবিক জন্ডিস। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় ফিজিওলজিক্যাল জন্ডিস বলে পরিচিত। শিশুর যকৃৎ পুরোপুরি কর্মক্ষম হয়ে উঠতে একটু দেরি হলে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গিয়ে এই জন্ডিস হয়।

জন্ডিসের কারণ

কম ওজনে ভূমিষ্ঠ শিশু বা সময়ের আগে জন্ম নেওয়া শিশুরা জন্ডিসে বেশি আক্রান্ত হয়। এছাড়া জন্ডিসের কারণ হিসেবে কিছু বিষয়কে দায়ি করা হয়। যেমন-

– মা ও শিশুর রক্তের গ্রুপ ভিন্ন হলে।

– শিশু সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত বুকের দুধ না পেলে, অনেক সময় একে ব্রেস্ট ফিডিং জন্ডিসও বলা হয়।

– গর্ভাবস্থায় মায়ের কোনো সংক্রমণ ঘটে থাকলে।

– শিশু জন্মগত কোনো রোগে আক্রান্ত হলে।

– জন্মের পর শিশুর রক্তে সংক্রমণ বা সেপটিসেমিয়া থাকলে।

– জন্মগতভাবে শিশুর যকৃৎ বা পিত্তথলিতে কোনো সমস্যা থাকলে।

লক্ষণ

শিশুর হাতের তালু হলুদ হয়ে গেছে কি না লক্ষ্য রাখুন। সাধারণত শিশুর মুখ, হাত ও বুক বা পেটের ওপর পর্যন্ত হলুদ হতে দেখা যায়। মলের রঙ সবুজ হতে পারে। শিশুর গায়ের রঙ পরিবর্তিত হতে দেখলে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা পরীক্ষা করাতে হবে। রঙের পরিবর্তন বাড়তে দেখলে এই বিলিরুবিন প্রয়োজনে বারবার পরীক্ষা করতে হবে।

করণীয়

কোনো অবস্থায়ই নবজাতককে বুকের দুধ খাওয়ানো থেকে বিরত রাখা যাবে না। শিশুকে নিয়মিত দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর পর বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। বিশেষ করে ফিজিওলজিক্যাল বা স্বাভাবিক জন্ডিসের মূল চিকিৎসাই হচ্ছে শিশুকে ঠিকমতো বুকের দুধ খাওয়ানো।

রোদ চিকিৎসা বা আলো চিকিৎসা

বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গেলে সাধারণত শিশুকে ফটোথেরাপি বা আলোক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এর উপকারিতা ও কার্যকারিতা নিয়ে মতভেদ থাকলেও এখন পর্যন্ত এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিদিন সকালে নবজাতককে আধা ঘণ্টা রোদ পোহাতেও বলা হয়। তবে সূর্যের কড়া রোদ ও অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

স্বাভাবিক জন্ডিস সাত দিনের মধ্যেই সেরে ওঠে। এরপরও কিছু ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। জন্মের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই জন্ডিস দেখা দিলে, সাত বা দশ দিনের পরও না সারলে, শিশু খাওয়া বন্ধ করে দিলে বা কমিয়ে দিলে, জ্বর বা সংক্রমণের লক্ষণ থাকলে, বিলিরুবিনের মাত্রা দ্রুত বাড়তে থাকলে অবশ্যই শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।



মন্তব্য চালু নেই