নতুন ইসি সৎ সাহসী হবে, প্রত্যাশা বিশিষ্টজনদের
সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে নবগঠিত নির্বাচন কমিশন সৎ সাহস দেখাবে, এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা।
সোমবার সার্চ কমিটির সুপারিশ করা ১০টি নামের মধ্যে থেকে প্রাক্তন সচিব কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। কমিশন গঠনের পরপরই সারা দেশে চলছে নতুন ইসি নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
নতুন নির্বাচন কমিশনের বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সভাপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রাক্তন উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন বলেন, ‘আগের নির্বাচন কমিশনের যেসব ব্যর্থতা ছিল তা কাটিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন সৎ সাহসের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে, সেটাই চাই।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনে যারা নিয়োগ পেলেন, তাদের স্বাগত জানাচ্ছি। তবে অভিনন্দন এখনই জানাব না। তাদের কাজ দেখে অভিনন্দন জানাব। আমাদের সংবিধান অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশন যথেষ্ট শক্তিশালী। কিন্তু সরকারের কারণে বা নির্বাচন কমিশনে যারা কাজ করেন তাদের কারণে নির্বাচন কমিশন এতদিন কাগুজে বাঘ হয়ে ছিল। আমি চাই, বর্তমান নির্বাচন কমিশন যেন রক্ত-মাংসের সত্যিকারের বাঘ হতে পারে।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘নতুন নির্বাচন কমিশন যেন নৈতিক অবস্থানকে দৃঢ় রেখে সৎ সাহসের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে, সেটাই আশা করি। একটা বিষয় তাদের মনে রাখতে হবে যে, তাদের প্রতি মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। নিজেদের বিবেকের কাছে প্রতিনিয়ত জবাবদিহিতা থাকলে তারা তাদের ওপর অর্পিত গুরু দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারবেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘পৃথিবীর কোনো দেশেই নির্বাচন কমিশন একা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারে না। রাজনৈতিক দলসহ অন্যান্য যেসব প্রতিষ্ঠান আছে তাদেরকেও নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করতে হবে। এই কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের প্রতি প্রত্যাশা থাকবে, দায়িত্ব নেওয়ার পর তারা যেন অন্য কোনো সুবিধা নেওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে কোনো কাজ না করেন। তাহলেই নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করা হবে।’
নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের পর্যবেক্ষণ থেকে বলতে পারি, যে কমিশন গঠন হয়েছে, এর চেয়ে ভালো হওয়ার সুযোগ ছিল। তবে বাংলাদেশের সার্বিক যে অবস্থা সেখান থেকে চিন্তা করলে এর চেয়ে ভালো কমিশন আশা করা খুব কঠিন। তারা কীভাবে দায়িত্ব পালন করেন সেটাই মুখ্য বিষয়।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পেয়েছেন প্রাক্তন সচিব কে এম নূরুল হুদা। নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে প্রাক্তন অতিরিক্ত সচিব মাহবুব তালুকদার, প্রাক্তন সচিব রফিকুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ কবিতা খানম ও অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদৎ হোসেন চৌধুরীকে।
নতুন ইসি নিয়োগে সার্চ কমিটির সুপারিশ করা ১০টি নাম থেকে পাঁচজনের সমন্বয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করেন। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন বিদায় নিচ্ছে। এরপর শপথ নেবে নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। যা হবে বাংলাদেশের দ্বাদশ ইসি।
কাজী রকিবউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন ইসির মেয়াদ শেষ হওয়ায় সাংবিধানিক এখতিয়ার অনুযায়ী নতুন ইসি গঠনের উদ্যোগ নেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের পর বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করা হয়। সার্চ কমিটি বিশিষ্টজনদের সঙ্গে আলোচনা শেষে ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করে সোমবার রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেন। এদের মধ্যে থেকে পাঁচজনকে নিয়ে নতুন ইসি গঠন করেন রাষ্ট্রপতি। পরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করার বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান।খবর রাইজিংবিডি’র।
মন্তব্য চালু নেই