ধসে যাওয়া রানা প্লাজার অবশেষ এবং বিপন্ন সেই সব জীবিত শ্রমিকেরা

রানা প্লাজা ধসের দুই বছরে এসেও রয়ে গেছে বিধ্বস্ত-বিভৎস-করুণ বাস্তবতার অবশেষ। দুর্ঘটনার নামে চালানো ওই কাঠামোগত হত্যাকাণ্ডে প্রাণ হারিয়েছেন ১১শ ৪০ জন শ্রমিক। মরে গিয়ে তারা যেন বেঁচেই গেছেন। বেঁচে আছেন যারা, তাদের মধ্যে অনেকেই বরণ করেছেন পঙ্গুত্ব। অনেকে রানা প্লাজার শ্রমিক হওয়ার কারণে কর্মহীন। সবমিলে বিধ্বস্ত রানা প্লাজার বেঁচে যাওয়া শ্রমিকেরা কাটাচ্ছেন দুর্বিষহ জীবন।

এমনই একজন শ্রমিক বিথি বেগম। দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার একবছর কঠিন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে তাকে। ওই একবছর প্রতিনিয়ত নিজেকে ফিরে পাওয়ার সংগ্রামে লিপ্ত ছিলেন। বাস্তবতা কি জিনিস, হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন। সবাই তাকে বাতিলের খাতায় ফেলে দিয়েছিলো। সবাইকে ভুল প্রমাণ করে ধসের ১ বছর পর ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। কিন্তু তিনি কি আর জানতেন এ সংগ্রামের যে শেষ নেই?

সম্পূর্ণ কর্মক্ষম হওয়ার পরেই জীবিকার তাগিদে আবারো গার্মেন্টে কাজ করতে গিয়েছিলো বিথি। কিন্তু কেই তাকে কাজে নেয়নি। রানা প্লাজায় কাজ করেছেন, এটা শুনলেই কেই আর তাকে কাজে নিতে রাজী হচ্ছে না। সবার ধারণা, যারা রানা প্লাজায় কাজ করেছে তারা শারীরিকভাবে ও মানসিকভাবে কাজের জন্য ফিট নয়।

রানা প্লাজার সপ্তম তলায় কাজ করতেন বিথি। দুর্ঘটনায় একটি স্লাব্ তার ডান পায়ের উপর পড়লে বেশ কয়েক জায়গায় ভেঙ্গে যায়। তার পায়ে দুইবার অপারেশন করতে হয়েছে। পায়ের হাড়গুলোকে সোজা রাখার জন্য ডাক্তাররা তার পায়ে লোহার রড লাগিয়েছেন। এ অবস্থায় তিনি আর আগের মত সুইং মেশিনে কাজ করতে পারবেন না। তাই তিনি মাননিয়ন্ত্রক পদের জন্য আবেদন করেছিলেন, যেখানে পায়ের কাজ নেই। কিন্তু কাজ পাননি তিনি।

শতাব্দীর অন্যতম ভয়াবহ এ দুর্ঘনার পরে নড়েচড়ে উঠে সারা বিশ্ব। হুমকির মুখে পড়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় এ খাত। পোশাক খাতে শ্রমিক নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়ে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এবং ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে প্রায় চার হাজার ফ্যাক্টরিতে শ্রমিক নিরাপত্তা আরো জোরদার করা হয়।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল অবলম্বনে।



মন্তব্য চালু নেই