ধর্মান্তরিত হয়ে ওরা জঙ্গিবাদে

২০০৩ সালে এইচএসসিতে অধ্যয়নকালে ইসলাম ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ধর্মান্তরিত হন গৌরাঙ্গ কুমার মণ্ডল। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর তার নাম রাখা হয় তামিম।
প্রাথমিকভাবে তিনি তাবলীগ জামাতের অনুসারী ছিলেন। এইচএসসি পাসের পর তিনি সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার সুযোগ পান। সেখানে পড়ালেখা শেষ না করে ২০০৬ সালে চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমিতে ভর্তি হন। লেখাপড়া শেষ করে তিনি জাহাজে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরিও পান। সেই জাহাজে পরিচিত এক সহকর্মীর মাধ্যমে তিনি জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হন।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ জানান, তামিম নব্য জেএমবির প্রাক্তন নেতা তামিম চৌধুরীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিদেশ থেকে জাহাজের মাধ্যমে অস্ত্র ও গোলাবারুদ দেশে আনার চেষ্টা করছিলেন। এ জন্য তিনি ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে জাহাজে লোকবল রিক্রুট করার চেষ্টা করছিলেন।
বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার সাভার থেকে তামিম দ্বারী ওরফে আব্দুল্লাহ আল হাসান ওরফে আজিজুর রহমান ওরফে আব্দুল্লাহ আল জাফরী ওরফে আমির হামজা ওরফে আল হুজাইফাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। একই সঙ্গে তার দুই সহযোগী কামরুল হাসান ওরফে কাজল ওরফে নুরুদ্দিন ও মোস্তফা মজুমদার ওরফে শিহাব ওরফে হামজাকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব সূত্র জানায়, তামিম মূলত সনাতন ধর্মবলম্বী ছিলেন। তার নাম ছিল শ্রী গৌরাঙ্গ কুমার মণ্ডল। ২০০৩ সালে তিনি এইচএসসি পড়াকালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। এরপর তিনি তাবলীগ জামাতে যুক্ত হন। সেখানে তানভীর কবির নামে এক যুবকের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তামিমকে কবির নিজের ভাইয়ের মতো মনে করতেন এবং পরবর্তীতে তার বাবা হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেন। হুমায়ুন কবির তামিমকে পালক সন্তান হিসেবে গ্রহণ করেন।
২০০৫ সালে তামিম সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখানে সাত থেকে আট মাস পড়ালেখা করেন। পরবর্তীতে ২০০৬ সালে তিনি চট্টগ্রামের মেরিন একামেডিতে ভর্তি হন। ২০০৭ সালে তা শেষ করে। ২০১০ সালে তিনি বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের অধীনে চাকরি পান। এরপর ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলার কলিসহ বিভিন্ন জাহাজে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেন। সেখানে তার একামেডিক জুনিয়র আবু বক্করের সঙ্গে পরিচয় হয়।
২০১৩ সালে বাংলার কলি যখন পাকিস্তান যাচ্ছিল তখন তৎকালীন বিশ্বব্যাপী মুসলামনদের ওপর বিভিন্ন ধরণের নির্যানতন-নিপিড়নের বিষয়ে আবু বক্করের সঙ্গে তামিমের আলোচনা হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে মুসলামানদের করণীয় কী হতে পারে তা জানতে চান তামিম। তখন আবু বক্কর এর একমাত্র সমাধান হিসেবে জিহাদের কথা বলেন। বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে নেন তামিম এবং জিহাদের প্রতি আকৃষ্ট হন।
পরবর্তীতে ওই বছরের মাঝামাঝি সময়ে আবুর মাধ্যমে ঢাকার মিরপুরে-১১ নম্বরের একটি জায়গায় নিহত তামিম চৌধুরীর সঙ্গে পরিচয় হয় তামিম দ্বারীর। জিহাদের জন্য তামিম চৌধুরী বিদেশে থেকে এসেছেন শুনে তামিম দ্বারী অনুপ্রাণিত হন। এ কথায় তামিম জিহাদের ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ হন।
২০১৪ সালে জানুয়ারিতে তামিম চৌধুরী চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় যান। সেখান তাকে তামিম দ্বারী বাংলার দূত জাহাজ ঘুরিয়ে দেখায়। সে সময় তারা জাহাজের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় রশদ আনার ব্যাপারে পরিবহনের জন্য বিশ্বস্থ লোকের প্রয়োজন অনুভব করেন। এ কারণে তারা ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে বিশ্বস্ত যুবকদের জাহাজে রিক্রুট করার পরিকল্পনা করেন। একই বছরের মাঝামাঝিতে তিনি তামিম চৌধুরীর সঙ্গে মিরপুর ডিওএইচএসে এসে দেখা করেন। সেখানে আরো তিনজন ছিলেন। ওই সময় তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে নাশকতার পরিকল্পনা করেন। এর কিছুদিন পর তারা পতেঙ্গায় বৈঠক করেন।
২০১৬ সালে গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলা ও তামিম চৌধুরী নিহত হওয়ার পর তামিম দ্বারী নিজের জঙ্গিসম্পৃক্ততা গোপন করার জন্য বসুন্ধরা-৪ জাহাজে যোগ দেন। ২০১৬ সালের নভেম্বরের তিনি সেখান থেকে চাকরি ছেড়ে দেন। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে তিনি বাড়ি ছাড়েন।
মন্তব্য চালু নেই