ধন্যবাদ জিম্বাবুয়ে!

বিপদে যে পাশে এসে দাঁড়ায়, সেই-তো প্রকৃত বন্ধু। ‘বিপদে বন্ধুর পরিচয়’ কথাটা মিথ্যে নয় একরত্যিও। ‘বাংলাদেশে নিরাপত্তার অভাব’ ‘নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা আছে’ এমন অজুহাত তুলে বাংলাদেশ সফরে এলো না অস্ট্রেলিয়া। তাদের দেখানো পথ ধরে সফল স্থগিত করলো দক্ষিণ আফ্রিকা নারী ক্রিকেট দলও। বেশ গ্যাড়াকলের মধ্যে পড়ে গেল বাংলাদেশ। পরপর দুটি আন্তর্জাতিক সিরিজ বাতিল হওয়ায় বিপদশঙ্কুল হয়ে ওঠলো বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা। কিন্তু এরই মাঝে আলোকবর্তিকা হয়ে এলো জিম্বাবুয়ে। এক সময়কার বাংলাদেশের ‘চিরপ্রতিদ্বন্ধী’ জিম্বাবুয়ে প্রকৃত বন্ধুর মতোই হাত বাড়িয়ে দিল বাংলাদেশের দিকে। নিরাপত্তা নিয়ে ‘শঙ্কা-টঙ্কাকে’ উড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশ সফরে আসতে সম্মতি দিল জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট বোর্ড। অক্টোবরের শুরু থেকেই শোনা যাচ্ছিল, জিম্বাবুয়ে আসছে। হ্যাঁ, সত্যিই তারা এলো।
চলতি নভেম্বরের দুই তারিখ ঢাকায় পা রাখে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দল। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলার পর রোববার দুই ম্যাচ টি-২০ সিরিজ খেলে আগামীকাল দেশে ফিরে যাবে তারা। প্রায় দুই সপ্তাহ সময় জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দল বাংলাদেশে অবস্থান করছে। নির্বিঘ্নে প্রতিটি ম্যাচ খেলেছে তারা। নাক উঁচু অস্ট্রেলিয়ার ‘নিরাপত্তা’ শঙ্কার কোনো রেশই ছিল না।
বাংলাদেশের খুব কম সংখ্যক লোকই বিশ্বাস করে যে ‘নিরাপত্তাজনিত’ কারণে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ সফরে আসেনি। বরঞ্চ বাংলাদেশকে নিয়ে আন্তর্জাতিক কোনোও ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে অজিরা বাংলাদেশে আসেনি, এমন বিশ্বাসের লোকই বেশি। আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র হোক বা অন্য কিছুই হোক, অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশে না আসার পেছনে নিশ্চয়ই ‘কিছু একটা’ ছিল।
আমাদের পাশের দেশ, ভারতে মাঠের মধ্যে উগ্র সমর্থকদের কারণে প্রায়ই খেলা বন্ধ রাখতে হয়। প্রায়ই ভারতের উগ্র সমর্থকরা দলের পরাজয় মানতে না পেরে মাঠের মধ্যে এটা-সেটা দিয়ে ঢিল ছুঁড়তে থাকে। কুখ্যাত শিবসেনাদের হুংকার, হম্বিতম্ভি তো সবাই জানে। এই সেদিন, শিবসেনার হুমকির কারণে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ থেকে পাকিস্তানের আম্পায়ার আলিম দারকে সরিয়ে দিতে বাধ্য হয় আইসিসি! শিবসেনার হুমকির কারণে ভারত ছাড়তে বাধ্য হন আকরাম খান, শোয়েব আখতার। তবু সেখানে খেলতে কোনো দল আপত্তি করে না। ‘নিরাপত্তাহীনতা’র কথা বলে না। পার্শ্ববর্তী আরেক দেশ, পাকিস্তানে অহরহ বোমা ফুটে। তবু সেখানে নিরাপদে খেলে আসে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দল। অথচ অস্ট্রেলিয়া দলের জন্য নাকি বাংলাদেশ ‘অনিরাপদ’!!
অস্ট্রেলিয়া না আসায়, একইসাথে দক্ষিণ আফ্রিকা নারী ক্রিকেট দলও তাদের সফর পিছিয়ে দেয়ায় বেশ বিপদেই পড়েছিল বাংলাদেশ। যদিও বাইরের অবস্থা স্বাভাবিক ছিল, কিন্তু তবু ভেতরে ভেতরে একটা চাপা উৎকন্ঠা বিরাজ করছিল। বাংলাদেশকে ‘অনিরাপদ’ প্রমাণ করে এখান থেকে ক্রিকেট সরিয়ে দিতে কোনোও অদৃশ্য গোষ্ঠীর অপতৎপরতায় কি ক্রিকেট বোর্ড, কি সাধারণ জনতা, সবার মধ্যেই ছিল উদ্বেগ। এমন শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের তড়িৎ পদক্ষেপে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট বোর্ড বাংলাদেশে তাদের দল পাঠাতে রাজি হয়। এক্ষেত্রে বিসিবি যেমন ধন্যবাদ পেতে পারে, তেমনি জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট বোর্ডকেও ধন্যবাদ জানাতেই হবে। বিপদের সময় প্রকৃত বন্ধুর মতোই বাংলাদেশের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে জিম্বাবুয়ে। তাদের কোনো খেলোয়াড়ই বাংলাদেশকে ‘অনিরাপদ’ বলে সফরে আসতে অসম্মতি জানায়নি। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটারদেরকেও ধন্যবাদ জানাতেই হয়।
শনিবার বাংলাদেশ ক্রিকেট সাপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএসএ) পক্ষ থেকে জিম্বাবুয়ে দলের অধিনায়ক এলটন চিগুম্বুরার হাতে ক্রেস্ট দিয়ে বাংলাদেশ সফরে আসায় কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। বিসিএসএ’কে ধন্যবাদ। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও চাইলে আনুষ্ঠানিকভাবে জিম্বাবুয়ে দল এবং বোর্ডকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করতে পারে।
জিম্বাবুয়ে জাতীয় দল ও অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলের পর এবার জিম্বাবুয়ে নারী ক্রিকেট দলও এসেছে বাংলাদেশ সফরে। আগামী ১৭ ও ১৯ নভেম্বর বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের সাথে দুটি টি-২০ ম্যাচ খেলার কথা তাদের। পুরুষ দলের পর নারী দলকে বাংলাদেশ সফরে পাঠিয়ে জিম্বাবুয়ে সত্যিকার বন্ধুর মতোই পরিচয় দিয়েছে। একইসাথে একটা বার্তাও দিয়েছে তারা, ‘আমরা ক্রীড়াপাগল বাংলাদেশের সাথেই আছি, থাকবো।’ জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট বোর্ডের এমন সাহসী, দৃঢ়চেতা, বন্ধুসূলভ ভূমিকার জন্য বাংলাদেশের হৃদয় হতে তাদের ধন্যবাদ। ধন্যবাদ, জিম্বাবুয়ে!



মন্তব্য চালু নেই