বিহারী পল্লীতে হতাহত

দোষ প্রমাণিত হলে রাজনীতি ছেড়ে দেব

মিরপুরের কালশীতে আগুনে পুড়ে একই পরিবারের ৯ বিহারীসহ ১০ জনের মৃত্যুকে দুর্ঘটনা বলে মন্তব্য করে স্থানীয় সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লা বলেন, ‘এ ঘটনায় যদি আমার বিন্দুমাত্র দোষ প্রমাণিত হয়, তাহলে আমার সর্বোচ্চ বিচার হোক। সবাই তদন্ত কমিটিকে সহযোগিতা করুন। আমি দোষী হলে রাজনীতি ছেড়ে দেব।’

রোববার জাতীয় সংসদ ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এভাবেই নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘বিহারী পল্লীর অবাঙ্গালিরা আমাকে ভালবাসে। আমার ডাকে শত শত অবাঙ্গালি ছুটে আসে। এ ঘটনা নিয়ে একটি কুচক্রী মহল রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে।’

তার বিরুদ্ধে গরুর রচনা তৈরি করা হচ্ছে উল্লেখ করে ইলিয়াস মোল্লা বলেন, ‘আমি একটি ঘর বা এক শতাংশ জমিও দখল করেছি, এমনটি প্রমাণ করতে পারলে রাজনীতি ছেড়ে দেব। আমার যা সম্পত্তি আছে তাদের সবাইকে দিয়ে দেব।’

মোল্লা তার পারিবারিক সম্পদের কথা তুলে ধরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আইয়ূব খান বলেছিলেন, আমার বাবা মিরপুরের ল্যান্ডলর্ড। এখনও আমাদের যে সম্পত্তি আছে, তা একশ বছর খেলেও ফুরাবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার বাবা যখন পরান ঢাকায় ঢুকতেন তখন লোকজন বলতেন মিরপুরের রাজা ঢুকেছেন।’

হতাহতের ঘটনা কীভাবে ঘটেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অবাঙ্গালিদের মধ্যে দুটি গ্রুপ ছিল এদের সঙ্গে বাঙ্গালিরা মিলে আতশবাজি করেছে। গত ৪২ বছরেও এমন আতশবাজির ঘটনা ঘটেনি। যে বাড়িটিতে ১০ জন মারা গেছে, তাদের ঘরের কাছে কাগজপত্র এবং টায়ার জ্বালিয়ে আগুন ছিটানো হয়েছিল। সেখান থেকেই তাদের ঘরে আগুন লাগতে পারে।’

এ প্রসঙ্গে ইলিয়াস মোল্লা আরও বলেন, ‘এর আগে অবাঙ্গালি ক্যাম্পে ৮/৯ দিন ধরে বিদ্যুৎ ছিল না। আমাকে অবহিত করা হয়নি। বিদ্যুৎ বন্ধ থাকায় তারা রাস্তা অবরোধ করেছিল। জানার পর আমি সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করি।’

ঘটনার সময় বাসায় ঘুমাচ্ছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি সারারাত জেগে সকালে ঘুমিয়ে পড়ি। দুপুর সোয়া ১২টায় ওঠে ঘটনার কথা জানতে পারি। তারপর আমি ঘটনা সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেই। ঘটনার পর বাড়ি-ঘর ঠিক করার জন্য বিহারী পল্লীর সাবিনা বেগমের হাতে ১ লাখ টাকাও দিয়েছি।’

কালশীর ঘটনায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠেছে কেন? এর জবাবে ইলিয়াম মোল্লা বলেন, ‘গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে যারা আমার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল তারাই অভিযোগ তুলেছে।’

ইলিয়াস মোল্লা বলেন, ‘ঘটনার দুইদিন পর থেকে রাজনৈতিক উস্কানি চলছে। আন্দোলনে কিছু কিছু লোক টাকা দিচ্ছেন। হোটেল রাব্বনী থেকে আন্দোলনকারীদের খাবারও দেয়া হচ্ছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘সেখানে সরকারি জমি দখল করা হয়েছে। তারা অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। তার পরেও আমি তাদের বাড়িতে বাড়িতে গ্যাস সংযোগের ব্যবস্থা করেছি। আমি দখল করলে তাদের গ্যাস সংযোগ দেব কেন?’

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তদন্তে প্রমাণিত হবে কে দোষী। যে দোষী প্রমাণিত হবে তার বিচার হবে।’

আওয়ামী লীগ এ ঘটনার জন্য দায়ী নয় উল্লেখ করে ইলিয়াম মোল্লা বলেন, ‘যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে তারা এ এলাকাতেই থাকে না।’

উল্লেখ, গত ১৩ জুন শবেবরাতের পরেরদিন সকালে রাজধানীর মিরপুরের কালশীর বিহারী ক্যাম্পের একই পরিবারে নয়জন আগুনে পুড়ে এবং সহিংসতায় অপর একজনসহ ১০ জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় স্থানীয় সংসদ সদস্য ইলিয়াম মোল্লা জড়িত বলে দাবি করছে ক্যাম্পবাসী।



মন্তব্য চালু নেই